গীতশ্রী সিনহা। ✒️✒️ সম্পাদকীয় কলমে।

সম্পাদকীয়

একটা সাক্ষাতকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, লেখক হলেন কেন?
নির্বিকার সমরেশ মজুমদারের উত্তর, আমাকে লেখক বানানো হয়েছে !
প্রশ্নকারী, কে বা কারা আপনাকে লেখক বানালেন ?
উত্তরে বললেন, আমি নাটক লিখতাম। নাটক করার জায়গা পাওয়া যেত না। অনেকের উৎসাহে নাটক-কে গল্পের আকার দিলাম। গল্পটা ছাপা হলো একটি পত্রিকায়। এ গল্পের সম্মানী হিসেবে আমাকে ১৫ টাকা পাঠানো হয়েছিল। সেই টাকা পেয়ে আমার বন্ধুদের খুব উৎসাহ। তখন কফির দাম ছিল মাত্র আট আনা। বন্ধুরা দুই দিন ধরে কফি খেলো। বলতে লাগলো, আরও গল্প লিখতে। এভাবেই আমি লেখক হয়ে উঠলাম।
প্রশ্নঃ আপনার ‘সাতকাহন’ উপন্যাসটি খুবই জনপ্রিয়। এটি লেখার প্রেক্ষাপট কি ছিল?
সমরেশ মজুমদার বলেন, আমি চা বাগানে থাকতাম। আমার বাড়ির পাশে এগারো-বারো বছরের একটি মেয়ে ছিল। সে আমাদের খেলার সাথীও ছিল। তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। কান্না করতে করতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। চলে যাওয়ার তিনদিন পর ফিরে এলো। বিধবা হয়ে। সেই যে ঘরের ভেতরে ঢুকলো, আর বাইরে এলো না। আমাদের সঙ্গে খেলতেও আসে নাই। এটা আমাকে আঘাত করেছিল। সেই থেকেই ‘সাতকাহন’ লেখার গল্প খুঁজে পাই।

প্রশ্নকারী, আপনি দেড় শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। এসব উপন্যাসের প্রতিটিরই চরিত্র ও বিষয়বস্তু আলাদা। এটা কীভাবে সম্ভব?

সমরেশ মজুমদার প্রতিত্তোরে বলেন, আমার তো আর হুমায়ূন আহমেদের মতো প্রতিভা নেই। আমি এক সময় ভাবলাম, কীভাবে লেখক হিসেবে আমি জায়গা করতে পারি। তখন বুঝতে পারলাম, এর একটাই উপায় আছে, যদি প্রত্যেকটা লেখা আলাদা করতে পারি। যাতে কোনো পাঠক পড়ে না বলতে পারে, এটা তো আগেই পড়েছি। এটাই আমার বাঁচার একমাত্র পথ।

প্রশ্ন আসে, তরুণ লেখকদের লেখার ব্যাপারে কিছু বলুন।

সমরেশ বলেছিলেন, এদের অবস্থা খুব খারাপ।
প্রশ্নকারী, আপনার অনেক গল্প-উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক হয়েছে। এতে কী সাহিত্যমান বজায় থাকে?

হাল্কা হেসে বলেন, আপনি যদি কোনো কিছু ফটোকপি করেন তাহলে কি সেটা অরিজিনালের মতো হবে? আমি তো মনে করি, পরিচালক বা প্রযোজককে যখন গল্প-উপন্যাস দেই, তখন মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয় আর কি!

সাক্ষাতকার টা ছিল ফেব্রুয়ারী ২০২০,
সমরেশ মজুমদারের এই ইন্টারভিউ পড়তে গিয়ে প্রতিটি কথায় যেন জীবন্ত লাগছে। শিক্ষনীয় বিষয়।
আগামী সংখ্যায় আরও কিছুটা আলোকপাত করার ইচ্ছেয় রইলাম। সমুদ্রকে তো মুষ্টিবদ্ধ করা সম্ভব নয় !
শুভকামনা শুভেচ্ছা রইল পাঠক লেখকদের প্রতি।দেখা হচ্ছে আগামী সংখ্যায়।
গীতশ্রী সিনহা। সম্পাদকীয় কলমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *