সম্পাদকীয় কলমে গীতশ্রী সিনহা

সম্পাদকীয়

সদ্য আমরা অতিবাহিত করলাম শিক্ষক দিবস। শিক্ষক দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে গিয়ে কিছু কথা বলি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিকাশ সাধন করা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে অবশ্যই শিক্ষা হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। সক্রেটিস -এর ভাষায় শিক্ষা হলো সত্যের বিকাশ। মানব জীবনে শিক্ষা একটি অপরিহার্য বিষয়। মানুষকে মানবীয় গুণের অধিকারী করার জন্য শিক্ষা একটা প্রাথমিক এবং প্রয়োজনীয় কৌশলগত বিদ্যা সমাজ ব্যবস্থাতেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্বের জাতিসমূহের একটি বিশেষ জাতির অবস্থান কোথায়, সেটা অবশ্যই চিহ্নিত করা যায় শিক্ষার মাধ্যমে। সুতরাং, শিক্ষা জাতির একটি কল্যাণকর দিক। মানুষের জন্মগত সম্ভাবনাকে বিকশিত করার জন্য কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রবাহকে সজাগ রাখার জন্য শিক্ষা একান্তভাবে প্রয়োজন।

একমাত্র শিক্ষার দ্বারাই উন্মোচিত হয় একটি জাতির ভবিষ্যতের সিংহদ্বার। শিক্ষাই ব্যক্তিজীবনের সফলতা পরিপূর্ণতার আলো দেখাতে পারবে।
আমাদের সমাজজীবনে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় বেড়েই চলছে। নিজেদের প্রাপ্তির জন্য আমরা খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার কোনো চেষ্টাই আমরা করি না! শুধু দৌড়াচ্ছি। এ নিয়ে ভাবার আমাদের সময় নেই। আমরা কেমন যেন একটা বেড়াজালের মধ্যেই রয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে কি আমরা খুব একটা এগোতে পারছি? ঝএই নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সব অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অর্জনকে ধরে রাখতে পারছি না।

এই যে আমাদের নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম আছে, আমরা কি তাদের কথা ভাবি? তারা ভবিষ্যতের হাল ধরবে, তাদের সেভাবেই তৈরি করতে হবে আমাদের। প্রত্যেক মা-বাবা কি তাঁদের সন্তানের খোঁজখবর রাখেন? সন্তানকে কিভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে কি ভাবেন? আমরা শুধু টাকার পেছনে দৌড়াই, এর জন্য আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি! কিন্তু একটি সুন্দর সমাজ, রাষ্ট্রের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে আমরা কি দায়িত্ব পালন করছি? সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে!
খাবার, ওষুধ, শিক্ষাসহ সব কিছুতেই এখন ভেজাল, দুর্নীতি এখন আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এই ভেজাল ও দুর্নীতির হাত থেকে আমাদের বের হওয়ার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে কাজ করা এবং মানুষকে সংস্কৃতিবান হিসেবে গড়ে তোলা। নৈতিকতার শিক্ষা ও প্রকৃত সাংস্কৃতিক চর্চায় আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমাদের সমাজে মেধার সংখ্যা দিন দিন কিন্তু হ্রাস পাচ্ছে না। তাও সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার জন্য সময় পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন মেধার বিকাশ, নতুন নতুন চিন্তার উন্মেষ ও তার বিকাশ এবং প্রসার ঘটানো। আমাদের প্রয়োজন আদর্শনিষ্ঠ ও সর্বজনীন সংস্কৃতিচর্চার।
মেধাবীদের বড় একটি অংশ বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে উন্নত জীবনের আশায়, ভালোভাবে প্রথম শ্রেণির জীবনযাপন করার জন্য। এখানেও লক্ষ্য একটাই। জীবন-জীবিকার তাগিদে বেশি আয় করে সূর্যের আলোয় নিজেকে উজ্জ্বল করে তোলা। এ দেশের সংস্কৃতি তাদের আকর্ষণ করে না বা উন্নত জীবনের আশায় এগুলো ত্যাগ করা এবং বিদেশে চলে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য। আমাদের সংস্কৃতিচর্চায় ও সংস্কৃতি অঙ্গনে মেধাবী প্রতিভার অভাব রয়ে যাচ্ছে।

এমন সব কারণে আমাদের সমাজে মেধাবী কম না হলেও আদর্শনিষ্ঠ, সৎ ও নীতিপরায়ণ মেধাবী প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। কমে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী ধারার জনস্বার্থবাদী চিন্তবাদীদের সংখ্যা। স্বভাবতই হ্রাস পাচ্ছে বা শক্তিহীন হচ্ছে অনুরূপ গুণের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো জনস্বার্থবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অনুরূপ রাজনৈতিক শক্তির অভাবও এই সাংস্কৃতিক শূন্যতার অন্যতম কারণ। অভাব সংস্কৃতি-রাজনীতির পরস্পর নির্ভরতার। আর এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণের পথ দেখাতে পারে প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, যা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়কে দূর করে জাতিকে নতুন যুগের পথ দেখাতে পারে।

এমন সব কারণে আমাদের সমাজে মেধাবী কম না হলেও আদর্শনিষ্ঠ, সৎ ও নীতিপরায়ণ মেধাবী প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। কমে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী ধারার জনস্বার্থবাদী চিন্তাবাদীদের সংখ্যা। স্বভাবতই হ্রাস পাচ্ছে বা শক্তিহীন হচ্ছে অনুরূপ গুণের আঁধার যুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো জনস্বার্থবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অনুরূপ রাজনৈতিক শক্তির অভাবও এই সাংস্কৃতিক শূন্যতার অন্যতম কারণ। অভাব সংস্কৃতি-রাজনীতির পরস্পর নির্ভরতার। আর এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণের পথ দেখাতে পারে প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়কে দূর করে জাতিকে নতুন যুগের পথ দেখাতে পারে।

অ্যারিস্টটলের কথায় আসি তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘মানুষ বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী, যখন সে আইন ও বিচারক্ষমতাসম্পন্ন থাকে, তখন সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব, আর যখন সে আইন ও বিচারক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন সে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম প্রাণী।’ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের দিক থেকে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে, চলুন আমরা আবার সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়াই, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হই ও প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চায় মনোনিবেশ করি। আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে আমাদের মূল্যবোধকে জাগিয়ে দেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
এই সংখ্যায় সমাজ জীবনের কিছু সংকটচিত্র তুলে না ধরে পারলাম না… ওয়েবসাইট ম্যাগাজিন একটি বড় মাধ্যম মনে করি। অনেক মূল্যবান তথ্য সমৃদ্ধ লেখা পাচ্ছি, বিনোদনের প্রাপ্তি মনে করি, এইভাবেই এগিয়ে যেতে চাই সকলকে পাশে নিয়ে।
অপার শুভেচ্ছা শুভকামনা ভালোবাসা রইল সকল লেখক কবিদের প্রতি।

সম্পাদকীয় কলমে
গীতশ্রী সিনহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *