ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (তৃতীয় পর্ব) সায়ন্তন ধর
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (তৃতীয় পর্ব)
সায়ন্তন ধর
ভাগ্যক্রমে আমার কর্মস্থলের হেড কোয়ার্টার সেই গুয়াহাটি। তাই আবারো ঐ শহরে যাওয়ার ডাক পড়লো। সেবার দু’টো বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার ছিল, একজন অষ্টম ও অন্যজন একাদশ শ্রেণীতে পড়ত। যতই টুকটাক পরিচয় হোক শহরটির সাথে ওরকম অচেনা শহরে দুটো বাচ্চাকে সামলে যাওয়া এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এরপরের অসুবিধাটা ভাষায়। আমি চাকরিতে নতুন তখন। ঠিকভাবে হিন্দিটা আয়ত্তে আসেনি, এদিকে বাচ্চাদুটি দু’জনই নেপালি। আমি তো ওদের এনজেপিতে খুঁজে পেতেই হিমশিম খেলাম। যাইহোক ট্রেন পৌঁছানোর কথা ছিল রাত আটটায়, পৌঁছালো রাত এগারোটায়। এরমধ্যেই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পল্টনবাজার এলাকায় নেটওয়ার্কও খুবই দুর্বল। কিছুতেই ওলা বা উবের বুক করতে পারলাম না। আমার তখন সত্যিই ভীষণ ভয় করছিল। নিজের জন্য নয়, দায়িত্ব মনে হয় মানুষকে আরও ভীত করে তোলে। অগত্যা অটো নিলাম। গন্তব্য কানাপাড়ায় অবস্থিত রিজিওনাল সায়েন্স সেন্টার। এই যাত্রাপথে কখন যে রাজধানী শহর দিসপুর পেরিয়ে এসেছি বুঝতেই পারিনি, আসলে গুয়াহাটি-দিসপুর দুটি যময শহর। যাইহোক গন্তব্যে ভালোভাবে পৌঁছে স্বস্তি পেলাম। গেস্টহাউসে পৌঁছে দেখি আমাদের দেরি দেখে আর ফোনে না পেয়ে আমার কলিগবন্ধুরাও টেনশন করছিল। যাইহোক পরদিন ঘুম থেকে উঠে আমি অবাক। গেস্টহাউসের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে বৃষ্টিস্নাত পাহাড়, যার মাথায় ঘন সবুজের আচ্ছাদন আর অনাচ্ছাদিত অংশে রাঙামাটির কনট্রাস্ট। সকাল সকাল কিছু কাজে বেরোতে হয়েছিল, অন্যান্যদের কাছে শুনলাম রাস্তার এপারে অসম আর ওপারে মেঘালয়। সারাদিন কাটলো ব্যস্ততায়। মাঝে বিরতিতে পূর্বোত্তরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষদের সাথে পরিচিত হলাম, পরিচিত হলাম তাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতির সাথে। বিকেল নাগাদ ঘুরে দেখলাম সায়েন্স সেন্টারটি, ছবি তুললাম মিগ ২১ এর সাথে। প্রাগৈতিহাসিক উদ্যান ও ভেষজউদ্যানে সময় কাটালাম অনেকক্ষণ। সন্ধ্যা হল, রাত পেরিয়ে ভোর হয়নি তখনো, এবার ফেরার পালা। বাচ্চা দু’টিকে সঙ্গে নিয়ে ওলা বুক করে চলে এলাম কামাক্ষায়। আবারও রাতের অন্ধকারে ব্রহ্মপুত্র দর্শন। স্টেশনে পৌঁছে ওভারব্রীজে উঠতেই ভোর হল, সূর্যের অবলোহিত রশ্মি প্রতিসৃত হয়ে আগেই পৌঁছে গেছে দিগন্তরেখার এপারে। ট্রেনের তখনো দেরী আছে। ওভারব্রীজেই অপেক্ষা করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে কামাক্ষা পাহাড়ের পিছন থেকে উঁকি দিলো লাল সূর্য। এতসুন্দর এক অনাকাঙ্ক্ষিত সূর্যোদয় ছিল এ যাত্রার সবচেয়ে বড় উপহার।
যদিও ফেরার পথে যা আমি পেলাম তা আরও বড় সারপ্রাইজ ছিল। সে গল্প পরের পর্বে শোনাবো।
(ক্রমশঃ)