সীমান্ত # পর্ব – ১ লেখিকা – অরণ্যানী

ভূমিকা :-
প্রেম যে কোনো দুটি মানুষের মধ্যে হয়ে যেতে পারে। আগেই বলেছি, প্রেম নারী পুরুষ মানে না। জাত, ধর্ম, বয়স, এসব তো নয়ই। প্রেম দেশের সীমায় আবদ্ধ নয়। প্রেম কাঁটা তারের বাধাও মানে না। শত্রু মিত্র সব সমান প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে। ভিন দেশীর সঙ্গে এক প্রেম কাহিনী শুরু হচ্ছে, যেখানে স্থান, কাল, পাত্র সবই কাল্পনিক। কিন্তু কাহিনী বাস্তব। এক নিষ্পাপ কিশোরীর প্রেম কাহিনী “সীমান্ত”। নামই হয়তো এখানে অনেক কিছু বলে দিচ্ছে।

একটা ছোট মাটির বাড়ি, দুটো ঘর, একটা রান্নাঘর, ঘর থেকে বেরিয়ে দাওয়া, দাওয়া থেকে নেমে মাটির উঠোন। উঠোনের এক ধারে একটি আমগাছ, আর একদিকে পাশাপাশি নিমগাছ ও কাঁঠাল গাছ। তারই আশেপাশে দু’চারটে ফুলগাছ।

শরতের দুপুর। রোদ ঝলমল আকাশ। আমগাছটার নিচে একটা ডিসে করে ভাত মেখে মিনু তার বিড়াল ছানাকে খাওয়াচ্ছে। পরনে লম্বা ফ্রক। বয়স পনেরো বছর। উঠোন বেড়া দিয়ে ঘেরা। বেড়ার গেট খোলা। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো মিনুর বন্ধু কবিতা।
কবিতা – মিনু, এই মিনু। কী করিস?
মিনুর পেছনে এসে কবিতা দাঁড়ালো। মিনু পেছন ফিরে না তাকিয়েই উত্তর দিল – আমার লুল্লুকে খাওয়াচ্ছি।
– ওর নাম বুঝি লুল্লু রেখেছিস?
মিনু খাওয়াতে খাওয়াতেই একটু পাশ ঘুরে কবিতার দিকে চেয়ে বললো – হ্যাঁ, ওর রঙ লাল না, তাই।
– ভাত খেতে পারছে? ও মা! হাতে করে খাওয়াচ্ছিস, যদি হাত কামড়ে দেয়?
মিনু বিড়াল ছানার মাথায় বাঁ হাত দিয়ে আদর করে বললো – এইটুকু ছানা কামড়াবে কী করে? দ্যাখ, কী সুন্দর আমার হাত থেকে খাচ্ছে।
ডান হাত দিয়ে মিনু ছানাটার কাছে মাখা ভাত ধরছে, আর বিড়াল ছানাটা জিভ দিয়ে চেটে চেটে একটু একটু করে খাচ্ছে।
– কিন্তু ওর দাঁত আছে তো।
– ও কামড়ায় না।
– তুই এতো ভালো ডিসে করে বিড়াল খাওয়াচ্ছিস?
– ওটা তো ওর জন্যই মেলা থেকে কাল কিনে এনেছি।
– ও, তুই মেলায় গিয়েছিলি? কার সঙ্গে?
– আমি একাই গিয়েছিলাম। পদ্মা, পতু, জবা, ওরা তো আগের দিনই গিয়েছিল। কেন? তুই যাসনি?
– না। আমি তো মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। এই কালই সন্ধেবেলা ফিরেছি। তাহলে তোদের সবারই মেলা দেখা হলো। খালি আমারই হলো না।
– কেন? যা না।
– ধুর্, একা যাব?
– কেন, আমি যাব তোর সাথে?
– তুই তো গিয়েছিলি। যাবি আবার?
– কেন যাব না?
– কবে?
– আজ বিকেলে।
কবিতা মিনুর কাছ ঘেসে বসলো। বিড়াল ছানা কবিতাকে দেখে ভয় পেল।
মিনু – এই, লুল্লু তোকে দেখে ভয় পাচ্ছে।
– ঠিক আছে বাবা সরে যাচ্ছি। সেছাড়া বেলাও অনেক হলো। বাড়ি যেতে হবে।
– তুই কিছু মনে করলি? খাওয়ানো হয়েই গেছে।
– না না। কিন্তু আজ কী করে যাবি? ফিরতে তো সন্ধে হয়ে যাবে। কালও তো বোধহয় পড়তে যাসনি। আমারও তো দু’দিন পড়তে যাওয়া হয়নি ।মাস্টারদা তো বোধহয় রেগে যাবে।
মিনুর খাওয়ানো শেষ। বিড়াল ছানা গাছ তলায় শুকনো পাতার উপর শুয়ে ঘুমোনর উদ্যোগ করছে।
মিনু – সে তো যেদিন যাব সেদিনই দেরি হবে। আর ক’দিন পর মেলাই তো উঠে যাবে। যদি যেতে চাস, তবে আজই চল। মাস্টারদাকে বলে যাব। একটু তাড়াতাড়ি বেরোব। সন্ধের আগেই ফিরে আসার চেষ্টা করব।

এমন সময় মিনুর দিদি ঝিনুক এক বালতি ছাড়া জামাকাপড় নিয়ে উঠোনে নেমে এলো। পরনে ডুরে শাড়ি। বয়স সতেরো বছর।
কবিতা – আমি তবে আসি। দুপুর দুপুর বেরোব তো?
মিনু –হ্যাঁ।
কবিতা চলে গেল।
(ক্রমশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *