সম্পাদকের কলমে গীতশ্রী সিনহা

সম্পাদকীয়

তেইশে এপ্রিল বিশ্ব গ্রন্থদিবস। যদিও আমাদের মতো গ্রন্থপ্রেমিক মানুষের কাছে রোজই গ্রন্থদিবস। কলেজস্ট্রীটের ফুটপাতে কোনও পুরোনো বই, রেয়ার বই দেখলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি যখন, তখন তো সেই মূহুর্তটা, সেই দিনটা কী গ্রন্থদিবস নয়? তাই প্রতিদিনই পুস্তকপ্রেমিক মানুষের কাছে গ্রন্থদিবস।

গ্রন্থ যে মানুষের জীবনের কত বড় সঙ্গী প্রতিজন গ্রন্থপ্রেমিকই তা জানেন।এখন তো টেকনোজির যুগ।জ্ঞাতব‍্য সব বিষয়ই আমাদের অনায়াস লব্ধ।কিন্তু একটা সময় ছিল যখন বহু শিক্ষিত রুচিশীল মানুষ নিঃসঙ্গতা কাটাতে সঙ্গী করতেন বইকে।মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প ও সাহিত‍্যসাধনার নির্বাক সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জগতের মহামূল‍্যবান গ্রন্থরাজি।মানুষ যদি বইকে ভালোবাসে তবে নির্জন অরণ‍্য বা জনশুন‍্য একটি দ্বীপেও সে দুঃসহ নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পাবে তার প্রিয় বই টিকে নিয়ে।অরণ‍্য বা দ্বীপের তুলনা আমি করলাম এই কারণে যে,এগুলি সবসময়ে প্রাকৃতিক নয়,প্রতীকিও বটে।আমাদের মনের মধ‍্যেও নানা দুঃখ শোকের ঘাতপ্রতিঘাতে সৃষ্টি হতে পারে অরণ‍্য অথবা দ্বীপের ব‍্যঞ্জনা।যদি হৃদয়ের গভীরে বিচিত্র অনুভূতির প্রকাশ চাও তবে তোমার চাই বিশিষ্ট লেখকদের লেখা বিশিষ্ট পুস্তক।কালিদাস,রবীন্দ্রনাথ থেকে আরম্ভ করে শেক্সপিয়র,গ‍্যেটে,শেলী,বায়রন,কিট্স্।

নির্দ্দিষ্ট একটি দিনে বিশ্ব বই দিবস।কেন ? কার চিন্তা মন্থন করে এই ভাবনা উঠে এসেছিল?দেখা যাক ইতিহাসের পাতা উল্টে।বিশ্ব বই দিবসের ভাবনাটা প্রথম এসেছিল স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের মনে।আন্দ্রেসের প্রিয় লেখক ছিলেন মিগেল দে থের্ভান্তেস।তাঁর অমর সৃষ্টি ডন কিহেতো বা ডন কুইক্সোট নামক বিখ‍্যাত উপন‍্যাসটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন‍্য আন্দ্রেস পরিকল্পনা করলেন মিগেলের জন্মদিন 7 ই অক্টোবর পুস্তক দিবস পালন করার।সেই মতো শুরুও করলেন 1923 সালে। প্রায় 300 বছর পর।
মিগেল দে থের্বান্তেসের মৃত‍্যুদিন হলো 23শে এপ্রিল।আবার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের মৃত‍্যুদিনও 23শে এপ্রিলেই 1616 খৃষ্টাব্দে।পরবর্তী কালে তাই এই দুই মহান সাহিত‍্যিককে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন‍্য ইউনেস্কো সিদ্ধান্ত নেয় যে,7ই অক্টোবর নয়,বিশ্ব বই দিবস পালিত হবে 23শে এপ্রিল।1995-এর 23শে এপ্রিল নতুন করে শুরু হলো বিশ্ব বই দিবস উদযাপন।

বই পড়ুন। নিজের ভাবনা চিন্তা মন্থন করে, কল্পনায় উড়ান দিয়ে লিখুন কিছু। সমৃদ্ধ করুন অন‍্যকে, নিজে সমৃদ্ধ হোন। আজকের দিনে প্রতিজন পুস্তকপ্রেমী মানুষের কাছে এইটুকুই আমার আবেদন।
নমস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *