# দিবস কেন যে এলো না # – ২ কলমে – অরণ্যানী

# দিবস কেন যে এলো না # – ২
কলমে – অরণ্যানী
নীলম, লাবণ্য আর পিঙ্কির মধ্যে পিঙ্কির মা চাকরি করতে বেরিয়ে যায়। তাই নীলম আর লাবণ্য দের বাড়ির মাঝখানে দু’চারটে গাছ আর আগাছার আড়ালে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে কুসুমদি আর ঝিলিকদি ছুটির দিনে দুপুরে লুকিয়ে ফিস্ট করার আয়োজন করত। কুসুমদির মতে, প্রেম যখন করছি, বিয়ে তো করতেই হবে। তাই এখন থেকেই রান্নাটা ওদের শিখে নিতে হবে। চঞ্চলদা তো মহা খুশি। ঝিলিকদির সঙ্গে অনেক প্রেম করা যাবে। আর কুসুমের মনে অন্য কল্পনা। শ্বশুর শ্বাশুরী ননদ সহ অত বড় বাড়ির বউ হবে, শ্বাশুরীকে খুশি করতে হবে, বিদ্যুৎদাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে, আরো কত কী। কিন্তু মাত্র তিন জনে কি আর ফিস্ট হয়? আর নিজেরাই যদি রাঁধে, তবে রেঁধে খাওয়ানো হবে কাকে? তাই নীলম, লাবণ্য, পিঙ্কির ডাক পড়ত দুই দিদির ফিস্টে। কিন্তু ছোট হলে কী হবে, ওরা তো ছোট ভাবতই না নিজেদের। তাই কুসুমের আপত্তি সত্ত্বেও খুন্তি নাড়াতে অংশ নিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই চঞ্চলদাই ছেলে হয়ে ফিস্টের সরঞ্জাম বাড়ি থেকে চুরি করা, রান্না করা, সবকিছুর ভার নিজের হাতে তুলে নিত। বাকিরা শুধু তার নির্দেশ মতো চলত। এই নিয়ে কুসুমের সঙ্গে বিরোধ বাধত অনেক সময়। কুসুমের দাবি, বড় মেয়েরাই তো রান্না করবে। ছেলে হয়ে চঞ্চল এ কী কাজ করছে। আর ঝিলিকদির এতে সুবিধাই হতো। কারণ সংসারের কাজ কর্মকে ঝিলিকদি ভীষণ ভয় পেত। ফর্সা রূপসী কন্যা বলে ওর মা ও ওকে আগুনের তাতে যেতে দিত না।
খুব মজা লাগত নীলম লাবণ্য দের। কুসুমদি বিজ্ঞের মতো ঝিলিকদিকে বলত, তোকে তো বাড়ির অমতে বিয়ে করতে হবে। তাই শ্বাশুরীও বোধহয় থাকবে না। রান্নাটা শিখে নেয়া খুব দরকার তোর। নীলমরা আশায় আশায় থাকত, কবে ঝিলিকদি আর চঞ্চলদা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে গোপনে। না জানি পাড়ায় কত নাটকই হবে সেদিন। মাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন ঝিলিক কুসুমরা! তখন থেকেই ভবিষ্যৎ জীবনের এতো পরিকল্পনা ওদের !
আসলে সময়টা তো অনেক পেছনে ফেলে আসা দিনের। আজ যার সত্তর বছর বয়স, তখন সে আট বছরের বালিকা। ফলে সেযুগের সংস্কারে অমনই মানসিকতা। অবশ্যই সব পরিবারের তা নয়। কুসুমের বাবা মা চাইত, তাদের একমাত্র মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হোক। কারণ বেশ কয়েক পুরুষের শিক্ষিত পরিবার ওদের। ছেলে যখন হয়নি, তখন একটি সন্তানকে দিয়েই ছেলের সখ পূরণ করতে চাইতেন ওরা। সব শ্রেণীর সব রকম পরিবারই তো তখন শহরেও একই পাড়ায় বাস করত। ফলে পারস্পরিক মেলামেশার মধ্যে দিয়ে এক শ্রেণীর প্রভাব অন্য শ্রেণীর ছেলে মেয়েদের মধ্যেও পড়ত। সেছাড়া পয়সা থাকলেই সব পরিবার কয়েক জেনারেশনের লেখাপড়ার ডিগ্রি ধারিও ছিল না। ফলে বৈষম্যের মধ্যেই একরকম সাম্য ছিল।
(চলবে)
কলমে – অরণ্যানী