“তৃতীয় পত্র তাঁর কাছে ✒️✒️ ” মালবিকা

“তৃতীয় পত্র তাঁর কাছে “
মালবিকা

প্রিয়তমেসু,

ঈশ্বর বাদল এলো কিন্তু গেল না সে শুধু আমাকে দুঃখ দেবার জন্য। আমি অনেক যত্নে মনকে শাসনের নিগড়ে বাঁধতে চাই কিন্তু পোড়ামন কথা শোনে না ।যখন পড়তে বসি পড়ায় মন বসে না, যখন লিখি কিছু তখন কেবল তোমার নামই লিখি। আমার এমন দশা কাটবে কবে? সারাদিন রাত অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরে আর আমার মন উচাটন হয় সে শুধু তোমার বাঁশি শোনার আশায়। বৃষ্টির ঝমঝম ,বৃষ্টির রিমঝিম শুনে মনে হয় তুমি নদী কুলে তমাল তলায় দাঁড়িয়ে আছো, হাতে বাঁশি, ঠোঁটে হাসি, মাথায় শিখি পুচ্ছ আর তোমার উজ্জ্বল কালো বরণে চারদিক আলোকিত হয়ে আছে। সেখানে তোমার অগণিত অনুরাগী তোমাকে ঘিরে আনন্দে উদ্বেল হয়ে আছে। কেবল আমি গৃহবন্দি হয়ে বিরহ যাতনায় অস্থির হই।কত কুসুম ফুটল আবার ঝরেও গেল ।তোমার অনুরাগে সবাই কত মধুময় দিবস রাত্রি যাপন করলো। তাদের হৃদয়পুষ্প প্রস্ফুটিত হয়ে ধন্য হলো।শুধু আমি দূর থেকে তোমাকে পাবার প্রার্থনা করে যাই এক মনে তবু তোমার প্রসন্ন অনুরাগ থেকে দূরেই থেকে যাই ।

অন্তর্যামী তুমি তবুও বলি, সে রাতে হঠাৎ করে মনে হল অনেক দূর থেকে যেন কার বাঁশির সুর ভেসে আসছে। সেই সুরে আমি কি বলি বলো আমি যেন আকুল হয়ে স্থান কাল সব ভুলে বাইরের আঙ্গিনায় এসে দাঁড়ালাম। তখন সবে বৃষ্টি থেমেছে আকাশের মেঘ সরে গিয়ে একটু আলো আমাদের আঙ্গিনাকে উজ্জ্বল করেছে। আমি আকাশ পানে চেয়ে দেখি তুমি ওই দূরাগত চন্দ্রের উজ্জ্বল কলঙ্ক হয়ে আমার পানে চেয়ে আছো ।প্রভু আমার! প্রিয় আমার !সেই তখনই আমার নবজন্ম হল ।হৃদয় দিয়ে অনুভব করলাম তুমি আমাকে একটু হলেও ভালোবাসো। আমি কি এত সুখ সইতে পারবো? এত তোমার দয়া ঈশ্বর! যদি দয়ায়ই হবে তবে কেন জন্ম জন্ম যেন জন্ম জন্ম আমি কারো একটু প্রসন্নদৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে আছি?

মনে হয় অনেকবার তুমি অন্য অনেক রূপ ধরে আমার কাছে এসেছিলে আমাকে ভালোবেসেছিলে। তখন তোমাকে ভেবে আমি তাদের ছায়া তলে একটু স্নিগ্ধতার আশায় পা রেখেছিলাম ।কিন্তু কি হল জানো! তাদের স্পর্শ আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মতো আমাকে পুড়িয়ে দিল। আমার সর্বাঙ্গ কালো অঙ্গারে পরিণত হলো ।হে ঈশ্বর সে কি আয়ান ঘোষের স্পর্শ ছিল? আমি তো তোমাতেই সমর্পিত।ঈশ্বর তবু এত পরীক্ষা! এত পরীক্ষা তারপর সময়ের প্রলেপে আবার আমার নবজন্ম হলো নানা রূপে,নানা বেশে নানাভাবে তুমি আমার কাছে এসেছো আর আমি তোমার নানা রূপে মুগ্ধ হয়ে কতবার মন দিয়েছি সে শুধু তুমিই জানো। কবির ভাষায়-
” মন দেয়া নেয়া অনেক করেছি মরেছি হাজার মরণে “।
আর কতবার মরে যাব আর কতবার নতুন করে বেঁচে থাকবো সে শুধু তুমি জানো ।

আর কত লিখি বলো। হৃদয় নদী সদাই ছলোছলো ঠিক যেন আমার অক্ষি যুগলের মত।হৃদয়ে বাঁধ দিতে চাই তবু বারে বারে বাঁধভাঙ্গা ঢেউ এসে আমাকে কাদায়, হাসায় পাগল করে।বাড়ির সকলে বলে আমার কোনো কাজে মন নেই।আমার পড়াশোনায় মন নেই। আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তারা জানে না, আমি অন্ধকার বড় ভালোবাসি। আমি যে অন্ধকারে তোমার স্পর্শ অনুভব করি তবু তোমাকে পাইনা আমাকে তুমি আর কতকাল দূরে সরিয়ে রাখবে বলো। এবার আমিও তোমার পরীক্ষা নিতে চাই। আমার অপেক্ষার, আমার প্রতীক্ষার অবসানে তুমি নিজেই আসবে আমাকে ধন্য করতে একদিন।সেই একদিন আমার শত বরষের পরীক্ষার অবসান হবে ঠিক তোমার অনুরাগিনী রাধারানীর মত। আমার অনন্ত অপেক্ষার অবসান ঘটবেই ঘটবে আবার আমি অগ্নি শুদ্ধ হয়ে তোমার বাঁশির সুরে মগ্ন হব সে সুরে আমার নাম বাজবেই বাজবে।
ইতি-
অনুরাধা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *