পুনর্জন্ম কলমে: গীতালি ঘোষ

বন্ধুরা,
মানুষের জীবনে কৌতূহল বস্তুটি এক অনস্বীকার্য সত‍্য… আর তা যদি হয় পুনর্জন্ম বা জন্মান্তর বিষয়ক তাহলে তো কথাই নেই। এ বিষয়ে কিছু গবেষণালব্ধ ভাবনা রূপায়িত করেছিলাম আমি কোনোদিন। যদি সকলের এ বিষয়ে জানার এবং পড়ার ইচ্ছে থাকে, তবে কয়েকটি পর্বে আমি লিখব। সকলের অনুমতি সাপেক্ষে লিখতে চাই, নতুবা নয়। একটু যদি সকলের মতামত জানতে পারি, তবেই শুরু করব। যেহেতু বিষয়টি গম্ভীর, তাই আমার এই বিনীত প্রশ্ন।………..গীতালি ঘোষ

পুনর্জন্ম
কলমে: গীতালি
১. ভূমিকা :

কোনো কোনো ভারতীয় ধর্মে ( যেমন বৌদ্ধ, হিন্দু, শিখ ) পুনর্জন্ম এক অন‍্যতম মূল বিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল। আবার কিছু কিছু ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাসী না, কিন্তু পরজন্মে বিশ্বাস রাখে।

পুনর্জন্ম এক গভীর বিশ্বাসকে নির্দেশ করে, যেখানে বলা হয় যে মানুষের যে কোন একটি দিকের অস্তিত্ব মৃত্যুর পরেও থেকে যায় — সেই দিকটি, আত্মা অথবা মন বা চেতনা, যা-ই হোক না কেন; এই তুরীয় চেতনা পুনরায় জন্ম নেয় অস্তিত্বের চক্রানুসারে। এই স্থানান্তরিকরণের বিশ্বাস বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। কল্পনা করা হয় যে নবজাত শিশুর শরীরে এই চেতনা বা আত্মা প্রবিষ্ট হয়।

পুনর্জন্মের অন‍্য প্রতিশব্দ স্থানান্তরিকরণ ( Transmigration ) এক জীবন (শরীর) থেকে অন‍্য জীবনে ভ্রাম‍্যমানতা সূচিত করে। এই তথ‍্য এবং শব্দ আধুনিক দার্শনিকেরা ব‍্যবহার করেন, এমন কি পাশ্চাত্যেও এর বহুল ব‍্যবহার দেখা যায়। পুনর্জন্মের গ্রীক প্রতিশব্দ metempsychosis ( দেহান্তরগ্রহণ ) অথবা palingenesis ( পুনর্জন্ম বা নবজন্ম ) এই একই বিশ্বাসের সাক্ষ‍্য দেয়।

ভারতের প্রধান ধর্মগুলির অন‍্যতম প্রধান চাবিকাঠি এই পুনর্জন্ম। সংস্কৃত ‘ পুনর্জন্মন্’ কথাটি প্রাচীন হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা জৈন ধর্মগ্রন্থে নানাভাবে পাওয়া যায়, যেমন ‘পুনরাবৃত্তি’, ‘পুনরাজাতি’,
‘পুনর্ভব’,’নিবাত্তিন’,’উপাপত্তি’,’উপ্পাজ্জন’।
এই সব ধর্ম বিশ্বাস করে, পুনর্জন্ম চক্রাকারে এই অন্তহীন সংসারে চলতে থাকে, যতক্ষণ না কেউ আধ‍্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করে চক্রটিকে সমাপ্ত করে স্বাধীন হয়। তারা এই পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তিলাভ করে, চরম ও পরম আধ‍্যাত্মিক মোক্ষ, নির্বাণ, মুক্তি ও কৈবল‍্য লাভ করে।

সাধারণ মানুষের ধারণায় এই বিশ্বাস অনেক সময় দেখা যায়, আবার অনেকেই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বদাই পরজন্মে বিশ্বাসী ছিলেন। উপনিষদের মন্ত্রে দীক্ষিত কবি জন্মান্তর বিশ্বাস করতেন। তাঁর বিশ্বাসের সূত্র ধরে আমরাও এগিয়ে চলি, দেখি পুনর্জন্ম কী এবং কীভাবে চলমান !……………………(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *