কবি প্রণাম ✒️✒️ মধুমিতা বক্‌সী

কবিপক্ষ চলছে আমাৱ ৱবি কবিৱ প্ৰতি ভালোবাসাৱ‌ বীজ বুনে দিয়েছিলেন আমাৱ মা।
আজ‌‌ কবিকে ও মাকে‌ আমাৱ শ্ৰদ্ধাঞ্জলি এই লেখায়।
বন্ধুৱা এ্কটু সময় ব্যয় কৱে পড়ে মতামত দিও সকলে,আমাৱ কাছে বড় মূল্যবান তোমাদেৱ মতামত। শুভেচ্ছা সহ’।

মধুমিতা বক্‌সী।

আমার ঈশ্বর,
তোমাকে চিঠি তো আমি নিত্যি লিখি , আমার মনতুলিকে মনের নানাভাবনার রংএর রাঙিয়ে, আর তা জমা রেখে চলেছি মন ডাকবাক্সে সেই শৈশব থেকে।
এ চিঠিটা আমি তোমায় আমার মায়ের জবানীতে ই লিখছি ,মায়ে ঝিয়ে একসাথে।মায়ের মনের হাতটি ধরেই তো আমি প্রথম তোমারপরশ পাই,”আজি এ প্রভাতে রবির কর ,কেমনে পশিল প্রাণের পর।
মা ছিলেন তোমার একনিষ্ঠ ভক্ত,তার সারাজীবন ছিল তুমিময়।সেই ছোট্ট বেলায়’ সহজপাঠ’হাতে তুলে নেওয়ার আগে থেকেই মায়েরমুখে শুনতাম-“রবিঠাকুর রবিঠাকুর/তোমার সঙ্গে সারাদুপুর/আমার মেয়ে ছোট্ট খুকুর/ভাব হচ্ছে সারা দুপুর/সহজপাঠের ছড়াটুকুর/রবিঠাকুর রবিঠাকুর।সেই তুমি আমার মনে ফেললে তোমার ছায়া।জানলুম আজ মংগলবার জঙ্গল সাফ করার দিন,মা বুঝিয়ে ছিলেন তোমার প্রকৃতি প্রেম ,পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা ও একটিলাইনের মধ্যে দিয়ে,সেই বয়সেই “আর্মানি গির্জার ঘন্টাধ্বনি থেকে উপলব্ধি করেছিলাম সব ধর্মস্থানের ঘন্টাধ্বনি একই এবং তা
শান্তি র বার্তা বহন করে‌ আনে।
জানো তো ঠাকুর আমরা মায়ের মনের অবস্থা বা ভাবগতিক মায়ের গুনগুন করা তোমার গান থেকেই বুঝতুম গো ,যেমন– বার্ষিক পরীক্ষা র ফলাফল নিয়ে আসার সময় শুনতাম মা গাইছেন “জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না”বুঝতাম মা প্রচন্ড উৎকন্ঠায় আছেন। আবার ফলাফল দেখার পর মায়ের উদ্ভাসিত মুখ এবং অনায়াসে গেয়ে উঠতেন -“হা রে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দেরে দেরে।”আবার বাবা যখন সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন তখন দুপুরে খেতে বসার আগে আমরা সব ভাইবোনেরা মায়ের সংগে গলা মেলাতুম “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”।সে দিন সন্ধ্যের সময় মা পাটভাঙ্গা কাপড় পড়ে টুকটাক একাজ ওকাজ করতে করতে গুনগুন করতেন”আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে , বসন্তে র বাতাসটুকুর মতো”।
আর২৫শে বৈশাখে সকালে উঠেই দেখতুম মা স্নানসেরে নতুন কাপড় পড়ে তোমার ফুলমালা য় সজ্জিত প্রতিকৃতি র সামনে বসে তন্ময় হয়ে গাইছেন, -“তোমারেই করিয়াছি জীবনের ই ধ্রুবতারা”, দুচোখ দিয়ে বয়ে চলেছে অবিরল জলের ধারা,মনেমনে অনুভব করতাম এগান পূজোর ই নামান্তর।
পরক্ষণেই গেয়ে উঠতেন “মধুর তোমার শেষ যে না পাই”।
বড্ড কষ্ট হতো যেন ২২শে শ্রাবণ মাকে দেখে ,সকাল থেকেই অন্যমনস্ক, শুকনো মুখ ,যেন এক তপস্বিনী, নীচু স্বরে গাইতেন–“যে কাঁদনে হিয়া কাঁদিছে,সে কাঁদনে সেও কাঁদিল”।
আজ জানো ঠাকুর আমার মা দীর্ঘদিন ধরে এ্যালঝাইমার শিকার, কিচ্ছু মনে নেই কারো সাথে কথা বলেন না, কিন্তু তোমার গান বাজলে আজো মায়েরনিষ্প্রাভ চোখে আলো দেখাযায় ঠোঁট নড়ে। সেদিন সকালে তোমার জন্মদিন,মায়ের অবস্থা র আরো অবনতি হয়েছে,আমি তার কানেকানে বললুম মা কালবৈশাখী বিকেলে তোমার ঠাকুরের সাথে প্রিন্সেস ঘাটে বেড়াতে যাবে???কি দেখলাম জান?জান তুমি?মা যেন কানপেতে তোমার মেঘমন্দ্র স্বর শুনতে পাচ্ছেন–“ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে”.।
তারপর মা ধীরে ধীরে এলিয়ে পড়লেন।আমি শুনতে পেলাম তুমি হাত বাড়িয়ে মায়ের হাত টি ধরে গাইছ–” যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই ঘাটে”।ওহো তোমায় একটা কথা বলতেই ভুলেগেছি মায়ের জন্মদিন ছিল ২৫শে বৈশাখ।
আর একটা কথা আজ তোমায় জানাই তুমি শুধু ঠাকুর নও গো তুমি আমাদের প্রথম পুরুষ প্রথম আলো দেখানো মানুষ। আমার লেখা শেষ ,মনডাকবাক্সে ফেললুম চিঠি, ঠাকুর তুমি পড়ে নিও।
ইতি পূজারিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *