লক্ষ্মী পেঁচা

তনুজা চক্রবর্তী

বোস দাদুদের পুজো মণ্ডপের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কুঁড়ি ভরা শিউলি গাছটার দিকে চোখ পড়তেই, সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল সজলের। গাছটার ডালে ডালে স্মৃতিদের ভিড়ের মাঝে সেই দিনটা যেন আজও জ্বলজ্বল করছে!
প্রতিবারের মত সেবার’ও শরতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই পাড়ার ছেলেমেয়েদের ভোরের ঝরা শিউলি কে সাজিতে ভরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছিল। প্রতিদিন কে আগে পৌঁছবে গাছটার তলায়, সে এক অদ্ভুত আকর্ষণে মেতে ওঠার আনন্দই আলাদা।
সজল সেদিন সবার আগে পৌঁছে গেছিল গাছটার কাছে। আর গিয়েই দেখে সাদা শিউলির চাদরের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে এক আহত সাদা পেঁচা। মাঝেমধ্যেই তার ডানা দুটো একটু একটু করে নড়ে উঠছে।
সজল হাতের সাজি ফেলে দিয়ে সেটাকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা বাড়িতে হাজির হল। তাকে শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় গোটা বাড়ি মেতে উঠেছিল। একসপ্তাহ পর সে যখন প্রায় সুস্থ ,হঠাৎই তার দিকে তাকিয়ে সজলের মনে হল পেঁচাটা যেন খুব উতলা হয়ে উঠেছে!
সজল তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সে যেন বলে উঠল ” লক্ষ্মী দেবীকে না জানিয়েই একসপ্তাহ আগেই মর্তে কেমন আয়োজন চলছে দেখতে চলে এলাম । এ আমার লোভের শাস্তি।”
সজল মনে মনে বলল, সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু বাড়ির কেউই তো স্বর্গের রাস্তা চেনে না,কে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসবে তাকে ?
হঠাৎই তার মনে পড়ে গেল, নিখিলের ঠাকুমার কথা। আজ সকালেই মারা গেছেন তিনি।তাঁর ছেলে আসতে সন্ধে হবে বলে মৃতদেহটাকে বরফ দিয়ে ঢেকে রেখেছে ওদের বাড়ির লোকজনেরা।
প্যাঁচাটাকে সন্ধের পরেই নিখিলদের বাড়ির সামনের পেয়ারা গাছে তুলে দিয়ে আসব।
ঠাকুমা বড় ভালো ছিলেন, ওনার আর কষ্ট করে হেঁটে স্বর্গে পাড়ি দিতে হবেনা। প্যাঁচাটা ঠিক তুলে নেবে তার পিঠে।
সন্ধের সময় সে পেঁচাটাকে গাছে তুলে দিতেই ব্যাটা একমিনিটও দেরি করল না, নিমেষের মধ্যে উড়ে চলে গেল তার চোখের বাইরে।
সজল তখন তার উড়ে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে, ” ওরে দাঁড়া ঠাকুমাকে নিয়ে যা।”
সজল না জানলেও প্যাঁচাটা বোধহয় জানতো যে ঠাকুমা সকালেই স্বর্গে পৌঁছে গেছে,তাই সে আর বৃথা সময় নষ্ট করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *