।। অমানবীয় আগ্রাসনে ধ্বস্ত নড়াইল পৌর কবরস্তানঃ পাকি বর্বরতার অনুসৃতি!! ।। । -সাঈফ ফাতেউর রহমান

।। অমানবীয় আগ্রাসনে ধ্বস্ত নড়াইল পৌর কবরস্তানঃ পাকি বর্বরতার অনুসৃতি!! ।।

-সাঈফ ফাতেউর রহমান

কি লিখবো?
নড়াইল শহরের পৌর এলাকায় আমার জন্মস্থান।
সুযোগ পেলেই ছুটে যাই শিকড়ে।
জীবিত ভাইবোনেরা একত্রিত হয়েছিলাম নড়াইলে।
জিয়ারত করলাম পিতামহ, জনক, জননী, অকাল প্রয়াত ভ্রাতুস্পুত্রী এবং নড়াইলের সকল স্বজন-অপরিচিতজনের কবর।
ফিরে আসতেই খবর পেলাম মধ্যরাতের অন্ধকারে বুলডজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কবরস্তানের কবরগুলি।
সকালে কবর জিয়ারতে গিয়ে স্বজনেরা দেখলো চিহ্নমাত্র নেই বাবা-মা-সন্তান-ভাই-বোন-স্বজনদের কবরের।
জনমতের তোয়াক্কা করা নয়, জন অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন নয়, নূন্যতম মানবিক অনুভব নয়, জন প্রতিক্রিয়া নিয়ে তোয়াক্কা নয়, আগ্রাসী পাকি-পদ্ধতিতে রাতের অন্ধকারে এই ধ্বংসযজ্ঞ।
জনসাধারণকে এত ভয়!!
কেমন জনপ্রতিনিধি পৌর মেয়র!!
অর্ধগৃধ্নুতা এতোটাই বেপরোয়া, অশীল, অমানবিক বর্বরতায় অধঃপতিত করে কাউকে!!!!

নগন্য কিছু ভাড়াটিয়া পাতক কুচক্রী হাত মিলিয়েছে তার সাথে।
একাত্তরের ঘাতকদের উত্তরসূরী একজন সোচ্চারে নেমেছেন তার কর্মকান্ডে সাফাই গাইতে।
বলা হচ্ছে ইসলামে কবর বাঁধাই বা কবর চিহ্নিতকরণের অনুমোদন নেই।
এই ফতোয়া জারী করার তিনি কে?
এই অগ্রহণযোগ্য, বিতর্কিত ফতোয়া বাস্তবায়নের অধিকার কে দিয়েছে তাকে?
জনমতের তোয়াক্কা না করে মধ্যরাতে পাতক পাকি’র মত বর্বরোচিত আগ্রাসন কেন কবরস্তানে?
কবরস্তানে কেন বুলডজার ঢুকলো মধ্যরাতে?

কেন সকল কবর গুঁড়িয়ে দিয়ে বিশেষ চারটি কবরকে একেবারে অক্ষত রাখা হলো?
ওই পরিবারের সদস্যদের সাথে আপামর জনসাধারণকে মুখোমুখি দাঁড় করাবার অপচেষ্টা??


নড়াইলের দুটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত দুইজন মাননীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত না করে/ সম্মতি না নিয়ে এই অপকর্মকান্ডের দুঃসাহস দেখানো হলো কিভাবে?
স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয় স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তাকে অবহিত করা হয়নি কিছুই, সম্মতি গ্রহণ তো দূরের কথা।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন এ বিষয়ে তাঁর তীব্র ক্ষোভের কথা।

পৌর কর্তৃপক্ষ এতোটাই বেপরোয়া, দুঃসাহসী, ক্ষমতাবান?
অর্থলালসা এতোটাই প্রবল যে, মানুসের আবেগ, ক্রন্দন, আহাজারি কিছুই স্পর্শ করেনা?
বরং জনপ্রতিক্রিয়ার উত্তরে উদ্ধত, বেপরোয়া মন্তব্যের দুঃসাহস দেখান?
এতোটাই দুর্বনীত অশীল যে একাত্তরের ঘাতকদের উত্তরসূরী কিছু ভাড়াটিয়াকে তার সমর্থনে স্তুতি গাইতে নিয়োগ করেছেন?
যে সংগঠনের সাথে তার সম্পৃক্তি তারাই তো প্রকাশ্যে তার ঘৃন্য কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রবল সোচ্চার।

সারা পৃথিবীতে দেশে দেশে সংরক্ষিত কবর আছে।
কোটি কোটি বাঁধাই করা কবর দৃশ্যমান।
বাংলাদেশের সর্বত্রও একই চিত্র।
জাতীয় নেতৃবৃন্দ সহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, ভাষা আন্দোলনের শহীদ, গণ আন্দোলনের শহীদ, বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের জনগণের কবর বাঁধাইকৃত।
বাঁধাইকৃত নয়, এমন কবরগুলিও চিহ্নিত।
কোন ফতোয়াবলে এই ধৃষ্টতাপূর্ণ, অমানবীয় বর্বর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো?
এই ফতোয়া প্রদান যারা করলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? কারা তারা?
সমগ্র দেশ থেকে নড়াইল কি বিচ্ছিন্ন কোন কিছু?
এক দুজন স্বেচ্ছাচারী কি সেখানকার একনায়কতন্ত্রে সর্বেসর্বা?

প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
নড়াইলের জনগণ সভা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে সোচ্চার।
আইনজীবীগণ সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তীব্র ধিক্কার জানিয়ে গণসমাবেশের আহ্বান জানিয়েছেন।
সাংবাদিক সমাজ সর্বাত্মক একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
কবরবাসীদের স্বজনেরা মেতে উঠেছেন আহাজারিতে, প্রতিবাদে, ক্ষোভে, আর্তনাদে ঝলসে উঠেছেন।
ধ্বংসপ্রাপ্ত সকল কবর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়ে চলেছেন।
সংশ্লিষ্ট অপকর্মীদের পদচ্যূতি, নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং যথোচিত শাস্তির দাবীতে উচ্চকিত হয়েছেন।
মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ, গণ অবস্থানের খবর আসছে।
বিক্ষোভের প্রচন্ডতা দাবানল হয়ে উঠতে পারে যেকোন সময়ে।

নড়াইল গোপালগঞ্জের সংলগ্ন জেলা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার নির্বাচন করায় একচেটিয়া ভোটে তাঁকে বিজয়মাল্য পরিয়ে দিয়েছেন নড়াইলের জনতা।
নড়াইলে তাঁর আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা।
বঙ্গবন্ধুর বিশেষ মমতা ছিলো, ভালোবাসা ছিলো নড়াইলের প্রতি।
সেই নড়াইলে এই হীন অমানবীয় বর্বর তান্ডব, এই পাশবিক আগ্রাসন, এই বর্বর পৈশাচিকতা!!!

কবরস্তান রক্ষণাবেক্ষণে বহুতর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
স্থান সংকুলানের সংকট হলে সম্প্রসারণ করা যায়।
প্রয়োজনে নতুন স্থান নির্বাচন করে আরেকটি কবরস্তান করা যায়।
কোনকিছুই না করে মধ্যরাতের তান্ডব!!!!!!
মেনে নেওয়া যায়!!!
মেনে নেবে কেন নড়াইলবাসী!!!!!

জাগ্রত নড়াইলবাসী, আরও সোচ্চার হোন, আরও উচ্চকণ্ঠ হোন।
গণবিরোধী অপকর্মের উদ্যোক্তা ও দোসরদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করুন!!

আমরা দৃঢ় আশাবাদী জনপ্রিয় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন, কবরস্তানের সব কবর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেবেন, দোষী অমানুষদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনবেন, এইসব আগাছা-পরগাছা বিতাড়িত করে ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করবেন।

নড়াইলবাসী প্রত্যয়ী আশায় অপেক্ষমান।

———————————————–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *