# শিরোনাম-প্রাপ্তে তু ষোড়শ বর্ষে। # কলমে- ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

# ছোট গল্প।
# শিরোনাম-প্রাপ্তে তু ষোড়শ বর্ষে।
# কলমে- ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

–” অংশু,বল্ কী হয়েছে? আমি তোর বাবা। মনে রাখিস, ষোল বছর বয়সে বাবাই ছেলের সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়। প্রাপ্তে তু ষোড়শ বর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেৎ। বল্ রেজাল্ট খারাপ হয়েছে? -” না,বাবা, কেমন করে বলি!”– দ্বিধাগ্রস্ত কচি মুখটা মলয় দু’হাতের অঞ্জলিতে তুলে ধরে। সদ‍্য গজানো হাল্কা দাড়িগোঁফে ঢাকা অপূর্ব নিষ্পাপ এক তরুণ আনন। মাথা নিচু করে কিছু বলছে বাবাকে। পিতা সস্নেহে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে, নিচু স্বরে বোঝাচ্ছে কিছু । বেশ কিছুক্ষণ পরে ছেলের প্রফুল্ল কন্ঠস্বর -“ওক্কে বাবা।”– মনে রাখিস, সব শেয়ার করবি তোর এই বেস্ট ফ্রেন্ডকে।”–

পাশের ঘরে বসে সব শুনছিলো ইন্দিরা। অংশু মায়ের থেকেও বাবাকেই বেশী ভালোবাসে। সন্তানকে কী ভাবে আগলাতে হয় তা মলয় জানে। ইন্দিরা ভাবে– আচ্ছা, প্রাপ্তে তু ষোড়শ বর্ষে পিতা তো পুত্রের মিত্র হয়, কিন্তু কন‍্যা দ্বাদশ বর্ষেই মায়ের সখী হয়ে যায়, যখন প্রথম রজোদর্শন হয়। মা-ই বুঝিয়ে দেয় এ সময় কী করণীয়। ইন্দিরার মাও প্রতি মাসে নিজের হাতে তার রক্ষাকবচ বেঁধে দিতো। মা বড়ো বিশ্বাস করতো তাকে। মা বুঝতোইনা, তার মেয়ে বড়ো হচ্ছে। এখনো যেন শিশু। ইন্দিরা যে তখন সদ‍্য ষোড়শী! মলয়ের ভালোবাসার জোয়ারে সে যে তখন ভেসে যাচ্ছে! মাকে বলতেও পারছে না, অথচ ইন্দিরার বিবেক বলেছিলো যে, অন্তত মাকে বলা উচিৎ। বলা হয়নি। পাড়ার লোকেদের মারফৎ যেদিন বাড়িতে জানাজানি হলো এই কথা, বাবা দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে পড়লেন। দাদা গলা টিপে ধরে দাঁত চেপে উচ্চারণ করলো এক অজ্ঞাত শব্দ–“কুলটা”–। আচ্ছা,কুলটা মানে কী? মা কেমন অদ্ভূত চোখে তাকিয়েছিলো তার দিকে। মা ঘামছিলো। ইন্দিরা ঠকঠক করে কাঁপছিল! এমন সময়ে মলয় এলোপাথাড়ি ঝড়ের মতো ছুটে এলো। আপনারা দয়া করে ওকে মারবেননা। আমি কথা দিচ্ছি ওকে বিয়ে করবো। মা শুধু ইন্দিরার দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করলো -“তোকে সবচেয়ে বিশ্বাস করেছিলাম ইন্দু,আমার সবচেয়ে আদরের মেয়ে তুই-ই। তুই আমায় বলিসনি?! বিশ্বাস হচ্ছে না,এমন করে আমাকে তুই ঠকালি ইন্দু!”- মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ঘরে ঢুকে খিল দিয়েছিল।

পয়লা বৈশাখ মলয়কে বিয়ে করে বাপের বাড়ি ছাড়লো ইন্দিরা। নাঃ, বিয়েটা বাপের বাড়ি থেকে দেয়নি যেমন, তেমনই আটকাবার চেষ্টাও কেউ করেনি। মলয়কে নিয়ে রেজেস্ট্রি অফিস থেকে শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। মা শুধু মলয়কে দেখছিল অবাক চোখে। ইন্দু মাকে প্রণাম করলে মা এক বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। আর দেখা হয়নি মায়ের সঙ্গে। চোখের জলের কনকাঞ্জলি দিয়ে ঘর ছাড়লো ইন্দু। মাও সেই অভিমানেই হয়তো বছরখানেকের মধ‍্যেই মারা যায়। খবর হাওয়ায় ভাসে। গঙ্গার ঘাটে চোখের জলে মায়ের নামে চতুর্থীর তর্পণ করেছিলো ইন্দিরা।

ষোল বছর বয়সে যে দূরত্ব তৈরী হয়েছিলো তা চিরস্থায়ী হয়ে গেলো। বুকের মধ‍্যে চিরস্থায়ী হয়ে গেল মায়ের রুদ্ধবাক করুণ মুখ। আজ সেই পয়লা বৈশাখ! আজ ইন্দিরার বিয়ের তারিখ! আজ মায়ের সঙ্গে চির বিচ্ছেদের তারিখও! আজ মাতৃস্নেহ হারিয়ে তার বিনিময়ে নতুন সংসার গড়ে তোলার দিন। -“আজ যদি সেই ষোল বছরে ফিরে যেতে পারতাম, মাগো ক্ষমা চাইতামনা, তোমার কোলে মুখ গুঁজে কাঁদতাম।”–

ইন্দিরার দুচোখ জলে ভরে গেলো।
**********************************************

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *