কার্ল মার্কস্ এর দর্শনের পরবর্তী অংশ—- / কলমে ছন্দা চ্যাটার্জি
কার্ল মার্কস্ এর দর্শনের পরবর্তী অংশ—- / কলমে ছন্দা চ্যাটার্জি
আধুনিক যুগের অবস্তুবাদী য়ুরোপীয় দর্শনের চরম বিকাশ ঘটেছিল হেগেলের দর্শনে।আর সমগ্র মানবেতিহাসের বস্তুবাদী দর্শনের চরম বিকাশ ঘটেছিল মার্কস্ এর দর্শনে।ভাববাদী ধারা সমাজবিদ্যায় বিভ্রান্তি এবং রহস্যবাদ ছাড়া আর কিছু সৃষ্টি করেনি।তা কেবল ঈশ্বর,পরমাত্মা,অজ্ঞেয়র ওপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা উৎপাদন ছাড়া সমাজব্যবস্থা সম্বন্ধে উন্নত কোন শিক্ষার পথ দেখাতে পারেনি।কিন্তু মার্কসীয় দর্শনের শিক্ষা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। একই রকম চিন্তন কিন্তু কবীরের দোঁহাতে দেখি আমরা।
-“না কুছ দেখা ভাব ভজনমে
না কুছ দেখা পোথিমে
কহৈঁ কবীর শুনো ভাই সন্তো
যো দেখা সো রোটিমে।”-
আশ্চর্য লাগে যখন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যও লেখেন-“পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”-
কিংবা-“ভূখে ভজন না হয় গোপালা,লে লে আপনি কন্ঠীমালা।”-
বস্তুবাদ যত ভালো ভাবে মানবজাতির বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করতে পারে ভাববাদ তা পারেনা।মার্কস্ এর মতে–
-“বাবা আদম,বিবি ইভ,অথবা ঋষি,মুনি,বেশ্যা,খুনি,কুষ্ঠরোগী সকলকেই বৃদ্ধ ঈশ্বর একই সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন।তার সঙ্গে ক্ষুধা,দারিদ্র,যৌনরোগ প্রভৃতি পাপীর দণ্ড দানের নিমিত্ত সৃষ্টি করেছেন।যাতে মানুষ পাপও করবে এবং একই সঙ্গে ন্যায় বিচারের নাটকও চলবে।আর তিনি নেপথ্যে থেকে দণ্ডবিধির ধান করবেন।পাপসৃষ্টি ও দণ্ডবিধান একই সঙ্গে!কী নির্মম তামাসা!!আবার তা একদিনের জন্য নয়, অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এই প্রহসনলীলা চলতেই থাকবে।এই তো ঈশ্বর,যাকে কিনা ভাববাদী দার্শনিক সদর দিয়ে নয়,খিড়কি দিয়ে যোগ প্রাণায়ামের মাধ্যমে ভক্ত হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন।
হেগেলের দর্শনের মূল তত্ত্ব গতিবাদ।মার্কস্ একে সমাজসংস্লিষ্ট সর্বত্র প্রসারিত করেছেন।বাদ,প্রতিবাদ,সংবাদের দৃষ্টান্ত রাহুল সাংকৃত্যায়ণের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ গ্রন্থে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা আছে।বস্তু সদা পরিবর্তনশীল।এ থেকেই পরিস্থিতির সঙ্গে বিরোধ বা দ্বন্দ্ব শুরু হয়।তা থেকেই দ্বন্দ্বাত্মক পরিবর্তন হয়।
রাহুল সাংকৃত্যায়ণ তাই বলেছেন-“যখন আমরা ভাববাদের গন্ধর্বলোক থেকে নেমে এসে বাস্তব জগতে প্রবেশ করি,তখন দেখি বস্তু জগৎ মনের সৃষ্টি নয়,মনই বস্তুর উপাদান।
রাহুলজী তাঁর দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ গ্রন্থে কার্ল মার্কসকে উল্লেখ করে তাই বলেছেন-“মার্কসবাদ সাপেক্ষ জ্ঞানকে সম্পূর্ণ সম্ভব বলে মানে,যার দ্বারা বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সমর্থন সম্ভব হয়।
রাহুল সাংকৃত্যায়ণ তাঁর দর্শন দিগ্ দর্শন গ্রন্থটিতে অতীব নিষ্ঠার সঙ্গে মার্কসীয় দর্শনের ব্যাখ্যা করেছেন।বস্তুত মার্কসীয় দর্শনের পাঠ অত সহজ নয়।রাহুলজী তবু সাধারণ মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করার জন্য সহজবোধ্য ভাষায় গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।আমি এই গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেছি মাত্র।