// স্মার্ট ফোন // ✒️✒️ পূর্বা মাইতি

// স্মার্ট ফোন //

পূর্বা মাইতি

করোনার আবহে সেই যে প্রথমবার লকডাউন হলো , তখন ব‍্যাঙ্গালোর থেকে ছেলে, বৌ এসে মিতার কাছে কলকাতা য় বেশ কয়েক মাস ছিল । ছেলেকে মিতা মাধ্যমিকের পর আঁচলছাড়া করে আর তেমন পায়নি, এই কয়েক মাস ছাড়া। বর্তমান ছেলে , বৌ আইটিতে কর্মরত। কেরিয়ারিস্ট বাবা ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যা যা করনীয় সবকিছু করে , বর্তমানে নিজের ব‍্যবসায় আসীন।
গল্পটা এখানে নয়। অন‍্যখানে। তো সেই বৌমা করোনার সময় শাশুড়ির কাছে এসে লক্ষ্য করলো , শাশুড়ি ঠাকরুণ সবসময় কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকে। সবই করছে কিন্তু কোন কিছু তেই যেন প্রাণ নেই। আগের সেই হৈ হৈ করা মিতা কে ছেলে , বৌ যেন খুঁজে পাচ্ছেনা। ছেলে সানি বাবার কাছে জানতে চাইল কারণ টা কি । বাবা না জানার ঘাড় নাড়লো। তখন বৌমা নীলা সানি কে বললো মানে আবিষ্কার করলো “মনে হয় মামণি লকডাউনে কোথাও বেরোতে না পেরে এমন চুপচাপ হয়ে গেছে”।তখন সানি বেটার হাফের কাছে জানতে চাইলো –“কি করা যায় তাহলে”?
নীলা –“পেয়ে গেছি সানি । শোন! তোমার মায়ের ফোন টা কোথায়? না মানে ঐ আগের যে ফোনটা মামণি ইউজ করতো , এখনো ওটাই করেতো? শোন, ওটায় হবেনা।অলরেডি একটা স্মার্ট ফোন আমি অনলাইনে বুক করে দিয়েছি। এবার দেখো,মামণির আগের স্মাইল কীভাবে ফিরে আসে”।
তিন দিনের মধ‍্যে স্মার্ট ফোন হাজির।
মিতা ছেলে, বৌকে জিজ্ঞেস করলো –“তোদের কি জিনিস এলোরে”?
নীলা “ঐ তো” বলে চেপে গেল।
মিতা আর কথা বাড়ালো না। সানি কাজের বাহানা দেখিয়ে তৎক্ষণাৎ অন‍্যত্র কেটে পড়লো।
দুপুরে যথারীতি খাওয়া দাওয়া শেষ হলে নীলা নতুন ফোন ঠিকঠাক করে রাখলো। সন্ধ‍্যেবেলা শাশুড়ি মা,শ্বশুর মশাই, সানি,কাজের দিদি প্রতিমাদি সবাই যখন ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে বসেছে আর সবার হাতে যখন প্রতিমাদির জম্পেশ চায়ের কাপ তখন নীলার হঠাৎ প্রবেশ।
নীলা –সবাইকে দেখিয়ে, “সারপ্রাইজ”। সবাই তখন টিভি থেকে নীলার দিকে মনোনিবেশ করলো। তবে সানি নীলার ইশারায় স্পিকটি নট হয়ে কেবল মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
নীলা সরাসরি মিতাকে –“মামণি এই ফোনটা দেখতে কেমন লাগছে? হাতে নিয়ে একটু দ‍্যাখো”।
মিতা –“হাতে নিয়ে কি দেখবো? তোদের দরকারি ফোন আমি দেখে কি করবো? তা সেদিন এইটা এলো বুঝি “?
প্রতিমা -“কি সুন্দর গো বৌদি”।
নীলা ফোনটা মিতার হাতে দিয়ে বললো,”না মামণি, এটা তোমার।প্লিজ নাও। এগুলো ভীষণ ভারি, আমি কিছু বুঝবোনা, আমার যেটা আছে সেটাতেই বেশ– প্লিজ এসব কিছু বোলোনা। আমি তো এখন আছি, ইউজ করতে শিখিয়ে দেবো। আর শিখে গেলে দেখবে তোমার কতো ভালো লাগবে “।
সেই শেখা। নীলার কাছ থেকে স্মার্ট ফোন ইউজ করা। স্কুল লাইফ, কলেজ লাইফ, চেনা জানা প্লাস ফেসবুকের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিন যে কতো যোগাযোগ হয়ে চলেছে তার ইয়ত্তা নেই। এমনকি দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়ের ভোগের মেনু পর্যন্ত ঠিক করতে শিখে গেছে মিতা।
শুধু ছোটবেলায় কথা দেওয়া, যার ঘরনী হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তাকেই যে কেন পায়না ফেসবুকে !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *