খেলা হবে ********** অঞ্জনা রায়

খেলা হবে।
**********
অঞ্জনা রায়
স্বর্গধামে বড়সড় সভা বসে গেছে। দেবাদিদেব বললেন, শুনেছি লোকটাকে মন্ত্রিত্ব থেকে ছাঁটাই করে দিল। তো কোন্ দপ্তরের মন্ত্রী ছিল লোকটা?
নারদ বললেন, প্রভু, মাপ করবেন, আপনার একটু ভুল হচ্ছে।
শিব বললেন, মন্ত্রী ছিল বলেই তো শুনেছি।
নারদ বললেন, ও হো, মন্ত্রী তো বটেই, তবে একটা দপ্তরের নয়, গাদাগুচ্ছের দপ্তরের। মাল্টি ট্যালেন্টেড জিনিয়াস কি না।
শিব বললেন, কোন্ কোন্ দপ্তর বলো তো শুনি।
নারদ বললেন, হে বিশ্বনাথ, শুনুন, এক, ইন্ডাস্ট্রি, দুই, কমার্স অ্যাণ্ড এনটারপ্রাইজেস, তিন, পার্লিয়ামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স, চার, ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাণ্ড ইলেকট্রনিকস, পাঁচ, পাবলিক এনটারপ্রাইজেস, ছয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিকনসট্রাকশন।
মহাদেব ষড়ানন কার্তিকেয়র দিকে তাকিয়ে বললেন, শুনলে তো ছয় ছয়খানা দপ্তর সামলে দিত লোকটা।
বিষ্ণু বললেন, পার্টি সংগঠনেও তো ওজনদার ছিল শুনেছি। তো কী কী পোষ্ট ছিল ওর?
নারদ ফিক করে হেসে বললেন, তিনি ছিলেন পার্টির বাংলা মুখপত্র রাগো বাংলার সম্পাদক।
বিষ্ণু বললেন, আর কী কী?
সে অনেক। তবে পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল, আর ন্যাশনাল ওয়ার্কিং কমিটি মেম্বার আর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এগুলো মনে আছে। সব মিলিয়ে গোটা পাঁচেক পোস্ট ছিল।
পিছন থেকে কে ফুট কাটল, পাঁচ আর ছয় এগারো, ওজন মোটে একশ এগারো। ( তেমন কিছুই না )
দেবসভায় হাসির ফোয়ারা উঠল। শৃঙ্খলারক্ষার জন্য ব্রহ্মা বললেন, অর্ডার অর্ডার।
নারদ বললেন, দেবী স্বয়ং ঘোষণা করেছেন যে তাঁদের পার্টি খুব ন্যায়নিষ্ঠ পার্টি। পান থেকে চুন খসলে শাস্তি পেতেই হবে।
আবার দেবসভায় হাসির হিল্লোল। ন্যায়নিষ্ঠই বটে!
ব্রহ্মপুত্র বললেন, অর্ডার অর্ডার।
পশুপতি বললেন, অনেক নাকি সম্পত্তি করেছিল।
নারদ বললেন, তা একটু করেছিল। দেবী ঘোষণা করেছেন তিনি নাকি কিছুই জানতেন না। আজকাল মর্ত্যলোকে কী হয় না হয়, কেউ তাঁকে জানায় না।
বিষ্ণু বললেন, তো সম্পত্তির হিসেবটা একটু বলো নারদ।
নারদ বললেন, সম্পত্তি খুব বেশি নয়, রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতনে চার হাজার স্কোয়ার ফিটের একটা সম্পত্তি, আর বোলপুরে গোটা সাতেক বাড়ি, ডায়মন্ড সিটিতে গোটা চারেক ফ্ল্যাট, বেলঘরিয়া ক্লাব টাউনে দুটো মোটে ফ্ল্যাট, বরানগরে একটা মোটে ফ্ল্যাট, নিউটাউনে দুটো ফ্ল্যাট, সোনারপুরে একটা বাড়ি, জঙ্গিপাড়ায় একটা প্রাসাদ, বারুইপুরে পঁচিশ বিঘা জমি, একটা বড়সড় স্কুল, একটা পশু হাসপাতাল, সিঙ্গুরে একটা ফার্ম হাউস, বারুইপুরে আর একটা ফার্ম হাউস, ঝাড়গ্রামে আরও একটা ফার্ম হাউস, সুন্দর বনে একটা গেস্ট হাউস, সজনেখালি বার্ড স্যাংচুয়ারির কাছে একটা রিসর্ট, সুন্দরবনের একটা দ্বীপে আরও একটা রিসর্ট, বানতলায় দশবিঘা জমি, ঝারখণ্ডে চব্বিশ একর জমি, আর বর্ধমানে বালি বইবার ডাম্পারের ব্যবসা, বিউটি পার্লার আর পোশাকের ব্যবসা, আর একটা ইয়ে ফূর্তি টুর্তি করার কোম্পানি। ইত্যাদি ইত্যাদি আপাতত যতদূর অনুসন্ধান 🔎 করে জানা গেছে ।
বিষ্ণু বললেন, বাঃ, এত সব খোঁজ এত চটপট পাওয়া গেল!
নারদ বললেন, অথচ মহাদেবী কিছুই জানতেন না। এমনকি তাঁর সিংহটা পর্যন্ত কোনো গন্ধ পায়নি।
সভায় পিছন থেকে কে ফুট কাটল, কোভিড হলে গন্ধ পায় না।
শিব বললেন, তো দেবর্ষি, তারপর কী হল?
দেবীর মানসপুত্র হলেন দলের ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি।
শিব বললেন, দাঁড়াও দাঁড়াও, এই লোকটা কি একটা জেনারেল ছিল না?
নারদ বললেন, যাকে তাড়ানো হল, সে ছিল সেক্রেটারি জেনারেল। যে তাড়াল, সে হল জেনারেল সেক্রেটারি, ন্যাশনাল লেভেল।
বিষ্ণু বললেন, শুনেছি, যে তাড়াল, দলের হর্তাকর্তা না কি সেই।
নারদ বললেন, ঠিকই শুনেছেন। লোকে তাকে যুবরাজ বলতে অজ্ঞান।
শিব বললেন, দল তাহলে মেনে নিল, দলের শৃঙ্খলা রক্ষাকমিটির চেয়ারম্যান আর এতগুলো দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী আসলে নিজেই একটা বিশৃঙ্খলা…
নারদ হেসে বললেন, দলের মধ্যে যে এক ব্যাটা ঘুঘু সাংবাদিক ঘোষের পো বড্ড খ্যা খ্যা শুরু করে দিয়েছিল।
বিষ্ণু বললেন, ঘোষের পোর পোস্টটা কি?
ঘোষজা হলেন পার্টির স্টেট জেনারেল সেক্রেটারি।
শিব বললেন, এদের পার্টির সবাই দেখছি জেনারেল।
নারদ বললেন, তা যা বলেছেন। তো সেই ঘোষের পো একেবারেই বেঁকে বসেছিল। জেদ ধরেছিল তাড়াতে হবেই। আর আরেকটি কুঁচো নেতা, যিনি খেলা হবে স্লোগান বানিয়ে ছিলেন, এক ভট্টাচার্য বামুন তিনিও পৈতে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন হুমদোটাকে তাড়াবই।
দেবরাজ ইন্দ্র এতক্ষণ চুপ করেছিলেন। এবার মুখ খুললেন। বললেন, তো পার্টির গোটা পাঁচেক পোস্ট আলো করে থাকা লোকটাকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া হল বুঝি? পারমানেন্ট ডিশিসন?
নারদ বললেন, রাজনীতিতে পারমানেন্ট ডিশিসন বলে কিছু হয় না।
ইন্দ্র হা হা করে হাসতে হাসতে আঙুল দিয়ে অর্থবাচক একটা মুদ্রা করলেন।
নারদ বললেন, পার্টির যুবরাজ বলে রেখেছেন, যদি ক্লিন প্রমাণ হন তো আবার ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
শিব বললেন, কী রকম কী রকম?
নারদ বললেন, প্রফেসর বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, মর্ত্যলোকে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ব্রাত্য হওয়া আর দলে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাওয়া স্রেফ সময়ের খেলা। ঘোষের পোয়ের বিরুদ্ধে কেস এখনো চলছে, তবুও সে দলের মুখপাত্র হয়ে গিয়েছে। এক যে ছিল অকূল, সে আবার ফিরে এসেছে, আরেকটি আছেন, মদ চড়িয়ে আছেন সর্বদা, নাতি তার জাঙিয়া টেনে খুলে দিলেও হ্যা হ্যা করে হাসে, রাতে সানগ্লাস পরে ঘোরে, সেটাকেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক বিশ্বনাথ বলেন, সবই মায়ার খেলা।
মহাদেব শিবনেত্র হয়ে বললেন, মহামায়ার খেলা।
দেবসভায় সবাই করজোড় করে কপালস্পর্শ করলেন।