#পুনর্জন্ম কলমে : গীতালি
#পুনর্জন্ম
কলমে : গীতালি
৩. পুনর্জন্ম ও পুনরায় দেহধারণের পার্থক্য :
মানুষের কর্মিক প্রবণতার পারম্পর্য অনুযায়ী মৃত্যু পরবর্তী পর্যায়ে জন্মগ্রহণকে পুনর্জন্ম বলা হয়।
পুনরায় দেহধারণ হল আত্মা,চেতনা অথবা সারবস্তুর ক্রমিক জন্ম পরম্পরা — এক দেহ থেকে অন্য দেহে ভ্রমণ করে। মূলত আত্মার ভ্রাম্যমানতাই পুনরায় দেহধারণের মূল ভাবটিকে নির্দেশিত করে।
সাধারণত এই দুটিই মূলত একই পথের পথিক, দুটিই ‘আবার জন্মধারণে’র প্রক্রিয়া। মৃত্যু পরবর্তী পথ সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে, কিন্তু প্রায় অনেকের মতেই দেখা যায় যে এ বিষয়ে ধর্ম ও ঐতিহ্যের প্রভাব আছে। তাই পুনর্জন্ম ও পুনরায় দেহধারণ উভয়ই ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকে।
এই দুটি প্রক্রিয়াই মৃত্যুর পরে আবার জন্ম নেওয়ার কথা বলে। পুনর্জন্ম বৌদ্ধধর্মের মতবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, যেখানে কোনো আত্মার কথা বলা হয় না। শুধুমাত্র পৃথিবীতে নতুনরূপে ফিরে আসার কথাই এরা স্বীকার করেন। অপরদিকে পুনরায় দেহধারণের যে প্রক্রিয়া, তা হিন্দুধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যেখানে অবিনশ্বর আত্মার কথা বলা হয়। অন্য দেহে সেই আত্মা নিজেকে প্রতিস্থাপন করে।
বৌদ্ধ মতবাদের নিরীখে বলা যায়, মানুষ ‘নাম’ ও ‘রূপে’র সমন্বয়ে গঠিত হয়। রূপ বা বস্তু চারটি শক্তির একত্রিত প্রকাশ– ভূমি, জল, অগ্নি ও বায়ুর সংযোগে এর গঠন হয়।
অস্তিত্বের মূল উপাদান হল মন। যখন কোনো ব্যক্তিবিশেষ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং সে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে, তখন সে একেবারে পূর্বের মতোও যেমন থাকে না, আবার সম্পূর্ণ নতুন ধরণেরও হয় না। এটি একটি সংযোগ মাত্র হয়ে থাকে পূর্বজন্ম ও পরজন্মের মধ্যে।
বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষানুযায়ী ‘জীবন’ মৃত্যুর পরবর্তী পর্যায়েও বিদ্যমান থাকে। মৃত্যু পরবর্তী স্তরে কর্মিক প্রবণতা অনুসারে নতুন ভাবে শুরু করাই পুনর্জন্ম। জন্ম ও মৃত্যুর চিরন্তন প্রবাহকেই এই ধর্ম সূচিত করে। এখানে কোনো ব্যক্তিবিশেষের পছন্দের উপর পরের জন্মটি হয় না, পূর্ব কর্মের শিক্ষানুসারে তা আবর্তিত হয়।
অন্যদিকে ‘পুনরায় দেহধারণ’ হল এমন এক বিশ্বাস যেখানে মৃত্যুর পরেও আত্মা মরে না, পরের জন্মে তা নতুন দেহে স্থাপিত হয়। এটি একটি ভ্রাম্যমান পদ্ধতি, হিন্দু দর্শনে এর বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এই বিশ্বাসে মানুষ দুটি উপাদানের সাহায্যে গঠিত হয় — প্রথম, শাশ্বত ‘আত্মা’ যা অবিনশ্বর আর দ্বিতীয়, ‘দেহ’ যা পার্থিব এবং লয়প্রাপ্ত হয়। এই পুনরায় দেহধারণ ব্যক্তিবিশেষের পছন্দকে মান্যতা দেয়, তার সুযোগ থাকে পরবর্তী জন্মকে ইচ্ছানুযায়ী বেছে নেওয়ার ও আধ্যাত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ‘কর্ম’কে উন্নত করার। বারংবার জন্মগ্রহণে মন ও আত্মা পবিত্র হয় ও আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে উত্তরণ ঘটায়।….(চলবে)