যদিও দুপুর তবুও রাত্রি এখন ✒️✒️ ম ধু মি তা বে তা ল

যদিও দুপুর তবুও রাত্রি এখন
ম ধু মি তা বে তা ল

(২)
“নারীদের আগে মানুষ হতে হবে”
সেকালীন থেকে একালীন প্রেক্ষাপটেও শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রেক্ষিতে নারীদের স্বাধিকার, অবস্থান নির্ণয় করা যায়। আর সেখানে শুধু জমে আছে অপমান, অবমাননা, বঞ্চনা, নির্যাতনের হাজার ইতিবৃত্ত। আর তার শিকার হতে হয় সব বর্ণের, সব ধর্মের, সব শ্রেণীর নারীকেই। নারীদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অগ্রবর্তী হতে হলে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন তা হলো প্রকৃত শিক্ষার অধিকার এবং তার জন্য যথাযথ আর্থসামাজিক ব‍্যবস্থা। নারীকে সমাজের সব দিক থেকে জাগ্রত হতে হবে। লড়াই করে বাঁচতে হবে, বাঁচার জন্য লড়তে হবে। সবার আগে এই লড়াইয়ের মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। নারীদের পুরুষ নিয়ন্ত্রিত নারী তকমায় জড়িয়ে থাকলে চলবে না, মানুষ হতে হবে। শুধু নারীত্বে নয়, মনুষ্যত্বেও জাগতে হবে। আর তার জন্য অবশ্যই মনে করতে হবে স্বামী বিবেকানন্দের সেই মহার্ঘ্য উক্তি– নারীদের শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দাও, নিজেদের সমস্যা ওরা নিজেরাই মিটিয়ে নেবে। নারীরা শুধুমাত্র পুরুষদের ভোগ্যপণ্য আর সংসারযাত্রার কান্ডারী হয়েই থাকবে কেন? সমাজ-সংসার, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সমান অধিকার ও জায়গা পেতে সমর্থ হবে। তার জন্য সর্বাগ্রে জরুরি নারীর আত্মসচেতনতা, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ও সেগুলিকে সমাজের সামনে সফলভাবে তুলে ধরা।

“পুরুষ নির্মিত নারীকে এবার ভাঙো”
নারীবাদকে কেন্দ্র করে নতুন কিছু ভাবতে গেলে, নারীবাদকে সার্থক রূপ দিতে গেলে আমার মনে হয় সবার প্রথমে এতদিনকার পুরুষ নির্মিত নারী, তার সামাজিক অবস্থান ও মূল্যবোধকে ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণ করা দরকার। নারীর নিজস্ব মনন, চিন্তন ও কল্পন থেকে সে নির্মাণ করতে হবে। পুরুষ নির্মিত সাবেকি, গতানুগতিক, সমাজিক প্রাতিষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ নারীকে তাই সর্বাগ্রে উচ্চশিক্ষিত হতে হব। সে শিক্ষা শুধু প্রথাগত ডিগ্রিতে নয়, সে শিক্ষা থাকবে আত্মজৈবনিক অভিজ্ঞতা তথা বৃহত্তর সামাজিক বাস্তবতা বোধেও।

শুধু নারীর গুণকীর্তনের সতী-সাবিত্রীখচিত ইতিহাস পড়ে গেলে চলবে না, পড়তে হবে উত্তরআধুনিকতার নিরীক্ষায় সমগ্র মানবজাতির অতীত ও ভবিষ্যৎ, জীবন ও জীবিকা, স্বপ্ন ও বাস্তব। পড়তে হবে নারীর মন ও শরীরের ভৌগলিক মানচিত্রে নিজস্ব জীবন শৈলী, সমাজতত্ত্ব ও বিজ্ঞান। জীবন ঘিরে নারীর শৈল্পিক ধ্যন-ধারণার স্বচ্ছতা ও উজ্জ্বলতারও খুব প্রয়োজন হয় সেই শিক্ষায়। এক কথায় নারীকে স্বয়ংসিদ্ধা হতে হবে।

“হোক মানবী-আন্দোলন”
সমাজ একটা পাখির মতো, যার একটা ডানা নারী আর একটা ডানা পুরুষ। সমানভাবে দুটো ডানা কার্যকর না হলে পাখি যেমন মাটিতে লুটিয়ে পড়বে, সমাজও তেমনি থমকে যাবে।
তাই নারীর প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতিতে পুরুষের হস্তক্ষেপও আবশ্যক। তবুও নারীকেই তার নিজস্ব মানবী-আন্দোলনের দায়ভার নিতে হবে। সত্যিকার আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে হবে।

আমাদের পিতৃতান্ত্রিক তথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে পিছিয়ে রাখার জন্যে যে মূল অস্ত্রটি ব‍্যবহার করে তা হলো আর্থিক ক্ষমতায়ন থেকে নারীদের সরিয়ে রাখা, যার অকাট্য প্রয়োগ নারীকে শাড়ি-চুড়িতে নারীই থাকতে বাধ্য করে। তাই আমরা আমাদের দেশিক প্রেক্ষাপটে নারীমুক্তির ক্ষেত্রে মূলত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হই, তাদের মধ্যে প্রধান হলো নারীর আর্থিক পরনির্ভরতা। মনে হয় নারীর নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তিই রচনা করতে পারে প্রকৃত মানবী-আন্দোলন।
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *