“শব্দ আর নীরবতা ” কলমে-নিতু চৌধুরী

প্রসঙ্গ,,,
“শব্দ আর নীরবতা “
কলমে-নিতু চৌধুরী

আজ দীর্ঘ কয়েক মাসের ব্যবধানে জীবনের নানা টানা পোড়েন কাটিয়ে ফিরে এলাম বন্ধুদের জন্য আবার আমার কলমের সঙ্গে স্বমহিমায়। ভালো লাগছে আবার দিনাজপুর ডেইলি ওয়েবসাইট ম্যাগাজিনের সঙ্গে থাকতে পেরে।আজ আমার কলম বলবে কিছু আমার একান্ত ই ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা।জানিনা পাঠক গণ আপনাদের কেমন লাগবে তা পড়ে। তবে আমি আপনাদের আমার প্রিয়জন আর পরিবার বলেই মনে করি। তাই মনের চিলেকোঠার গোপন কুটুরিতে জমা কথা আর কাদের ই বা জানাবো আপনাদের ছাড়া।
আসি আজকের লেখনীর প্রসঙ্গে,,,
শব্দের মায়াজাল আর নীরবতার ভাষা একে অন্যের পরিপূরক ।”শব্দ “এই অক্ষরের সমষ্টি আমাদের বেঁচে থাকার রসদ, সম্বল, ভাব প্রকাশের অঙ্গ। শব্দ চয়নের মাধ্যমে, তার ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক জটিল পরিস্থিতি সহজ করা যায় আবার সরল পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায় তাই না বন্ধুরা?
আমাদের বলা শব্দ তার ব্যবহার ,শব্দ চয়নের জ্ঞান এটা বোধ হয় একটু আধটু থাকা আবশ্যক সকল মানুষের কারণ মানুষ ই একমাত্র প্রাণী যারা শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাক্য গঠন করে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম।
অনান্য প্রাণীদের ও নিজস্ব ভাষা আছে বা অঙ্গ ভঙ্গীর মাধ্যমে ও তারা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে কারণ সৃষ্টিকর্তা সকলের ভাব প্রকাশের রাস্তাই তার মতোন করে অবশ্যই বানিয়ে দিয়েছেন।
এখন জানতে হবে কিভাবে আমরা সেই শব্দের ব্যবহার করবো।সেক্ষেত্রে শব্দ চয়ন করা বা উপযুক্ত ভাবে প্রতিস্থাপন করা ব্যাপার টা জানা কিন্ত খুব জরুরী।
আমরা উচিত শব্দ উচিত জায়গাতে না ব্যবহার করতে পারলে কিন্ত দৈনন্দিন জীবনে জটিলতার সৃষ্টি হবে, সম্পর্কের মধ্যে ধরবে ফাটল।
ব্যাপার টা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না তাই তো বন্ধুরা?আচ্ছা একটু খুলে বুঝিয়ে বলি,দেখছেন তো আমিও আমার শব্দ চয়নের মাধ্যমে কি বলতে চাইছি আপনাদের বোঝাতে পারছি না।
ব্যাপার টা হলো অনেক টা এরকম, ধরুন আপনি এমন একটা মানুষ যে কিনা একটু আবেগ প্রবণ। আপনার কাছে আপনার খুব কাছের বা দূরের সব সম্পর্ক গুলোই খুব দামী, আপনি সবারই খুব খেয়াল রাখার চেষ্টা করেন, তাদের কিসে ভালো হবে ভাবার চেষ্টা করেন,আপনার কাছে সেই মানুষ গুলো বড়ো অমূল্য, সম্পর্ক গুলো বড়ো অমূল্য কিন্ত অনেকের কাছে এগুলো ন্যাকামো মনে হচ্ছে কারণ আজকাল কার দিনে সবাই তো নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত থাকে, নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি,নিজের পছন্দ অপছন্দ নিয়েই মেতে থাকে, সেখানে আপনার আবেগ তাড়িত কাজকর্ম তাদের ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। আপনি হয়তো যার জন্য ভাবছেন সে অন্যের কথায় আপনাকে বলে বসলো এই বয়সে এতো সব চিন্তা ভাবনা, আবেগের নামান্তর, ন্যাকামো ছাড়া কিছুই নয়। ব্যস, আপনার সব চিন্তা ভাবনার উপর অপমানের একরাশ কালি পরলো। হয়তো সেই মানুষটি কথাটা অন্য ভাবে,অন্য ভাষার দ্বারা ও বোঝাতে পারতো তাই না?ন্যাকামো মনে হলেই ন্যাকামো বলতেই হবে,আবেগ প্রবণ বলে তাকে কষ্ট দিতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই তাই না?এটাও তো বলা যেতো এসব চিন্তার দরকার নেই, যা হবে হবে।এই যে একটা শব্দ ন্যাকামো,বা আবেগ প্রবণ যাকে বলা হলো, উল্টোদিকের মানুষ টা একবারও ভাবলো না, যাকে বলছে তার মনের অবস্থা কি হতে পারে?তাই যখন কাউকে কোন কথা বলা হয় এটা ঠিক কোন ভাষা ব্যবহার করলে উচিত হবে সেটার বোধ থাকাটা কিন্ত খুব জরুরী। কারোর ভাষা নিজের মুখে না বসিয়ে তাই নিজের বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই কিন্ত ভাষার বা শব্দের ব্যবহার করা উচিত।
এবার আসি নীরবতা প্রসঙ্গে,,
কোন কোন সময় আমরা কোন কোন এমন ঘটনার সাক্ষী থাকি যা মুখে প্রকাশ করার ইচ্ছা বা অবকাশ কোনটাই থাকে না হয়তো পরিস্থিতির কারণে, বা চাপে পরে চুপ থাকতে বাধ্য হই। সেই নীরব দর্শক হয়ে থাকাটা কিন্ত মোটেই সুখকর নয় ।কিন্ত কোন কোনও সময় আমরা অন্যায় দেখে, জেনেও নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্য নীরব দর্শক হয়ে যাই তাই না বন্ধুরা?
আবার কখনও কখনও অসুস্থতার কারণেও কাউকে কাউকে নীরব হয়ে যেতে হয় তা কি সত্যিই সুখকর? কখনও কখনও নীরবতা কেই ভাষা করে নিতে হয় নিজের কষ্ট কমানোর জন্য কারণ তখন মন চায় নিজেকে খুঁজে পেতে, নিজের অস্তিত্ব টাকে অনুভব করতে তখন নীরবতাই কাম্য মনে হয়।কিন্ত অন্যায় সহ্য করে নীরব থাকলে বোধ হয় ভগবানের ক্ষমাও পাওয়া যায় না,,,,
একটা উদাহরণ দিই, যখন যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় পরাজিত হয়েছিলেন দুর্যোধনের কাছে, তখন ভরা রাজসভাতে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ কালে ভীষ্ম,কর্ণ সকলে নীরব দর্শক হয়ে দেখেছিলেন ,কেউ প্রতিবাদ টুকুও করেননি। সে নীরবতার দায় কিন্ত তাদের মৃত্যুর সময় অবধি বয়ে বেড়াতে হয়েছিলো। কারণ তারা পাপকে প্রশয় দিয়েছিলেন এবং অবশ্যই পাপীকে।
শব্দের সঙ্গে নীরবতার সম্পর্ক তাহলে কিন্ত বেশ গভীর তাই না?তাহলে এবার নিজেকেই ঠিক করতে হবে কোন পরিস্থিতিতে ,কোন শব্দ,কিভাবে বলা উচিত অথবা নীরব হয়ে শব্দ বুকে চেপে কষ্ট সহ্য করা উচিত।
বাকিটা আপনাদের বিচার বিশ্লেষণ আর বুদ্ধি বিবেকের উপর ছাড়লাম। তবে হ্যা, নিজের কাজটা নিজেই করুন, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অন্যের কথা নিজের মুখ দিয়ে বলে অহেতুক একজনের কষ্টের কারণ হবেন না কারণ সেই কষ্টের তীরটা যে বুমেরাং হয়ে আপনাকেই বিদ্ধ করবেনা তা আর কে বলতে পারে। শেষ বিচারের ভার তো উপর ওয়ালার হাতে তাই না,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *