# বইয়ের নাম-মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প। # লেখক-মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়। # কলম-পাঠিকা-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়

# বইয়ের নাম-মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প।
# লেখক-মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
# কলম-পাঠিকা-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়
বাংলা ছোটগল্প ও উপন্যাসের লেখক মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পছন্দের সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম।মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গ্রন্থটিতে যতগুলি গল্প –প্রাগৈতিহাসিক,সরীসৃপ,শিল্পী,হারানের নাতজামাই,ছিনিয়ে খায়না কেন?-গল্পে সর্বহারা মানুষের জীবন-যন্ত্রনায় উঠে এসেছে তাদের নিষ্ঠুর আত্মসর্বস্ব মনস্তত্ত্ব।লেখক অত্যন্ত নির্মম ও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে অবলোকন করেছেন সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষের আচার-ব্যবহার-বাচনভঙ্গী।সেখানে একটা নির্দিষ্ট বার্তা পাচ্ছি আমরা,পাচ্ছি ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত মনের পরিচয়।কবির ভাষায় তাই তাঁর চোখে—
“মানুষের মর্মে মর্মে করিছে বিরাজ,
সংক্রমিত মড়কের কীট,
শুকায়েছে কালস্রোত,কর্দমে মিলেনা পাদপীঠ।”–
আসলে একজন লেখকের রচনায় ধরা পড়ে তাঁর পরিবেশ,পরিস্থিতি এবং তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোণ।লেখক নিজেই বলেছেন–“জীবনকে আমি যে ভাবে..উপলব্ধি করেছি…তাকে আশ্রয় করে…অন্যকে উপলব্ধি করাই।”–স্বেচ্ছায় বরণ করা দারিদ্র তিনি উপভোগ করেছেন।
প্রাগৈতিহাসিক গল্পে ভিখু আসে পাঁচীর জীবনে,বসিরকে ঠাণ্ডা মাথায় বিভৎসভাবে খুন ক’রে।কী নির্লিপ্ত সেই খুনের বর্ণনা!লেখক বলতে চেয়েছেন,মানুষের রক্তেই আছে প্রাগৈতিহাসিকতা,বাঁচার লড়াইয়ের তাগিদ।গল্পটি বিভিন্ন বিদেশী ভাষায় সর্বাধিক অনূদিত স্বতন্ত্র গল্প।
সরীসৃপ গল্পটিতে বনমালীকে একজন ধুরন্ধর কূটনীতিক চরিত্র হিসেবে অত্যন্ত সাবলীল ও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
ছিনিয়ে খায়না কেন?তেও রাজনৈতিক চেতনা পরিস্ফুট।যতক্ষণ হাড়-হা-ভাতেরা যাহোক খেতে পাবে ততক্ষণ ছিনিয়ে খাবেনা।অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং লেখকের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির গভীরতা থেকে উঠে এসেছে গল্পটা।
মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের অস্তিত্বের তাৎপর্যতা ও বিপন্নতাকে ভাবলেশহীনভাবে কলমের ডগায় তুলে এনেছেন।কারও কারও মতে মার্কস্ ও ফ্রয়েডের দর্শন-তত্ব তাঁর গল্পের উপজীব্য।জীবন সম্পর্কে তাঁর ভাবনা ছিল তাই ক্ষমাহীন, আপোসহীন ও কঠোর বাস্তব।
——————————————