আক্কেল গুড়ুম! কলমে- দীপ্তি নন্দন

আক্কেল গুড়ুম!
কলমে- দীপ্তি নন্দন

কদিন থেকেই ময়ূখের মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। ওদের কলেজে , ফার্স্ট ইয়ারের বাংলা অনার্সে ভর্তি হওয়া, নতুন মেয়েটাকে( নামটিও বেশ, রোমিতা) দেখে অবধি, তাদের সেকেন্ড ইয়ারের ছেলেদের নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড় হয়েছে! ময়ূখ ওদের সেকেন্ড ইয়ার ফিজিক্স অনার্সের ছাত্রদের দলের সর্দার। খুব স্মার্ট আর মেধাবী হওয়ার জন্য সকলেরই পছন্দের মানুষ সে। কলেজের গেটের কাছে দাঁড়ানোটা তাদের রোজকার কাজ! আর অনেকেই তাদের দিকে একটু চোরা চাউনি যে ফেলে না তা নয়। বিশেষ করে ময়ূখের দিকে না তাকিয়ে কেউ যায় না। ময়ূখ এতদিন ধরে এই চিত্র দেখে দেখে, এটাকেই নিয়ম বলে মনে করত।
কিন্তু এবার সে জোর ধাক্কা খেয়ে গেছে, এই রোমিতার কাছে।
মাত্র সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা। রোজের মতোই গেটের সামনে দলবল নিয়ে গুলতানি করছিল সে, আর সঙ্গে চলছিল, মেয়ে দেখা! এমন সময় হঠাৎ করেই একটা বেশ বড়ো গাড়ি এসে থামতে, তারা কৌতূহলী হয়ে দেখতেই ,দেখল তাকে! আর সব ঋতু হেনা, লুসি, রুশা এদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একজনকে। বেশ কালো , কিন্তু অসাধারণ সুন্দর ফিগার, লিপস্টিক হীন স্বাভাবিক রঙের ঠোঁটের ফাঁকে, তার মুক্তোর মতো দন্ত পংক্তির মিষ্টি হাসি মাখানো মুখ আর কোমর ছাপানো একরাশ কোঁকড়া চুল নিয়ে, শাড়ি পরে একজনকে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যেতে! তারপর এতগুলো দিন ময়ূখ খুব চেষ্টা করেও তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। এমনকি মেঘলা দিনেও চোখের ভাব লুকোতে কালো চশমা অবধি পরেছে সে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সেই মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে, তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কোনো দিকে নজর না দিয়ে চলে গেছে রোজই!
তাই আজ ময়ূখের মন মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। কেউ কোন কথা বললেই রেগে, দু-চার কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে এল মা, “কি রে খোকন, আজ কি কলেজ ছুটি? এখনও তৈরি হলি না!” তারপর দাদা- বৌদি। “কি রে ছোটন, লেখাপড়া সব গোল্লায় দিয়ে, এখনও বসে আছিস? কলেজ নেই? ”
এর পরে রামু এসে বলে, “ও দাদাবাবু, এখনও বসে, কেন গো? আমি ঘর পরিস্কার করব তো! “ধুত্তেরি” বলে বাইক হাঁকিয়ে কলেজে পৌঁছতেই, পেছন থেকে,” ও দাদাভাই, একটু শোন! “শুনে ঘুরে তাকাতেই
ময়ূখ চমকে ওঠে! কিন্তু ও বলে কি! ‘দাদাভাই! ‘
তখনই আবার ,” দাদাভাই আমাকে একটু পৌঁছে দেবে? আমাদের গাড়িটা আজ গেছে সারাতে! তুমি সিনিয়র, তাই দাদাভাই বললাম। রাগ করলে নাতো? “খুব হতাশ হয়ে, সে বাড়তি হেলমেটটা বাইকের টুল বক্স থেকে বের করতে করতে মনে মনে ভাবে,’ শেষে একেবারে দাদা বানিয়ে দিল! যাক্, এত ছেলেদের মধ্যে থেকে তাকেই তো বেছেছে! ‘ সে , ঐদিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছিল, বাকি ছেলেরা সব ঈর্ষান্বিত নজরে তাকেই দেখছে! একটা প্রচ্ছন্ন গর্ববোধে মনে মনে কলার তুলে সে, রোমিতার দিকে বাড়তি হেলমেটটা এগিয়ে দিয়ে, বাইকে স্টার্ট দেয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *