৷৷ আমি সর্বহারার শিষ্য ৷৷ গৌতম মণ্ডল

আসন্ন নজরুল জয়ন্তীতে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য —

৷৷ আমি সর্বহারার শিষ্য ৷৷
……………………………………..
গৌতম মণ্ডল

আমি রিক্ত ! আমি নিঃস্ব !
আমি সর্বহারার শিষ্য !
আজ দুঃসময়ের , দশ দিকে ঐ
উড়ছেরে চিতা ভস্ম ৷
আমি ক্লিষ্ট , পথ ভ্রষ্ট
আমি অন্ধকারের অন্ধ পথিক
পথ ভোলা নৈরাশ্য !
আমি সর্বহারার শিষ্য ৷৷

আমি প্রতিশ্রুতির , শুষ্ক নদীর
রুক্ষতা বিন্যস্ত ৷
আজ অবিশ্বাসের বিশ্বায়নে
বিস্মিত সারা বিশ্ব ৷
আমি সর্বহারার শিষ্য !

আমি জীর্ণ , আমি দীর্ণ
আমি কুন্তির ছেলে কর্ণ ৷
আমি ঘেন্নার জলে , সাঁতরিয়ে চলি
যন্ত্রণা করি চূর্ণ ৷
আমি আস্তিক , আমি নাস্তিক
আমি ভন্ড সাধুর স্বস্তিক ৷
আমি ধর্মের নামে , ষাঁড়াষাঁড়ি বান
লুটেপুটে খাই দশ দিক ৷

আমি জৈন , আমি হিন্দু
আমি হিল্লোলে ভরা সিন্ধু ৷
আমি কোরাণ – পুরাণ , বাইবেল – গীতা
একটি শিশির বিন্দু ৷
আমি মন্দির , আমি মসজিদ
অমি সাম বেদে গাওয়া সঙ্গীত ৷
আমি ওঙ্কার সুরে , ঝংকারে ফিরি
ঈশান – অগ্নি , নৈঋত ৷

আমি রাত্রির , অভিযাত্রী
আমি তপ্ত চিতার মাদ্রী ৷
আমি দুঃশাসনের , রাজত্বে ঐ
কন্ঠে গরল ধাত্রী ৷
আমি হিংস্র , আমি হায়না
আমি কাটোয়া হইতে , কালনা !
আমি আঁচল ছেঁড়া বেইজ্জতীর
বুক ফাটা মহা কান্না !

আমি স্তব্ধ , বাক্ রুদ্ধ
আমি নির্বাক্ , নিঃস্পন্দ ৷
আমি অন্ধ মুনির বৎস সিন্ধু
যন্ত্রণা শর বিদ্ধ !
আমি গঙ্গা , আমি পদ্মা
আমি সব হারাদের বান্দা ৷
আমি লাল তাজা খুনে বক্ষ রাঙাই
দেখে হাসে মহা যোদ্ধা ৷

আমি সংঘাত , আমি কাল রাত
আমি ভীষ্মের শর – শয্যা ৷
আমি ক্ষুধাতুর হিয়া , লক্ লকে জ্বিহা
শক্তিতে ভরা মজ্জা ৷

আমি তিক্ত , রক্তাক্ত
আমি বিস্বাদে সম্মৃক্ত ৷
আমি রক্ত মাখা খড়্গ হাতে
নাচি উল্লাস নৃত্য !
আমি ভ্রান্ত , উদ্ ভ্রান্ত
আমি তর তাজা প্রাণবন্ত ৷
আমি সবুজ প্রাণের , অবুঝ মনের
চঞ্চল তর , চিত্ত ৷

আমি ঈশ্বর , আমি নশ্বর
আমি অফুরাণ প্রাণ মন্তর ৷
আমি সৃষ্টি সুরার , বসুন্ধরার
শাশ্বত দীপ , অন্তর ৷

আমি বাংলা , আমি গুজরাট
আমি স্বপ্নে বিভোর , দিন – রাত ৷
আমি শস্য – শ্যামল , সবুজ আঁচল
ফুলে – ফলে ভরা , মাঠ – ঘাট ৷

আমি হাস্য , আমি লাস্য
আমি সোনার ভারত বর্ষ ৷
আমি বিশ্ব ভূমির বক্ষ মাঝে
বাল্মীকি মহা – ভাষ্য ৷

আমি সুগ্রীব , মহা উদ্ গ্রীব ৷
আমি রণ সাজে সাজি , গৈরিক ৷
আমি গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরি
মস্ নদে বসা সৈনিক ৷

আমি ত্রস্ত , নি – রস্ত্র
ভয়ে কম্পিত থর দশ দিক ৷
আমি সর্প গরলে , জ্বালা ধরা বিষে
স্নান করি , দিন – দৈনিক ৷

অমি নিঃশ্বাস , শ্বাস – প্রশ্বাস
আমি বোবা জনতার আশ্বাস ৷
আমি কাফেরের সাথে কোলাকুলি করি
ছিন্ন করিয়া নাগ পাশ ৷

আমি সন্দ , উপাসন্দ
আমি লালসার মহা দ্বন্দ্ব ৷
আমি তারকাটা বীণা, ছন্দ বিহীন
বেসুরো নিঃ স্পন্দ ৷
আমি ঊর্বশী , আমি এলোকেশী
আমি জটাধারী শিব , ভোলানাথ ৷
আমি ঝমকি – ঝমকি , উছলি চমকি
তালে – তালে নাচি , দিন – রাত ৷

আমি হাহাকার , আমি উদ্ গার
অমি আহম্মকের চিৎকার ৷
আমি আনার কলির , জ্যান্ত কবর
মহব্বতের ধিৎকার !

আমি অম্বর , পয় গম্বর
আমি বোম্ – বোম্ হর শঙ্কর ৷
আমি করাল বদনী , ডাকিনী – যোগিনী
প্রলয়ঙ্কারী মুদ্ গর !

আমি জম্বু , আমি কাশ্মীর
চির তুষারাবৃত গম্ভীর ৷
আমি গঙ্গা – সিন্ধু , এক জল ঢেউ
ইছামতী, জ লঙ্গীর ৷

আমি রাষ্ট্রের , নৈরাজ্যের
যত ব্যাহেয়া , নির্লজ্জের ৷
আমি জালিমের কাছে জল চেয়ে খাই
চুমু খাই , কাল কেউটের ৷

আমি ইশ্ তেহারের , মশাল জ্বেলে
পায়ে পিষে দলি , জনমত ৷
আমি কসায়ের কাছে ভালোবাসা শিখে
লাশ কাটা ঘরে ছট্ পট্ !

আমি ধান্দা বাজের , ভন্ড মুখোশ
টুটবই ভেঙে টুটবো ৷
আমি সাম্যবাদের গানটাকে
সুর – কন্ঠে ভ’রে , গাইবো ৷

বলো – বন্দে মাতরম্ ,………
সে যে , সত্য সুন্দরম্ ,……..
সে যে , সত্য মঙ্গলম্ ,…,……….
আমি মহা বিশ্বের , মহাকাশ জ্যোতি
নিত্য — অনিত্যম্ ৷
বন্দে মাতরম্ – বন্দে মাতরম্ -………..
বন্দে মাতরম্ ৷৷
………………………………………………..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *