# দিবস কেন যে এলো না # – ৫ কলমে – অরণ্যানী

# দিবস কেন যে এলো না # – ৫

কলমে – অরণ্যানী

মেয়েটিকে পরীক্ষা করে নীলম দেখলো, প্রায় চার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে সে গর্ভবতী! রোগা, রক্তাল্পতার ছাপ চোখে মুখে। তবে গায়ের রঙটা আর মুখের মাধুর্য এসকল দুর্বলতাকে ঢেকে দেয়। সে মাধুর্যের মধ্যেও একটা মলিনতার ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু রোগাটে ছোট খাটো চেহারায় প্রেগনেন্সি ধরা পড়ে না বলে না দিলে। বয়স কত আর হবে, হয়তো আঠারোর কাছাকাছিই কিছু।
নীলম — আগে টের পাসনি? এতো দেরি করলি?
-— বলেছেল বে করবে।
—- আর কবে করবে? বাচ্চা হয়ে গেলে? যদি বিয়ে করতে না চায় কী করবি ভেবেছিস?
—- নাগো দিদা, ও অমন নয়।
— সেই ও টা কে শুনি?
—- সে আমি বলতি পারবুনি।
—- তবে কী করবি? এখানে তো এই অবস্থায় বাচ্চা নষ্ট করার কোনও ব্যবস্থাই নেই।
—- নষ্ট ক্যানে করব?
—- বিয়ে করতে গেলে তোর ও টা কে, তা তো সবাই জানবে।
—- পাইলে যাব। ও আসুক না ক্যানে।
—- তবে আমার কাছে কেন এসেছিস?
নীলম এবার একটু ধমকের সুরেই বলল।
—– গ্রামে তো দু’দিন পর থেকেই হই হই পড়ে যাবে। নাকি তার আগেই পালাবি? কিন্তু আমি ঠিক কী করব?
—- বাচ্ছাটা ঠিক আচে কিনা তাই দেকাতে এলুম।
—- বাচ্চা কী করে ঠিক থাকবে? তোর শরীরে তো রক্ত কম, তোকে খাওয়া দাওয়া করতে হবে অনেক ভালো করে। মুসুর ডাল, শাক সবজি, ডিম, দুধ, ফল, এগুলো খেতে হবে। সেছাড়া ওষুধও খেতে হবে নিয়মিত।
চন্দনা নীলমের মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইল। নীলম বুঝল ও কিছু গোপন রাখতে চায়। কিন্তু ওর ও টা তো বোধহয় এখানে নেই এখন। যদি এরমধ্যে না ফেরে? ওরা যে অত সহজে বিশ্বাস করে ফেলে – – –
নীলম আবারও প্রশ্ন করল — ওর নাম আমাকেও বলা যাবে না? কোনো বিপদে পড়লে কী করবি?
চন্দনার চোখে আবারও জল। নীলমের পাশের ছোট্ট ঘরের বেডটার উপর চন্দনা বসে। মাঝে মাঝে অসময়ে রুগী এসে পড়লে ওখানেই দেখার ব্যবস্থা আছে। নীলম চন্দনার মাথায় হাত রেখে স্নেহের সঙ্গে বলল, “কেঁদে কিছু করা যায় না রে বোকা। বল আমাকে। আমি নয় প্রয়োজন না পড়লে কাউকে বলব না”।
চন্দনা হঠাৎ নীলমের হাতটা মাথায় চেপে ধরে বলল, আমি না বললে তুম্মো কিচু বলবেনি বলো।চন্দনার চোখে মুখে দৃঢ়তার ছাপ।
—- এই মাতায় হাত দেছো। যদি বলো আমার মরণ হবে।
অসহায় মুখে নীলম প্রতিজ্ঞা করতে চন্দনার মুখ থেকে ধীরে ধীরে সব বের হতে থাকল।

সে গাঁয়ের তপনকে ভালোবেসেছে। তপন বিয়ে করার আগে থেকেই চন্দনাকে ভালোবাসতো। কিন্তু তপন কোনও কাজ না পেলে চন্দনা বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এরমধ্যে তপনের বাড়ি থেকে মিথ্যে বলে ওদের চেয়ে বেশি অবস্থাপন্ন ঘরের একটি মেয়ের সঙ্গে তপনের বিয়ে ঠিক করে ফেলা হয়। তপন শেষ বার চন্দনাকে বিয়ের কথা বলে। কিন্তু চন্দনা রাজি হয় না। ততদিনে তপনের সন্তান যে তার গর্ভে এসেছে তা সে টের পায়নি। একদিন চন্দনার সঙ্গে ঝগড়া করে তপন বাড়ির ঠিক করা পাত্রীকেই বিয়ে করে ফেলে। আর তার কিছু দিন পরই কেরালায় শ্রমিকের কাজ নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে চন্দনাকে বলে যায়, সে তাকে এখনো ভালোবাসে। চন্দনাও টের পায় ততদিনে তপনের সন্তান তার গর্ভে। সে কথা চন্দনা তপনকে জানায়। তপন সব গোপন রাখতে বলে যায়। আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়, ফিরে এসে চন্দনাকে নিয়ে সে পালাবে। একেবারে কেরালায় থাকার ব্যবস্থা করেই সে আসবে। কিন্তু মাস খানেক কেটে গেছে, তপনের কোনও খোঁজ নেই। তার বউ বা বাড়ির লোকজন, গাঁয়ের বন্ধুরা, কেউই জানে না তপন কোথায়! অথচ ওর সঙ্গে যারা গ্রাম থেকে কাজে গিয়েছিল, তারা বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। কিন্তু তারাও আজ আর জানে না তপন কোথায়! চন্দনা বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করে আছে, তপন ঠিকই আসবে।
(চলবে )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *