#গল্পের নাম : বসন্ত # কলমে : মালা মুখোপাধ্যায়

#গল্পের নাম : বসন্ত

# কলমে : মালা মুখোপাধ্যায়

–দে, একহাজার টাকা আগে দে।
–কোথায় পাবো?
–বাজি ?
–না না বিনা পয়সায় বাজি।
–হবে না। অতটা রিস্ক নেবো।
–আগে , দেবো না। করে দেখা। আমার দাদা থানার ও. সি., তোকে ধরে ফেলবে।
-বাজি ধর। দেখিয়ে দেবো ।তোর দাদার সামনে তোর সিঁথিতে লাল আবির পরাবো।
–জেলে যেতে হবে।

আমরা সব বন্ধুরা মানে এই জনা পাঁচ ছয় বিকালে টিফিন খেতে যাওয়ার আগে মন দিয়ে শুনছি সুলেখার কথা বেশ জম্পেশ করে, দারুণ মেজাজে।এইসব গল্প হলে সব কোথা থেকে টুকটাক করে এসে যোগ দেয় ,প্রেমের গন্ধ পায় বোধ হয়।

টালিগঞ্জের কাছে একটি লেডিস হোস্টেলে বেশ মজাতেই দিন কাটায় এই কলেজে পড়া মেয়েগুলো।
পড়ার মাঝে মাঝে প্রেমের গল্প পায়েসের মধ্যে কাজু পাওয়ার আনন্দের মতো।
সূর্য ডোবার আগে, মানে বিকালে টিফিন খেতে যাওয়ার আগে একটুক্ষণ আড্ডা চলে, এই যেমন কত কি,কলেজ যেতে আসতে কার কার চোখে চোখ পড়ল,কে কাকে বার বার ফলো করে,কে কে সত্যি সত্যিই চুটিয়ে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে,বেশ রসিয়ে রসিয়ে এ ওর টা শোনে,আজ সবাই গোল হয়ে শুনছে সুলেখার কথা,সব বন্ধুদের মধ্যে ওর কাছের বন্ধু লতিকা আর রাই বেশি প্রশ্ন করে চলেছে, ওদের আগ্রহটা একটু বেশি, বাকিরা সব গায়ে গা দিয়ে চেপ্টে সুলেখার বেডের সামনে দাঁড়িয়ে। সমুদ্রের ঢেউ দেখার মতো গলা বাড়িয়ে আঁচ নিতে চায় সুলেখার মনের ঢেউ সকলে, আরও বুঝতে চাইছে, বসন্ত শুরু হয়েছে,কলেজে পড়া মেয়ে সব, তাদের শরীরেও বসন্ত,মনেও বসন্ত,তাই এই বসন্তের বিকালে বেশ কয়েকটি মেয়ে গলা বাড়িয়ে চোখ চিকচিক করে শুনতে থাকে সুলেখার কথা। সুলেখার সেই দিনের কথা, সেই দিনের কথা বলতে,যেদিন ,যেদিন মানে গতবারের দোলের দিনের ঘটনা,ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে ,ওর জাঁদরেল দাদা, একেবারে থানার বড়বাবু, সেই দাদার সামনে সুলেখার বাড়িতে গিয়ে সুলেখার সিঁথিতে লাল আবির দেবেই দেবে। সুলেখা বলেছে এতো সাহস তার বয়ফ্রেন্ডের হবে না, কিন্তু সে বাজি ধরতে চায়, হাজার টাকার বাজি।পরাবেই পরাবে। এতো মিষ্টি একটা প্রেমের ম ম গন্ধ ওরা কেউ কি ছাড়ে? ফিসফিস করে বলতে শুরু করে,
–তারপর ? সুলেখা পেরেছিল তোকে —?
–বাজিতে জিতেছিল?তোর —-?
–বয়?
–ফ্রেন্ড?

হা হা হা হা হা করে হেসে গড়িয়ে পড়ে সুলেখা। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তুই হচ্ছিস কি বলবো ? একেবারে না খুব খুব —
–খারাপ। তবুও শুনবো তোর মুখেই। শুরু যখন করেছিস , শেষ করবি তো। এটা ভালো না। সেই হাফ সিনেমা দেখতে দেখতে কারেন্ট চলে যাওয়ার মতো অবস্থা।
–লোডশেডিং করলে চলবে না। একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
-অন্ কর সুলেখা। আমার নাম লতিকা । আমি না শোনা পর্যন্ত ছাড়বো না।
–বাজিতে কে জিতলো? মাথায় আবির দিতে পেরেছিল? খুব ব্যস্ত হয়ে জানতে চায় রাই।
–দাঁড়া বলছি।সব চুপ করে থাকবি।
-সত্যিটা বলবি কিন্তু।
–দাদা আমার কলেজ থেকে বেরোলেই বিয়ে দেবে।
-মানে?
-বুদ্ধু,থার্ড ইয়ার হয়ে গেলে। হ্যাঁ,যেটা বলছিলাম,ওর সঙ্গে কিছুতেই দেবে না। আর ‘ও’ বলেছে ,তোর ইচ্ছা না থাকলে চলে যা।আর দাদা জোর করে বিয়ে দিলে তুলে আনবো।
–আর তোর দাদা ও.সি.,যুদ্ধ লেগে যাবে রে।
-আরে সেই ভয়েই তো বাজিটা ধরলাম। যদি না পারে ; হেরে যায়।
–মানে ? বিয়ে করবি না?
-আরে না লতিকা, বিয়ে ওকেই —
–তারপর?
–তারপর?
এই মেয়ে গুলোকে নিয়ে আর পারি না। সুলেখা আদরের সুরে বলে।
–তাড়াতাড়ি।লতিকা বলে।
–এই ,শান্ত হ, আমার নিয়ে তোদের অত কি?
–বল—–
–শোন্। চুপচাপ শুনে যা,সুলেখা একটু নড়েচড়ে বসে, আবার শুরু করে বলতে, দোলের দিন দাদা একটু পরে ডিউটি যাবে বলে পেপার পড়ছিল।আর দাদার একদল বন্ধু এসে দাদাকে রঙ মাখাতে আসে। আমি ছিলাম ছাদে। কী সাহস! এমন করে রঙ মেখেছে আমি চিনতেই পারছিলাম না। ওঃ সে কী রঙ!
–মনে?না বাইরে?রাই বলে আর হেসে গড়িয়ে পড়ে।
–থাম্,আসল জায়গায় এসে গোলমাল করিস না।লতিকা বাকিদের থামিয়ে দেয়।
–গতবছরের কথা।আমি সেকেন্ড ইয়ারে। এইতো সামনে দোল। সেই রঙিন ঘটনা স্বপ্নের মতো —-
–শুধু ছাদে তোরা দুইজন!
–হ্যাঁ, কয়েক সেকেন্ড। দাদার ভয়ে বেশিক্ষণ থাকে নি। ওদের বন্ধুদের সঙ্গে মিশে বেরিয়ে গেল।
–তুই হেরে গেলি?
–তোকে টাকা দিতে হলো?
হাজার হাজার ভোল্টের আলো সারা মুখে ফ্লাস হচ্ছে সুলেখার।
আমরা সবাই একসঙ্গে জিজ্ঞেস করি, তোরা তো দু’জনে শুধুই একা তখন। তা কি শুধুই সিঁথিতে আবির?
–কয়েক সেকেন্ড লতিকা। সুলেখার কথায় আফসোস।
–ওহোঃ ভূমিকম্প তো কয়েক সেকেন্ডই হয় সু—
–লেখা।আর একজন যোগ করে।
–বল, বলতেই হবে।আর কি কি? মানে –
–কে আগে চুমু খেলি তখন? পাশ থেকে আর একজন বলে ওঠে।
–সত্যি বল সুলেখা।চাপবি না। লতিকা বলে।
–চুমু তো হয়েছেই।রাই ফোড়ন কাটে।
হঠাৎ কী হলো কী জানি সুলেখা দু’হাতে মুখ ঢেকে কোটি কোটি বিদ্যুতের ফ্লাস মুখে মনে শরীরে খেলিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে, জানি না, যাঃ !

২৯,২,২০২০,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *