# দিবস কেন যে এলো না # কলমে – অরণ্যানী

# দিবস কেন যে এলো না #

কলমে – অরণ্যানী

# পর্ব # – ১
আজ ২৩ জানুয়ারি। ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা নেতাজীর ফটোটার দিকে বার বার চোখ চলে যাচ্ছে নীলমের। সত্তরের কাছাকাছি বয়স। কিন্তু এখনও যথেষ্ট সক্ষম নীলম। নিজের ছোট্ট একটি ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর, ও এক ফালি বসার ঘরটুকু নিজের হাতেই পরিষ্কার রাখতে পারে। নিজের রান্না নিজেই করে। সেছাড়া এখনো বিনা পয়সায় ডাক্তারি করতে যায় কাছেই একটি চেম্বারে। ফলে সেই অর্থে একাকীত্ব তাকে সেভাবে ছুঁতে পারে না। অনেক মানুষজনকে নিয়ে কাজ আজও থেমে থাকেনি। কিন্তু আজ ছুটি। তবে মোবাইল ফোনের যুগে ঘরেও হয়তো মানুষ একা নয়। ঘরে বসে মোবাইলে ফেসবুক খুলতেও নেতাজীরই ছবি। কত পোস্ট নেতাজীকে নিয়ে। ঘুরে ফিরে সেই একই কথা, সুভাষ ঘরে ফেরেনি, নেতাজি ফিরে এসো। আবারও চোখ পড়ল নেতাজির ফটোটার দিকেই। এখন আর মালা দেওয়া হয় না। তবে সঙ্গে থেকে গেছে ফটোটা কত বছর, তা মনে নেই।

নেতাজি ঘরে ফেরেননি, সেই গল্প কোন ছোটবেলায় শোনা। কিন্তু আরও এমন কত মানুষ আছে, যারা ঘরে ফেরেনি, কে তার হিসাব রাখে। মোবাইল ফোন অফলাইন করে নেতাজির ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্যমনস্ক নীলমের মনে স্মৃতিরা ভিড় করে এলো। সামনের মাঠটায় ছোট ছেলে মেয়েরা খেলছে। কচি কাচাদের কন্ঠস্বরের কলকাকলি যেন চড়ুই পাখির কিচির মিচির। গ্রাম তো, তাই ছেলে মেয়েরা এখানে খেলে।
(২)
বাড়ির কাছে সেই একটা পার্ক। ঘুম ভাঙলেই ছুটে যাওয়া সেখানে। একদল ছোট ছেলে মেয়েদের ভিড়। স্কুল থাকলে, পড়া থাকলে মায়েদের ডেকে আনা। কিছু বাধ্য শিশুকে ডাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু নীলমদের মতো দুষ্টু ছেলে মেয়েদের রীতিমত ধরে আনতে হতো। আর দুরন্ত কিছু ছেলে মেয়েদের মায়েরা তো হিমশিম খেয়ে যেত তাদের দৌড়দৌড়ি করে ধরতে গিয়ে। কোনো বড় দাদাকে দেখলে ধরে দেওয়ার অনুরোধ জানাত। বাধ্য কিছু মেয়ের পার্কের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। কিন্তু নীলমরা সারাটা পাড়াতেই দৌড়ে বেড়াত। পার্কে দুটো দোলনা, একটা স্লিপ। দোলনায় চড়া নিয়ে কাড়াকাড়ি। আর ছোটদের মধ্যে দুটি একটু বড় দিদি ও এক দাদা এসে জুটত দোলনা চড়তে। আসলে এক দাদা ও দিদির মধ্যে প্রেম ছিল, ওরা জানত। সেটা যাতে কেউ বুঝতে না পারে, তাই দ্বিতীয় দিদিটি সেটা আড়াল করতে চেষ্টা করত। দাদা দিদিরা সেভেনে, আর ওরা তখন ক্লাস থ্রি।

দাদাটা মহা দুরন্ত। ওকে দেখলে সব সমবয়সী থেকে ছোট মেয়েরা দৌড় দেয়। সমবয়সী হলে আচমকা পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে পালায়, অথবা মাথায় খানিক ধুলো ছুঁড়ে দেয়। আর ছোটদের ভয় দেখায়। দু’হাতে তুলে গাছের ডালে বসিয়ে দেয়, দোলনায় থাকলে দোলনাটা প্রচন্ড জোরে দোলাতে থাকে। এভাবে পার্ক প্রায় ফাঁকা করে দিয়ে দিদিটাকে নিয়ে দোলনায় দোলে। এটাই ওদের প্রেম। আর কীভাবে প্রেম করতে হয়, অত তখনো বোঝে না। আর এক দিদি বারংবার তাকে এসব করতে নিষেধ করে। কারণ ওর প্রেমিকার দাদা জানতে পারলে পিটোবে। কিন্তু সে ছেলে তো কারুর বারণের তোয়াক্কা রাখে না। নীলম, লাবণ্য, আর পিঙ্কি ওই দাদাকে ভয় পায় না। বেশ মজা পায়। যেন ওদেরই মতো ছোট। আর যা আবদার করা যায়, তাই মুহূর্তের মধ্যে পাওয়াও যায় তার কাছ থেকে। ফলে ওদের সঙ্গে ভাব হয়ে যায় ওই দাদাটার। দাদা ওদের প্রিয় চঞ্চলদা। আর তার প্রেমিকা দিদি হলো ঝিলিকদি। আর এক দিদি কুসুমদি। তার প্রেমিক আবার বয়সে অনেক বড়। ঝিলিকেরই দাদা। পাড়ার বিখ্যাত বিদ্যুৎদা। দিদি দুটো কিন্তু মোটেই চঞ্চলদার মতো দুরন্ত নয়। ছোট মেয়ে তিনটিকে বাচ্চা হিসাবে বেশ পছন্দ করে ওরা।
(চলবে)

কলমে – অরণ্যানী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *