শূন্যতা–উদয় ভানু চক্রবর্তী

(১)
এই যে হু হু হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাকে,
ঘুমন্ত ঘর, বারান্দায় শেষ বিকেলের দুঃখী আলো.. অতিপ্রাকৃত স্থবিরতা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে, ইউক্যালিপ্টাসের গায়ে গুঁড়ি মারা অন্ধকারটুকু লুকোনো সন্ধ্যার চিতল বাঁকে দাঁড়ানো,
ভীরু মাধবীলতার স্পন্দনহীন আহ্বান ডাকে আমাকে..!

(২)
মৃত রাধাচূড়া গাছটা থেকে একটা ভাঙ্গা ডাল অশ্লীল ভাবে ঝুলে আছে, শ্যাওলা পড়া বিবর্ণ পাঁচিলটা ঘেঁষে ঝুলে আছে অকারনে-
কার বিশৃঙ্খল চলাফেরায় নাকি পিছুটানে?
গতিহীন, বিমূর্ত- শুকনো ঝরাপাতার মর্মরের চেয়েও কর্কশ কোনো ম্লান পাখির ডাক,
নিথর বধিরতার ওপারে!
পেয়ালার কফি জুড়াচ্ছে!
ওয়েটপেপারের নীচে চাপা পড়া গত রাতের নক্ষত্রপুঞ্জ, শিমুলের অন্ধ ভ্রুন থেকে ছিটকে বেরনো তুলো তুলো কাতর অক্ষরের দল,
ভাসছে অসন্তুষ্ট ছায়ায় চারপাশে-
ফিসফিস আধোবুলি দরিদ্র সংকেতে ফেটে যাচ্ছে আমার বুক..!

(৩)
শুনশান পথে বুড়ি পাগলীটার অদ্ভুত আকাশ কাঁপানো চিৎকার, শূন্য জলের মায়া, ঢেউ ঢেউ অপার্থিব মাছেদের সারি, এগিয়ে চলেছে প্রাচীন ঘাটের দিকে, অসংখ্য বুদ্বুদ..!
যেভাবে বৃষ্টিটা একদিন কাঁদিয়েছিল নির্জনে, ভিজেছিল নিঃসঙ্গ কার্ণিশ, ঝুলে থাকা বাদুর আর চামচিকের মাস্তুল, ভিজেছিল ব্যথার নগ্ন দলিল..
অস্থির রোমন্থনের শব্দ, বেহাগের ছলনা, শিশিরের পদধ্বনির মতো গাঢ় সুদূর আজও সেভাবেই যেন ডাকে আয় আয়..!

(৪)
অথচ এত কিছুর ভীড়ে,
তোমার না থাকাটুকু বসে থাকে একা দূরে,
দৃশ্যগুলো খুলে দেয় শরীর,
আর হু হু বাতাস বার বার আমাকে ছুঁয়ে কোথায় যে হারিয়ে যায়..!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *