ঘটনা, রটনা এবং তারপর! পর্ব(৩) ✒️✒️ কুমকুম চক্রবর্তী

উপন্যাস
ঘটনা, রটনা এবং তারপর!
পর্ব(৩)

কুমকুম চক্রবর্তী

_”আর মেরোনা, লাগছেতো! উফফ!
কালশিটে দাগ দেখলে,মুন্নী,মা,বাবা সবাই জিজ্ঞেস করবে_কি করে হলো?”
শপাং,শপাং, চাবুকের আওয়াজের থেকেও আস্তে কন্ঠস্বর শুনে, জানোয়ারী উল্লাসের হো হো হাসি হেসে চাবুকটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দিব্যাংশু বললো,”ওরা কি জানেনা ভেবেছিস, আমি তোকে চাবকাচ্ছি!
তোকে মারলে ওদের কিস্যু হয়না! আমার বাপ বুড়োটা তোর বাপের কাছে লাখ দেড়েক টাকা পেয়েছে বলে, তোকে আহা তু তু করে! তোর গয়নাগুলো দিয়ে মুন্নীর বিয়েও দেবে। আমি শাললা,বেকার মালখোর তাই বুড়োর কথা শুনে তোকে বিয়ে করেছি আমার সন্ধ্যামণিকে ছেড়ে! বের হ,দূর হ,আমার চোখের সামনে থেকে!”
এরপরেই প্রতিদিনের মতো, কাঁদতে কাঁদতে,বোতলের মধ্যে বেঁচে থাকা দেশী মদটা এক চুমুকে গলধঃকরণ করে দিব্যাংশু, সুচেতার বাবার দেওয়া বড়ো সেগুন কাঠের সোনালী পালঙ্কে শুয়ে পড়ে।
বেডরুমের অ্যাটাচড বাথরুমে, গামছা ভিজিয়ে,ব্যাথাগুলোর উপর দিয়ে যতোটা ঠাণ্ডা হওয়া যায় ততোটা ঠান্ডা হয়ে মাটিতে সতরঞ্চী বিছিয়ে অন্ধকারের কাছে গোপনে অশ্রুমোচন করে সুচেতা!
অষ্টমঙ্গলার পর থেকে এ তার নিত্যদিনের রুটিন।
সে জানেনা, দিব্যাংশু কতোটা ঠিক বলছে __ এখন অন্তত তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ তার সঙ্গে যারপরনাই ভালো ব্যবহার করে……!

:
না! দিব্যাংশু,সুচেতাকে শুঁকেও দ্যাখেনি, এই পাঁচমাসে!
সুচেতা বা দিব্যাংশুর পরস্পরের প্রতি কোনো মানবিক টান বা বন্ধনও তৈরী হয়নি। দিব্যাংশু চায়, সুচেতা যতো তাড়াতাড়ি পারে, এই ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাক, নিজের কাঁধে নিজে দোষ নিয়ে।
সুচেতার বাবার এবং দাদার কন্ট্রাক্টরী বিসনেস আছে।
টাকা পয়সার অভাব নেই। সমাজে নিজেদের সম্মান ধরে রাখার জন্য তারা যা খুশি করতে পারে। সুচেতার একটা যমজ বোন আছে, সুমিতা নাম। সুচেতা এবং সুমিতা দুজনেই সুন্দরী কিন্তু সুমিতা প্রায় ছ’ফুট লম্বা_ যার জন্য পাত্রপক্ষ তীরে এসেও তরী বাঁধেনা।
প্রেমের চেষ্টাও বিফলে গেছে মেয়ের! বাকি আছে বাপের অঢেল সম্পত্তি আর সুনাম! এইদুটোর জোড়ে কেউ যদি দয়া করে।মেয়েদের পায়ে শিকলের বেড়ি দেওয়ার জন্য বারো ক্লাস পাস করার পর আর কলেজমুখো হতে দেয়নি সুচেতার বাবা।
এহেন সুচেতাকে রামমোহন চৌধুরী,তার আই টি প্রফেশনাল ছেলের বৌ করে ঘরে এনেছিলেন। শহরের বুকে তার দোতলা বাড়ি আছে, পেনশনের টাকা আছে, আর আছে নির্ঝঞ্ঝাট সংসার! মেয়ে মুন্নীর বিয়ে হয়ে গেলে এই বাড়িঘর সবই সুচেতার…..
কিন্তু পর্দার পিছনে গল্প ছিল অন্যরকম, ছেলে দিব্যাংশু,এককালে চাকরি করতো, রিসেশনের পিরিয়ড থেকে সে বেকার।
রামমোহনের নিজস্ব জমানো পয়সার বেশীরভাগ ব্যায় হয়েছে এই বাড়ি তৈরি করতে,
আর কিছু জমানো আছে,বার্ধক্যের রোগব্যাধির জন্য..

রামমোহন,দোতলা বাড়ির নীচের তলাটা পিজি বানিয়ে ভালোই আয় করেন! ছয় থেকে সাতটা ছেলে সবসময়ই থাকে__কেউ চলে গেলে, দু-তিনমাস যেতে না যেতেই আবার সেই জায়গায় অন্য কেউ চলে আসে। এখানে মূলত ছেলেরা আসে, হয় পড়াশোনা করতে, নয় চাকরির খোঁজে নাহলে কোনো কোর্স কমপ্লিট করতে! তাই প্রত্যেকের থাকার মেয়াদ এক থেকে দুবছর! ঐ ছেলেগুলোর রান্না রামমোহনের ধর্মপত্নী শোভনাদেবী,নিজের হাতেই করেন, তাঁকে সাহায্য করে সুচেতা এবং মুন্নী!
মুন্নী থাকে পর্দার ওপারে, হাজার হোক সে আইবুড়ো, সেইজন্য সামনে ঠেলে দেওয়া হয় সুচেতাকে! সুচেতাকে পিজির সকলে বৌদি ব’লে ডাকে।
বিষাদের রঙমাখা,স্মিত হাসির সুচেতাকে কেউ কখনো প্রয়োজনের বেশি কথা বলতে শোনেনি।

……..(ক্রমশঃ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *