ঝিনুক-জলের মগ্নসুখ ——–কলমে- অমল বিশ্বাস —-

ঝিনুক-জলের মগ্নসুখ
——————————–
অমল বিশ্বাস —- কলমে

ইস! বিছানার কী অবস্থা
যেন বাতজ্বর।
রাত্রির শেষ-স্তবক জুড়ে কী সুন্দর ভোর
অথচ কোঁচকানো অর্ধেক চাদর ঝুলে আছে মেঝেয়,
কিছু বললেই গাল-গল্প বলে উড়িয়ে দেয় সব
কপাল ভালো, আত্মীয়স্বজন নেই।

যাও দুইকোণা ধরো
টানটান ক’রে তোষক ঢেকে দিয়ে
বাথরুমে বাসিকাজ সেরে এসো।
কি হলো? খালিপায়ে যাওয়ার অভ্যেস গেল না!
বন্ধ চোখ, নাকি অন্ধ পা,
দরজা আটকাতে গিয়ে আঙুলে ছ্যাঁচা খায়
তবু, লজ্জা হলো না।

তবে আজ গোঁফদাড়ি কামিয়ে
ধোপদুরস্ত হয়ে বাথরুম থেকে বেরুচ্ছে
একা-একা কাকে যেন খুঁজছে,
চোখেমুখে কী একধরণের গভীর আবেদন
জানতে চাইলে বললো, ইহি এখন না!

মেধা নেই; তা বলবো না
মলিন ঋতুতেও স্বতঃসিদ্ধ পুরুষ মানুষ।
তবে ফি-বছর বাবা হওয়ার যে দূর্দান্ত শখ
তা মহা-জটিল এক আবর্তনে ফেলে বন্ধ করেছি,
মেয়ে-মানুষের শরীর, সে বুঝবে কী!
এখন আর দুঃখ করে না।

কেউ ভাববেন না
ভোলাভালা মানুষটিকে আমি তালগাছ ভাবি,
থার্ড ব্রাকেটে তাকে আটকে রাখি না
তার কিছু অকারণ ইচ্ছেয় সৃষ্টির সুখ খুঁজে পাই।

যেমন ও বাড়ির চঞ্চলা আসে
তখন দু’জনের চেনামুখ উৎসুকভাবে দেখি,
কী-সব বলে!
মনে হয় তাদের অভিব্যক্তি যেন আমারই আকুতি
তাদের চোখের রহস্যে শুরু হয় আমার ভ্রমণ
ওরা দু’জনেই কবি।

সেদিন অফিসে যাবার সময়
পেছন ফিরে বললো এই রমা, কেমন লাগছে আমাকে?
বললাম, ফাঁদপাতা শিকারীর মতো।
‘দুচ্ছাই’ বলে, তালিকাভুক্ত প্রেমিক চলে গেল,
পুরনো স্বামীর বাহানায় ইদানীং আমিও ভয়ানক আকৃষ্ট হই
পরকীয়া প্রেমের মতো।

তার যাবতীয় অনুষঙ্গ
বিছানা-বালিশে-খাবার টেবিলে মিলেমিশে একাকার,
এমন কী আমার খুলে রাখা শাড়িতে
সে যেন খুঁজে ফেরে স্বাগতিক জীবন-চৈতন্যের স্বাদ,
আমি টিটকারি মেরে অপবাদ দিলে
যক্ষ-বিহ্বল হয়ে বলে, তুমি এই হেমন্তে আমার মগ্নসুখ
তা আজও বুঝতে পারোনি।

বললাম, ইয়ার্কি করেছি।
তুমি আমার বৈতালিক মেঘদূত, তাই ভয় হয়
কবিতার শেষ প্যারায় যদি আমাকে মুক্তি দিয়ে দাও
সে মুক্তি হবে আমার মৃত্যুর মলিন চাদর
কে আর তোমাকে বলবে বলো—
হে আমার সার্থক কবি, এসো দু’জনে বিছানা সাজাই
যাও, দুইকোণা ধরো।

1 thought on “ঝিনুক-জলের মগ্নসুখ ——–কলমে- অমল বিশ্বাস —-

  1. অসাধারণ নিখুঁত সুন্দর একটি কবিতা পড়লাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *