কেমন আছেন আপনি ? মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় রায়

কেমন আছেন আপনি ?
মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় রায়

ভোরবেলা স্নান সেরে সূর্য প্রণাম করে যার মুখ দেখলে মন ভালো হয়ে যায় সে আমাদের কাজের মাসি। আমাদের দেশে বিশেষ করে এই বাংলায় আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন মধ্যবিত্তের ভালো থাকায় এটাও একটা সত্যি।
বিদেশে কনকনে ঠান্ডায় এক টুকরো রোদ মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট। ওখানে লক্ষীর মা , মানুর মায়ের কোনো গল্প নেই। সব কাজই নিজেদের করতে হয়। এক পদ রান্না করে যাবতীয় কাজ সেরে নেওয়াই মুখ্যত রেয়াজ। এর মধ্যে ছেলেপুলের স্কুল পৌঁছানো , বাজার করা, বাড়ির সামনে সিজিনে গাছ লাগানো এর পর টাইম এডজাস্ট করে দেশে আপনজনের সাথে ভিডিও কল এ সবই মন ভালো করার পথ।
কেমন আছেন আপনি বিদেশের মাটিতে ? তিল তিল করে বেড়ে ওঠা শৈশব যৌবন পার করে মা বাবা আপনজন ছেড়ে ঐশ্বর্যে ডুবে গেলেও মন খারাপ করা সেটা বোঝার সময় ও নেই। ছোটবেলাকার স্বপ্নে বিদেশ বলতে আমেরিকা ই উঠে আসে । সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে কত কত স্বপ্ন পূরণ করতে বিদেশে গিয়ে ওখানকার জীবনযাত্রা সংস্কৃতি রপ্ত করতে আপনাকে নিজেকে তৈরি করতে নাকানিচোবানি খেতে হয় বৈকি। দেশে শক্ত পোক্ত ইট বালি সিমেন্টের বাড়িতে বাস করে ওখানে সব কাঠের বাড়িতে বাস সবই অভ্যাস করে নিতে হয়। মার্চ এপ্রিলে আবার ডে লাইট সেভিং টাইম চালু হয় যার ফলে বাচ্চারা পার্কে একটু বেশি সময় খেলতে পারে , বড়রাও অফিস থেকে ফিরে একটু ঘুরতে পারে । ডে লাইট সেভিং এ উৎপাদন গতিশীল হয় ,কর্ম দক্ষতা বাড়ে, শক্তির সঞ্চয় হয় । এই ডে লাইট সেভিং টাইম শুধু মাত্র শীতপ্রধান অঞ্চল সমূহে দেখা যায়। এ তো গেলো মনের খোরাক। সব খাবারের স্বাদ যে দেশের মতোই হবে এটা নাও হতে পারে।টাটকা খাবার আর ফ্রোজেন খাবারের পার্থক্য তো থাকবেই। ওই সব নিয়ে ভাবার সময় নেই। তবে ইকোনোমিক কাঠামোটা যেহেতু সিস্টেমেটিক্যাল , তাই সকলের অবস্থা বেশ উন্নত। পাবলিক ট্রাসপোর্টের আধিক্য কম সেহেতু সকলকেই ড্রাইভিং শিখতেই হয়। যেমন আয় বেশি তেমন জিনিসের দাম ও বেশি। আমাদের দেশের সাথে তুলনা করে লাভ নেই। বেশি সময় টাই ঠান্ডা , এক এক রাজ্যে কম বেশি। ঘরে হিটিং সিস্টেম গাড়িতে হিটিং সিস্টেম। বাইরে ঘোরাঘুরি তাই কম।।আমাদের দেশের মতো বাইরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ নেই। মানুষের মুখ দেখা ও কচিৎ কদাচিৎ।
আমরা যেমন দরজা না খুললেও জানলা দিয়ে পাশের বাড়ির আদ্যিনারি খবর নিয়ে নিতে পারি। কি মাছ এলো , কি রান্না হলো , কার বাড়ি কে এলো , কার বৌমা তিন মাস বিয়ে হতে পারিনি আলাদা হয়ে গেছে। ছেলেটা মেডিক্যলে চান্স পেয়েছে, মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সুগার ছিল না , সেটা যুক্ত হয়েছে , ইত্যাদি খবরাখবর বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে । এরপর তো বাজারে আগুন জিনিসের দাম , পেট্রোল ডিজেল গ্যাস সবই উর্ধমুখী। প্রতিদিন পাতে মাছ জোটাতেও গৃহস্বামী হিমশিম খায়। আবার ফাস্ট ফুডের দোকান রেস্তোরাঁ হোটেল হোম ডেলিভারী রমরমিয়ে চলছে কতিপয়ের জন্যে । উৎসব মেলা খেলা চলছে ,চলছে চৈত্রের সেল , কে কতখানি লাভবান হয় বোঝা মুশকিল। আপনি কিনে এনে ভাবতেই পারেন দারুণ লাভ করেছেন অবশ্য যতক্ষন জামাটা প্যান্টটা জলে না পড়ে। তবু আনন্দে কাটে মধ্যবিত্তের নববর্ষ উৎযাপন।
হে যুবক কেমন আছেন আপনি?
আমাদের বাংলায় লেখাপড়ার কথা বেশি না বলাই ভালো , দুবছর করোনা আতঙ্কে লেখাপড়া শিকেয় উঠেছিল তাতে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী খুশিতে ছিল । লেখাপড়ার মান নির্ণয় করে আর বিতর্ক নাই বা বাড়ালাম । আমাদের দেশে বেকারত্বের হাহাকার , চাকরি পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি হয় না। চাকরি হলে মোটা অনুদান সেটা সম্ভবের আওতায় থাকে না। চিন্তা করতে করতে বয়স পেরিয়ে যায় সরকারি চাকরি পাওয়ার। এক আকাশ ডিপ্রেশন কাটাতে ক্লাব আড্ডা রাজনীতি দাদাগিরি বহু ব্যস্ততায় দিন কেটে বেঁকা শিরদাঁড়ার রাতগুলো প্রশ্নের মুখে কেমন আছেন আপনি ?
শহরে ভিল ফুডের মনভালো করা রেসিপি আপনার জিভে আনে জল। আপনার জল কাদা ঘাঁটতে হয় না। সুন্দর নিকানো উঠোন কাঠের জ্বালের রান্না আহা আহা স্বাদ।শহুরে জীবনে এক ঘেঁয়েমি কাটাতে কর্পোরেট বাঙালি চলুন ঘুরে আসি গ্রামে। ওই সব প্রাণগুলো কত আশায় বুক বেঁধে প্রাণ পাত করে দুমুঠোর জন্যে। শিক্ষা সংস্কৃতি স্বাস্থ বইতে অক্ষর বিন্যাস থাকলেও বাস্তব বড় কঠিন। নদীর বাঁধ ভাঙা জীবনগুলোর হাজার প্রকল্পে ও সুখ এবং স্বস্তি কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সবুজে ঘেরা চারপাশ মাটির সোঁদা গন্ধ জোৎস্নাময় নদীর জোয়ারের ঢেউয়ে দু এক দিন রোমাঞ্চিত হলেও বাঁকি বেশি দিনগুলো অন্ধকার দাওয়ায় দুবেলা দুমুঠো সেদ্ধ ভাতের লড়াই বলে দেয় কেমন আছেন আপনি ।
—–///—–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *