বৈশাখ ✒️✒️ মীনা দে

বৈশাখ

মীনা দে।

চৈত্র বিদায় নেয় বৈশাখের ওপর প্রকৃতির সমস্ত ভার তুলে দিয়ে। সুন্দরের অন্তর্ধানে প্রকৃতির অন্তর বিধুর, বিষাদময়। তার মধ্যে তখন ঘটে অস্থিরতার চরম প্রকাশ । কখনও ক্রোধোন্মত্ত অবস্থায় করে চারিদিক লন্ডভন্ড। আবার কখনও মনের জমে থাকা দুঃখ নেমে আসে অঝোর ধারায়। তার শরীরের শীতলতা তখন উধাও। রুক্ষ শুষ্ক তপ্ত বাতাসের ছোঁয়ায় সমস্ত অঙ্গ জ্বলে

প্রকৃতির এই হঠাৎ পরিবর্তনের ক্ষণ কে মানুষ ধরে রাখতে চায় তার স্মৃতিপটে। তাই যেন নতুন বছরের নতুন দিনটাকে উদযাপনে এই ব্যবস্থা । প্রকৃতির এই রূদ্র রূপটাকেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধরে রেখেছেন তাঁর বৈশাখ কবিতায়।

হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ,
ধূলায় ধূসর উড্ডীন তব জটাজাল,
তপঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক—
হে ভৈরব , হে রুদ্র বৈশাখ!

বৈশাখ নামটায় যেন কেমন একটা গাম্ভীর্য পূর্ণ তেজদীপ্ত ঋষি বা তাপসের কথা মনে হয়। যিনি দুই চোখ বন্ধ করে তপস্যাব্রত পালন করছেন। তাই হয়তো কবি বলেছেন———

হে বৈরাগী ,করো শান্তিপাঠ
উদার উদাস কন্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে—
যাক নদী পার হয়ে, যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে
পূর্ণ করি মাঠ।
হে বৈরাগী করো শান্তিপাঠ।

এই বৈশাখের হাত ধরেই একে একে আসবে জৈষ্ঠ, আষাঢ় শ্রাবণ ইত্যাদি মাস আর গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত ও বসন্ত। মানুষ ও চলতে থাকবে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে।

বৈশাখ মাসের নামটা এসেছে বিশাখা নক্ষত্রের নামে। এই সময় চন্দ্রদেব বিশাখা নক্ষত্রে অবস্থান করেন। এইভাবে এক একটি নক্ষত্রের নামে এক একটি মাসের নামকরণ করা হয়েছে।যেমন—বিশাখা,জেষ্ঠা,উত্তরওপূর্বআষাঢ়া,শ্রবণা,উত্তর ও পূর্বভাদ্রপদ,অশ্বিনী,কৃত্তিকা ,মৃগশিরা,পুষ্যা,মঘা,উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী,চিত্রা।
মোগল সম্রাট আকবরের আমল থেকে বৈশাখ মাসকে বৎসরের প্রথম মাস হিসেবে মানা হয়ে আসছে । কৃষিকাজ অনুসারে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য। বাঙ্গালীরা যেহেতু উৎসবপ্রিয় তাই বছরের এই প্রথম দিনটাকে উৎসবের মাধ্যমে উদযাপনের বিশেষ ব্যবস্থা ।

মীনা দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *