শিরোনাম — অন্য পুজো। (গল্প) কলমে — দীপ্তি নন্দন।

শিরোনাম — অন্য পুজো। (গল্প)
কলমে — দীপ্তি নন্দন।

হৈমন্তী আজ সকাল থেকেই বারান্দায় বসে আছেন আনমনে। কয়েকদিন অঝোরে বৃষ্টিপাতের পরে আজ একটু রোদ দেখা গেছে। আকাশটাও কিছুটা পরিস্কার আজ। তাই রোদে এসে বসেছেন তিনি। সামনেই পুজো! এখন আর তাঁর কাছে ঐ দিন গুলোকে বিশেষ দিন বলে মনে হয়না । অথচ একটা দিন ছিল যখন ঠাকুর দেখা আর হৈ চৈ খাওয়া দাওয়া নিয়ে সারাক্ষণ আনন্দের জোয়ার বইত সারা বাড়িতে। আজ এই অশীতিপর বয়সে একেবারে নড়বড়ে আর একা হয়ে গেছেন তিনি । “ও বড়মা আর কতক্ষণ রোদে বসে থাকবে গো! এখন তো কড়া রোদ উঠেছে। এবার তো ঘরে চলো। দাঁড়াও আমি হাতটা ধরি আগে, তারপর তুমি উঠবে । ” রতনের জোরদার গলা শোনা যায়। সে পাশের বাড়িতেই থাকে।
হৈমন্তীর নাতির বন্ধু ছিল একসময়ে। তার একমাত্র নাতিটি মোটরবাইক এক্সিডেন্ট করে ,তার এই অসহায় ঠাকুমাকে একেবারে একা আর আরও অসহায় করে দিয়ে চলে গেল যখন, তখন থেকেই তার দেখাশোনার ভার নিয়েছে এই রতন।
একেবারে দুটো পাশাপাশি বাড়ি। মাঝে শুধু একটা পাঁচিলের তফাৎ। তাই খুব ছোট থেকেই রতনের এ বাড়িতে অবাধ গতিবিধি। শুধু সেই নয়, তার বাবা, মাও এ বাড়ির ছেলে আর বৌমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। আর সেকারণে একসঙ্গে তারা বাইরে বেড়াতে যেতো প্রায়ই। আর সেভাবেই তারা একই সঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শেষ হয়ে যায় কিছু বছর আগে। শুধু রতন আর হৈমন্তীর নাতি রজত দুজন সেবার সঙ্গে যায়নি ওদের পরীক্ষা থাকায়। তাই সেবার ওরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। আর তারপর তো রজত ও চলে গেলে, তিনি একেবারে একা হয়ে গেছেন। এখন এই অশক্ত শরীরে তাঁর একটাই আকাঙ্ক্ষা, তাড়াতাড়ি ওপরে যাবার। এখন আর তাই পুজোর উৎসবের দিনগুলো কোনো নতুন আনন্দ এনে দেয় না তাঁর মনে।
রতনের হাত ধরে ঘরে এসে বসে হাঁফাতে থাকেন তিনি। এতটুকু পরিশ্রমের ক্ষমতা নেই আর তাঁর। ” বলি বড়মা, আজ তুমি কি খাবে বলত! তৈরি করে ফেলি চটপট।” বলেই রতন হাসতে থাকে। আসলে সে জানে, একা থাকলেই এই ঠাকুমাটি শুধু পুরোনো কথা ভেবে কষ্ট পায়। তাই সে হাসি মজা দিয়ে আবহাওয়াটা একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। রতন তার এই ঠাকুমাটিকে সমস্ত শক্তি দিয়ে আগলে রাখতে চায়, ছোট থেকে সে এঁর কাছ থেকে অনেক স্নেহ পেয়ে আসছে । তার নিজের ঠাকুমাকে তো তার মনেই পড়ে না।” কি রে দাদাভাই চুপ করে কি ভাবছিস বলতো? এই যে কিসব ভালো মন্দ আমাকে রেঁধে খাওয়াবি বলছিলিস, তার কি হলো? ” বলেই জোর করে দুলে দুলে হাসতে থাকেন তিনি। আসলে এই দুটি অসমবয়সী দুখী মানুষ পরস্পরের কষ্টের কথা জানে ভালো করে। তাই তারা চেষ্টা করে একে অপরকে এই সব অবাস্তব কথা বলে একটু আনন্দ দিতে! তা নাহলে কেউই কোনো ভালো খাওয়ার কথা কিংবা কোনো আনন্দ করার কথা স্বপ্নেও ভাবে না ! পুজোর দিনগুলোও এই মানুষ দুটির মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারে না। ৪১৬.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *