প্রসঙ্গ-তাদের কথা,,,,, কলমে-নিতু চৌধুরী,,,,,,
প্রসঙ্গ-তাদের কথা,,,,,
কলমে-নিতু চৌধুরী,,,,,,
কবির কলম কেবল পাঠকের বিনোদনের জন্য না হয়ে কখনও কখনও সমাজ সচেতনতার হাতিয়ার হয়ে উঠতে চায়। একজন লেখিকা হিসেবে আমার ভাবনা সবসময়ই নারী কেন্দ্রিক তা নয়, তবে ইদানিং কিছু কিছু মেয়েদের অবস্থা নিয়ে একটু ভাবতেই হচ্ছে নারী হিসেবে তদুপরি সমাজের অংশ হিসেবে। আজ যেমন একদল মেয়ে প্লেন চালাচ্ছে, কর্পোরেট হাউস সামলাচ্ছে, কম্পিউটারে কাজ করছে বা কিছু মেয়ে হাউজ ওয়াইফ হয়ে মা দুর্গার মতো দশহাত দিয়ে সংসারের পুরো চাকাটাই সামলাচছে ।ব্যতিক্রমী কিছু মেয়েকেও দেখি যারা উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে নিজেকে পণ্য করেছে কিন্ত তারা তো পতিতা নয় কারণ তারা উপর তলার মানুষ, উপর মহলে যাতায়াত করে থুড়ি তারা তো সমাজের সভ্য নাগরিক। তাদের কথা না বলাই ভালো।
আজ আমার কলম শুধু সেই সব মেয়েদের কথাই বলবে যারা হয়তো পরিস্থিতির কারণে পতিতা হতে বাধ্য হয়েছে।যারা হয়তো বা স্বপ্ন ভাঙ্গার মাশুল দিচ্ছে বা সংসারের উন্নয়নের জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। যাদের কাছে ভোট চাইতে যেতে নেতা নেত্রীদের লজ্জা লাগেনা, তাদের ভোটে জিতে গদিতে বসতেও লজ্জা লাগেনা, লজ্জা তো কেবল লাগে তাদের কথা ভাবতে সোজা কথায় বলতে গেলে তাদের উন্নয়নের কথা ভাবতে কারণ তারা তো পতিতা, সমাজের কাছে অচছুৎ ,সমাজের বাইরে পতিতা পল্লি তে তাদের বাস,কিছু টাকার জন্য বা দুমুঠো ভাতের জন্য নিজের দেহ বিক্রি করে। কখনও কখনও কেউ কেউ একথাও বলে আর কোন কাজ পেলি না বাপু?শেষ মেশ এই কাজ। বলতে আমরা সবাই পারি করতে পারি কি কিছু?নিতে পারি কি কোন দায়?ভাবতে কি চায় কেন মেয়ে গুলো এই কাজটাকেই বেছে নিলো?
এই মহামারী কালে কমবেশি সব স্তরের মানুষের কথাই সবাই ভাবছে কিন্ত তাদের কথা ভাবতে গেলেই আমাদের কপাল কুঁচকে যায় আর কেউ তাদের সমব্যথী হবার চেষ্টা করলে তাকেও তিরস্কার করতে ছাড়ি না কারণ আমরা শিক্ষিত, ভদ্র তথাকথিত সমাজের গণ্যমান্য মানুষ জন ভাই। শুনেছি পতিতা পল্লির মাটি ছাড়া মা দুর্গার মূর্তি গড়া যায় না তাহলে এই জ্যান্ত মা দুর্গা দের কথা ভাবতে গেলেই আমাদের এতো ঘৃণা, সংশয় কেন?শুধু কেন তাদের কেই সহ্য করতে হবে তিরস্কার? আর যারা তাদের সঙ্গে রাতের বেলা খোশ মেজাজে সময় কাটাই তারা তাহলে কেন অচছুৎ বা অসপৃশ্য নয়? তাদের সমাজে থাকার অধিকার কি করে জন্মায়?অদ্ভুত এই সমাজ ব্যবস্থা দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় এমন সমাজের অংশ না হলেই বোধ হয় ভালো হতো।আজকাল অবশ্য অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা সেই সমস্ত মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে শোনা যায়।কুর্নিশ জানাই সেই সমস্ত সামাজিক দায়বদ্ধ নাগরিক দের।
কিছু লাইন মাথায় আসছে তাদের অবস্থার পরি প্রেক্ষিতে,,,,,,,,,,,,,
মুখের উপর মুখোশ এঁটে বেঁধেছে খেলাঘর
জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত হচ্ছে সে জেরবার,
প্রতি রাতের নির্যাতন, নতুন ভোরের সূচনা
বেঁচে থাকার আশায় সইতে থাকা শারীরিক যন্ত্রনা।
প্রতি রাতে বিছানাতে ছিঁড়ে কুঁড়ে হচ্ছে স্বপ্ন শেষ
ঘর বাঁধার আশায় ছেড়েছিলো সে নিজের দেশ,
স্বামী হবো বলেছিলো কেউ,খেলেছিলো বিয়ে খেলা
আজ তার ঘরে চলে প্রতিনিয়ত মানুষ বদল পালা।
বাঁচার লড়াইয়ে নিজেকে বিকিয়ে চলে স্বপ্নের বেচা কেনা
ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরণ হবে?উত্তর আজও অজানা।
রাতে যে সভ্য মানুষের দল রজনী গন্ধা ভেবে কেনে
সকাল হলেই বাসি ফুলের মতো ছুঁড়ে ফেলে এক কোনে,
ভালোবাসার মোহ,নিজের ঘর,সুখী সংসারের আশা
হারিয়েছে স্বপ্ন সব,বেছে নিয়েছে এই পেশা।
এরকম সত্যি গল্প, এ অঞ্চলে শোনা যায় ঘরে ঘরে
সুখী রমণীর সুখের সংসার, দেহের পসরা ফেরি করে।
আমার কলমের মাধ্যমে আমি কেবল তাদের কথা সকলকে জানানোর চেষ্টাই করলাম পাঠক গন। নিরীহ মেয়ে গুলির পাশে দাঁড়াতে এর বেশি আর কিই বা করতে পারি?তবে চেষ্টা তো চালিয়ে যেতেই পারি উপায় বার করার তাই না বন্ধুরা।
সমাপ্ত