সম্পাদকের কলমে কিছু কথা — সম্পাদকীয় কলমে, গীতশ্রী সিনহা

সম্পাদকীয়

এবারে একটু অন্যরকম ভাবে ফিরলাম সম্পাদকীয় কলমে ।
একধরনের পত্রিকা আছে যা আমরা পথেঘাটে সময় কাটাবার জন্য কিনি, পড়ি। পড়া হয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দি, যদি না কোনো সর্তক ব্যক্তি হাতে তুলে দিয়ে বাধিত বা বিব্রত করেন। আর একধরনের পত্রিকা আছে যা সংগ্রহ করতে প্রচুর তল্লাশি চালাতে হয়। কিন্তু একবার হাতে পেলে শুধুমাত্র চোখ বুলিয়ে সরিয়ে রাখি না। মন দিয়ে পড়ি, এবং সযত্নে গচ্ছিত রাখি তোরঙ্গে ভাঁজে ভাঁজে। যে সব পত্রিকা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত তাদের স্থান মূল্যবান। মার্কিন দেশে চলতি কালের ইংরেজি বুলিতে এদের বলা হয়ে থাকে ‘ লিটিল ম্যাগাজিন ‘।
লিটিল কেন? আকারে ছোট বলে? প্রচারে ক্ষুদ্র বলে? নাকি বেশি দিন বাঁচে না বলে? সব ক’টাই সত্য, কিন্তু ঐ ‘ ছোট ‘ বিশেষণটি অনেকখানি অর্থবহ।
প্রথমত, কথাটা একটা প্রতিবাদ, এক জোড়া মলাটের মধ্যে সব কিছুর আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বহুলতম প্রচারের ব্যাপকতম মাধ্যমিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। লিটিল ম্যাগাজিন বললেই বোঝা যায় যে, জনপ্রিয়তার কলঙ্ক একে কখনো ছোঁবে না, নগদ মূল্যে বড়োবাজারে বিকোবে না কোনোদিন। কিন্তু কোনো একদিন এর একটি পুরোনো সংখ্যার জন্য গুণীসমাজে উৎসুকভাব জেগে ওঠে। সেটা সম্ভব হয়, লিটিল ম্যাগাজিন মন জুগিয়ে চলতে শেখেনি, মনকে জাগাতে শিখেছে। একসময় সাহিত্যের ক্লান্ত শিরায় তরুণ রক্ত বইয়ে দিয়েছিল… নিন্দা, নির্যাতন বা ধনক্ষয়ে প্রতিহত না হয়ে। এই সাহস, নিষ্ঠা, গতির একবিমুখতা,সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা, এই হচ্ছে লিটিল ম্যাগাজিনের মূলধর্ম। টিকে থাকার লড়াই আছে, আকারেও মোটাসোটা হবার সম্ভবনা কম। কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর। ভালো লেখা বেশি জন্মায় না, সত্যিকারের নতুন লেখা আরও বিরল, আর শুধু দুর্লভের সন্ধানী হলে পৃষ্ঠা এবং পাঠক সংখ্যা স্বতঃই কমে আসে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি সাহিত্যপত্র, খাঁটি সাহিত্যের প্রত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন তারই আরও ছিপছিপে এবং ব্যঞ্জনাবহ নাম।

এই প্রসঙ্গ সাথে নিয়ে আগামী সংখ্যায় ফিরবো। আজ শুধু ছুঁয়ে গেলাম।
ভালোবাসা শুভকামনার আলিঙ্গনে আবদ্ধ আমরা পরস্পর পরস্পরের অনুভূতির সাথে।
সম্পাদকীয় কলমে, গীতশ্রী সিনহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *