যদিও দুপুর তবুও রাত্রি এখন **** ম ধু মি তা বে তা ল

যদিও দুপুর তবুও রাত্রি এখন
ম ধু মি তা বে তা ল

“নারী তুমি অর্ধেক আকাশ”
অতিমারীর রক্তচক্ষু থেকে চোখটা একটু সরিয়ে নিয়ে আমার এই প্রয়াস। যদিও বিষয়টি নতুন নয়, এর আগে অনেকেই ভেবেছেন, বলেছেন ও লিখেছেন। তবে আমার কলমে অবশ্যই নতুন। আমার এই লেখা তাদের জন্য নয়, যারা স্বাধীনতা বা স্বাধিকারকে মনে করেন নামমাত্র পোষাক পরে শরীর প্রদর্শন আথবা নারীমুক্তির নামে অসহিষ্ণু বেলেল্লাপনা, যা নরীর অগ্রগতির রথের রশি টেনে ধরে। পরিষ্কার করে বলতে গেলে এটাই বোঝায় যে নারী স্বাধীনতার নামে অবাধ, অনিয়ন্ত্রিত স্বেচ্ছাচার শৃঙ্খল ভাঙতে গিয়ে আদপে শৃঙ্খলিতই হয়ে পড়ে। আন্দোলনে শৃঙ্খলা লাগে। স্বেচ্ছাচারিতায় শৃঙ্খলা শৃঙ্খলে পরিণত হয়। অরুচিসম্মততার নেতিগামী বার্তা মুক্তির আন্দোলন হতে পারে না, বরং সমাজকে আরও নিম্নমুখী স্রোতে ঠেলে দেয়। আর যার দায় বহন করতে বাধ্য হয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। কামবর্বরতার আহ্বান থেকে কখনোই সভ্যতার ক্রমোন্নতি অথবা ক্রমমুক্তি হতে পারে না বা হবে না। তথাকথিত নারীবাদী আন্দোলনগুলির বেশিরভাগই তাই একটা স্বেচ্ছাচারিত ভগ্নপ্রায় সমাজ-সিস্টেমের গতানুগতিকতার বহনকারী হয়েই থেকে যায়।

“আয় তবে সহচরী…”
আমার এই লেখা তাদের জন্য যারা সত্যিকার এক দীপ্তোজ্জ্বল নারীসমাজ প্রত্যাশা করেন। তাদের একত্রিত হয়ে বলতে হবে “আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি”। এখন আমাদের খুব প্রয়োজন একটা স্বচ্ছদৃষ্ট সমাজ দর্শন, যা শুধুই ব্যাখ্যাতে আটক থাকবে না, জীবনযাপনে প্রতিফলিত, পালিত ও লালিত হয়ে দুনিয়াকে বদল করার কর্মকাণ্ডে অবতীর্ণ হবে। এখানে আর একটা কথা বলা খুবই জরুরি, অনেক সময় দেখা যায় নারীরাই নারীদের পথের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দুর্বলতা, ভীতি, স্বার্থপরতা, অনুদারতা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসাপরায়ণতা সেই বাধাকে আরও ভারী করে তোলে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষা, সমাজভাবনা, নারীর অবস্থান, প্রগতিশীলতার অভাবে আপন মা’ও সেই বাধা হতে পারেন। নারী তখনই সম্পূর্ণ মানুষী হতে পারবে যখন সকল নারীশক্তি একত্রিত হয়ে একে অপরের সহযোগিতা করবে, অন‍্যের নানান গুণনিধির প্রশংসা করবে, অনুসরণ করবে, এমনকি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে। আর তা সফলভাবে করতে পারলে তখনই একজন নারী আর একজন নারীর মুক্তিবাহী হয়ে উঠতে পারবে।

“আশাম্বিত জীবনে দীপান্বিত সুচনা”
আশা আমাদের সহজাত স্বভাবের এক বিশেষ অঙ্গ। তাই ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ বলে পরিবারে ও সমাজে, দশে ও দেশে নারীর ভূমিকা, অবস্থান, সমস্যা ও তার সমাধানে গভীরভাবে মনোযোগ দিলে যে উপায় বা পথ উঠে আসে তাই-ই হলো নারীবাদ। পথের ভিন্নতানুযায়ী নারীবাদেরও নানান মুখ হতে পারে এবং তা হয়ও। আর এইসব পথে যেসব সমাধান-সূত্র লব্ধ হয় আসলে তা নারীমুক্তির একেক রূপ। অতএব নারীবাদ ও নারীমুক্তি এক জিনিস নয়। নারীমুক্তি হলো নারীজীবনচর্যার অভিষ্ট লক্ষ্য। তা নারী ভেদে ভিন্ন হতে পারে। আর যে পন্থায় বা মতবাদে বা তত্ত্বে নারী অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছায়, মুক্তির স্বাদ পায়, তা হলো নারীবাদ। নারীমুক্তি বলতে আমরা মেয়েরা ঠিক কী বুঝি? আমার মনে হয় নারীমুক্তির মূলত দুটো দিক– একটা ক্ষয়চিহ্নের দিকপাত আর একটা উত্তরণের জোয়ার। অবাঞ্চিত মানসিক, শারীরিক চাওয়া-পাওয়ার ধারাবাহিকতা থেকেই এই ক্ষয়চিহ্ন, যা ক্রমশ আমাদের পুরুষ তথা সমাজবিদ্বেষী করে গড়ে তোলে। এই বিদ্বেষ আবার আমাদের আত্মবিদ্বেষীও করে তুলতে পারে। আত্মবিদ্বেষের বিপরীতে থাকে আত্মবিশ্বাস। যারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে নারীজীবনের ইতিবাচকতাকে পাথেয় করে এগিয়ে চলে তারা ক্রমেই উত্তরণের পথে মুক্তির স্বাদ পেতে থাকে। যেকোনো আশাবাদী ও ইতিকামী মনোভাব বিশ্বাস করে ক্ষয়ে যাওয়াতেই শেষ কথা নয়, শেষ থেকেও আবার শুরু হয়। এই ক্ষয়চিহ্ন থেকেই আমাদের উত্তরণের নবরূপের নবসোপান গড়ে তুলতে হবে। নারীবাদী ভাবনাগুলিকে আরও সৎ ও স্বচ্ছ হতে হবে, সহজ ও উদার হতে হবে, শানিত ও বলিষ্ঠ করে তুলতে হবে।

“সমাজ একটা সিস্টেম”
মানুষ বলি, পরিবার বলি, সমাজ বলি আর রাষ্ট্রই বলি আসলে এগুলি এক একটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব‍্যবস্থা বা সিস্টেম। প্রতি সিস্টেমের নিজস্বতা আছে। প্রতি সিস্টেম তার নিজস্বতা দিয়ে মানুষকে, সমাজকে, পুঁজিকে, ক্ষমতাকে বশে রাখতে চায়। নারীর শ্রম এক অসামান্য সম্পদ। নারীর পুরুষতান্ত্রিকতাকে মুখবুজে মেনে ও সয়ে নেওয়া ক্ষমতাবাদীদের কাছে মূল্যবান পুঁজি। নারীর যে অপরিমেয় শক্তি তার প্রমাণ আমরা মানবসভ্যতার ইতিহাসে বারংবার পেয়েছি। তাই নারীকে খাঁচায় বন্দি রাখাটা সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক, সে খাঁচা সোনার হোক অথবা লোহার। নারীর ক্ষমতাকে মাথায় রেখে তার পূর্ণাঙ্গ অধিকার স্বীকার করে নিতে হবে সমাজ নামক সিস্টেমকে। নারীকে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। নাহলে বোরখা, রান্নাঘর আর শয়নকক্ষেই নিরবে কেঁদে যাবে নারীশক্তি, নারী প্রতিভা। অগ্রগণ্য সমাজভাবনায় নারীশক্তি ও নারীমুক্তি এই কারণেই সসম্মানে অগ্রাধিকার পায়।
চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *