#ধারাবাহিক #রায় বাড়ির অন্দরমহল পর্ব-৫ ছবি ব্যানার্জী

#ধারাবাহিক
#রায় বাড়ির অন্দরমহল
পর্ব-৫
ছবি ব্যানার্জী

পুটু শাশুড়িমার কথামতো গয়নার বাক্সটা এনে দিল।বেম্ভ ঠাকরুন বলল—বাড়ির কাজের লোকজন,আমার চার নাতনি আর আশ্রিত আত্মীয়দের সবাইকে ডাকো।রাধু আর শশীকে বলো আমাকে একটু ঠেসান দিয়ে বসিয়ে দেবে।রাধাকান্ত এসে বলল–মা এসব তুমি কি করছ?–বাবা রাধু আমি জানি আমি মরলে এসব তোদেরই থাকবে। রাধাকান্ত বলল–এখনই চলে যাওয়ার কথা ভাবছ কেন মা?–চলে যেতে কি মন চাই বাবা।কিন্তু আমি যে নিজে কানে সেই ডাক শুনতে পাচ্ছি। তাই তো ইচ্ছে করছে আমি নিজের হাতে সবাইকে কিছু কিছু গয়না তুলে দিই। তুই আর বাধা দিসনা বাবা। বৌমাকে বল সিন্দুকে একটা ছোট পুটুলিতে টাকাটাও বের করে দিতে। রাধাকান্তবলল–বেশ মা তোমার যা মন চায় করো। ততক্ষণে সবাই এসে ভীড় করে দাঁড়িয়েছে।ব্রহ্মময়ী তার দুরসম্পর্কের দুই ভাইঝি আর দুই বোনঝিকে চার জোড়া পাশা আর একগাছা করে দেড়ভরি ওজনের সলিড সোনার চুড়ি দিয়ে বলল–খাওয়া পরা আর আশ্রয় ছাড়া তোদের কখনও কিছু দিইনি। এই গয়না তোদের বিপদে আপদে কাজে দেবে। রাইমণিকে একটা আংটি আর একশো টাকা দিল। কাজের লোকজন দের হাতে দুশো করে টাকা দিল। চার নাতনিকে একটা করে ভারি সোনার গয়না দিয়ে বৌমাকে বলল–বৌমা আমার নাতিকে আলাদা করে কিছু দিলাম না। ওটা তুমিই পরে দিও।বাদ বাকি গয়না সব তোমার।তবে আমার অনুরোধ থাকল আমার গয়না পাঁচ ভাগের এক ভাগ করে ভবিষ্যতে আমার চার নাতনিকে কম বেশি বিবেচনা করে দিও।আর রাধু তোকে বলছি–তোর তিন মেয়ে এখন সংসার ধর্ম করছে বটে।বড়টার জন্য ভাবিস না।কিন্তু বিশাখা ললিতার ভাগ্য কতদিন ঠিক থাকবে জানি না।সেরকম হলে ওদের ভবিষ্যতে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থাটুকু করে দিস।কথাটা শুনে আরও একবার পুটুর বুকটা কেঁপে উঠল।

পুটু শাশুড়িমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করেছিল।তাকে জিলিপি এনে দিলে খুব আগ্রহ ভরে একটু খেয়েই রেখে দিল।পরদিন পুটু রাইমণির সাহায্য নিয়ে শাশুড়িমাকে যত্ন করে স্নান করালো।তারপর তাকে শক্ত একটা চাদরে শুয়ে দিয়ে সবাই মিলে ধরাধরি করে ঠাকুর মন্দিরে নিয়ে এসে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে সবাই ধরে থাকল।ব্রহ্মময়ী দু হাত জড়ো করে বলল-ঠাকুর পরজন্মে যেন এরকম একটা সোনার সংসারে আমি জন্ম নিতে পারি।আমার ডালপালা শাখা প্রশাখাদের তুমি দীর্ঘ পরমায়ু আর সুখ শান্তিতে রেখো।

এর ঠিক তিনদিন পর বেলা দুটোর সময় ব্রহ্মময়ী ছেলে বৌ নাতি নাতনিদের হাতে গঙ্গাজল খেয়ে সজ্ঞানে ইহলোক ত্যাগ করলেন।শেষ দুদিন শুধু দুধ আর মিছরির জল ছাড়া কিছু খেতে পারেন নি।তবে মৃত্যুর দিন ও যথারীতি বৌমাকে বলেছিলেন–বৌমা আমার কাছে হাঁ করে বসে না থেকে খাওয়া দাওয়ার পাটটা চুকিয়ে নাও।সেদিনও শাশুড়িমার তাড়নায় তড়িঘড়ি বেলা একটার আগেই সবাই খাওয়া শেষ করল।শুধু রাধাকান্ত নামমাত্র খেয়ে মায়ের পাশে বসে থাকল।বাড়িতে তখন লোকে লোকারন্য।রায় বাড়িতে একটা যুগের অবসান ঘটল।সবাই ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল।প্রতিবেশীরাও চোখে আঁচল দিল।

ক্রমশ–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *