গ্রামগঞ্জ আর ফাইন —- কলমে: শুভা গাঙ্গুলি
শিরনাম: গ্রামগঞ্জ আর ফাইন
কলমে: শুভা গাঙ্গুলি
চোত বোশেখের চড়া রোদে
মেঠো রাস্তার ধুলো উডিয়ে শস্য বোঝাই গরুর গাড়ী চলে
গাড়োয়ান ভিজে গামছায় মুখ মুছে
ঢকঢক করে মাটির কলসের ঠাণ্ডা জল খায়,
বলে চল চল,অনেকটা পথ যেতে হবে,
এখনও পথেপ্রান্তরে অনেক অনেক গ্রাম এমনই পড়ে আছে , একদম সে যুগের ছবির মতোই,
মেঠো পথ, শ্যামল প্রান্তর, ধানের গোলা, খড়ের চালে লাউ, কুমড়ো , শিম, সসা, পুকুরের পাড়, গরুদের স্নান করাচ্ছে মদন খুডো,
কে যায়?
আমি খুডো চাটুজ্যেদের ছোটো ছেলে,অমিত,
অ, কবে এলে তুমি? কোন দ্যাশে যেন গেছিলে তুমি?
অক্সফোর্ড চাচা,
পাশ করে গেছো?
গেছি গো তোমাদের আশীর্বাদে।
কথোপকথন হলো একজন উচ্চশিক্ষিত প্রফেসর আর একজন শ্রমজীবীর শালীনতা বজায় রেখে।
এ কোন গল্পের দেশ নয়, সত্যই এখনও এমন দেশ আছে বৈকি।
সবাই সাবধানে ছিলে তো চাচা
লক ডাউনে?
আমাদের এখানে ও রোগ ঢোকে নি গো দাদাবাবু।
এখানে তো বাইরের লোক ঢোকেনা
সবই নিজেদের গেরামের,বাজার তো
সবই এখানে পাওয়া যায়
কতটুকুই বা চাহিদা আমাদের,
স্কুল তো বন্ধই আছে সব বাডীতে পড়ে।
সে কি গো?
হ্যাঁ গো দাদা, পরিযায়ী নেই তো।
সমস্ত গ্রাম নিজেদের মতো চলছে
কারো মুখে মাস্ক নেই,কিন্তু আমি তো বাইরে থেকে এসেছি তবে আমাকে আইসোলেশনে রেখেছিলো ১৫ দিন। তাও এরা সম্পূর্ণ বিছিন্ন তো নয়।
কি করে সম্ভব?
সন্ধ্যা নামছে দূরে দূরে শঙ্খের আওয়াজ,মন্দিরে মন্দিরে ঘণ্টাধ্বণি,পাখীরা ফিরছে কুলায় বড পবিত্র লাগে এই সময় টা, রাস্তায় চলতে চলতে চারিদিকে তাকালো অমিত, চণ্ডীমণ্ডপে বসে আছেন অনেকেই , পাশেই পুকুর ,ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, গল্প গুজব চলছে, কারো মুখে মাস্ক নেই তবুও দূরে দূরে বসেছেন, একটা টিভি সেট দিয়েছেন কেউ,সবাই তাই দেখছে, তাস খেলছে না কেউ।
বাডী আসার পথে মণীন্দ্র জ্যাঠার কাছে জানতে হবে এই গ্রামে আতঙ্ক নেই কেন?
জ্যাঠা বললেন তুমি আতঙ্ক চাইছো তো,না এখানে আতঙ্ক নেই,কারণ আমরা সমস্ত নিয়ম মেনেই রয়েছি, এখানে অসুস্থ কেউ নেই কারণ গ্রামে বাইরের কেউ আসতে পারেনি, আসতে দেওয়া হয়নি, কারণ সবাই জানে মানুষ বাহিত এই রোগ মানুষের দ্বারাই ছডায়, তাই কোন রকম ভাবেই কেউ আসতে পারেনি।এলেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, ভিটামিন সি এখানে পর্যাপ্ত তাই, ভেবো না অর্ধশিক্ষিত দরিদ্র এই মানুষজন নিজেদের ভালোমন্দ খেয়াল রাখতে জানে না, তারা সবই জানে তাদের মতন করে।
ওনার বাডী থেকে বেরহয়ে রাস্তায় নামলো অমিত, দূরে একটা গরুরগাডী আসছে,টুং টাং বাজছে
ঘণ্টা গরুর গলায়, একটা হারিকেন দুলছে তালে তালে গান গাইছে গাডোয়ান , আপন মনে চলতে চলতে ধাক্কা লাগলো অমিতের সাথে গরুর,গাডোয়ান নেমে এলো গাড়ী থেকে, ও ছোটকর্তা জানো তো গেরামের নিয়ম, যদি তুমি গরুরগাডী চাপা পড় , যদি তুমি গরুরগাডী চাপা পডো তাহলে তোমাকে ৫০ট্যাকা জরিমানা দিতে হবে, কারণ তুমি এত বোকা মানুষ যে তুমি গরুরগাডীতেও চাপা পডো।
একগাল হেসে অমিত কে গাডীতে তুলে নিলো রসুল মিঙা কয়েক বিঘা জমির মালিক একজন গ্রামের মানুষ।।