*** ডাইনী *** নীলবৃষ্টি
*** ডাইনী ***
নীলবৃষ্টি
রাতের অন্ধকারে আকাশের তারা দেখতে খুব ভালোবাসে অপলা, কত তারা আকাশজুড়ে , ছোটোবেলায় মা বলতো সবাই মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায়, তার মা , বাবাও তো তারা হয়ে গেছে কবেই, মা, বাবাহীন মেয়েটা কাকা কাকির কাছে মানুষ, কাকির কথাতেই এই বাড়িতে সঞ্জয় কে বিয়ে করে আসা , কিন্তু তার আসার পর পরই তার শ্বশুরমশাই আর মেজো জা মারা যায় , ব্যাবসায় প্রচুর লস হয়ে বরের দোকান বাঁধা পড়ে। সেই থেকে তার মুখ কেউ দেখতে চায়না ! শাশুড়ীমা সবাইকে বলে সে যেখানে যায় সেখানেই অঘটন ঘটে, এই করে করে সারা পাড়ায় কিভাবে যেনো তার খুঁতের খবর গুলো রটে যায়!!সবাই এড়িয়ে চলে তাকে, শাশুড়িমা তো কথায় কথায় কথা শোনায় সে আসার পরই নাকি তার সোনার সংসার ছাড়খার হয়ে গেছে !! সঞ্জয় তাকে ভালোবাসে কিনা সে বুঝে উঠতে পারেনা, কোনো শুভ কাজের খবর তাকে দেওয়া হয়না! তার মুখ দেখা যেনো পাপ!! তারমধ্য তার ননদ বাচ্চা হবে বলে এসেছিলো শাশুড়ী তাকে দিয়ে ননদের সব সেবা করিয়েছে কিন্তু বাচ্চা হবার পর বাচ্চাটা মরে গেছে !!! তারপর থেকে শাশুড়ী র কথায় তার নাম হয়েছে ডাইনী !!
অপলা কোথাও যায়না , কেউ তার সাথে কথা বলেনা , তার শাশুড়ী মা তাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে ,” দেখো বাছা এখানে থাকতে গেলে এভাবেই থাকতে হবে এক কোণে পড়ে, আর বাড়ির সব কাজ করতে হবে, আর হ্যাঁ সঞ্জুর আমি আবার বিয়ে দেবো তোমার যা সব অলুক্ষুণে লক্ষণ ছেলেকে আমি আর পাঠাচ্ছিনা তোমার কাছে , থাকতে দিচ্ছি এইই অনেক!”অপলা অনেক কাকুতি মিনতি করেছে শাশুড়ীর হাতে পায়ে ধরে কিন্ত শাশুড়ী বলেছে ,” আমার ছেলেটার তো একটা জীবন আছে না কি? তোমার পাল্লায় পড়ে শখ আহ্লাদ তো কিছুই করতে পারলোনা তাবলে কি এভাবেই দিন কাটাবে!!” অপলারই বা কি করার আছে!! বাপের বাড়ি যাবার জায়গা নেই তো এভাবেই থাকতে হবে!! আগামী মাসে সঞ্জয় এর বিয়ে , লুকিয়ে দেখেছে অপলা সুমিতাকে বেশ সুন্দরী দেখতে , অনেক দিচ্ছে নাকি তার বাবা মা, শাশুড়িমা গদ গদ হয়ে আছে! তার খবর কেউ রাখেনা , শুধু কাজ করে সে ওপরে ছাদের ঘরে চলে যায়! বুক ভাঙা এক কষ্ট মাঝে মাঝে গলার কাছে দলা পাকায়! ডির্ভোস হয়ে গেছে তার আর সঞ্জয়ের এক বছর হলো , সঞ্জয় কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার কথা শাশুড়ীমা শোনেনি আর তার এমন পোড়া কপাল যে এদের কাছেই থাকতে হচ্ছে !! আর যাবেই বা কোথায়!! কাকা কাকি হাত পা ঝেড়ে ফেলেছে বিয়ে দিয়েই আর খোঁজ রাখেনি।
বিয়েতে অল্পই লোক বলা হয়েছে , অপলাকে নামতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে নিচে, তাদের কাজের মাসি গোপালের মা তাকে খাবার দিয়ে যাবে!! নিচে হৈ হুল্লোড় হচ্ছে , শাঁখ বাজছে উলুধ্বনি হচ্ছে! অপলা তিনতলায় বসে আছে বাকরুদ্ধ হয়ে!! বুকের কষ্টটা চোখ দিয়ে নামছে! কিন্তু কেন তার কিসের দুঃখ! সেতো ডা…!! হঠাৎ চেঁচামেচি কানে আসে , অপলা দেখে নিচে কিসব আলোচনা হচ্ছে জটলা হয়ে, সে ঘরে এসে বসে, হঠাৎ গোপালের মা আসে , বলে” শুনেচো বৌদিমিণি কি কাণ্ড!! ওই যে গো সুমিতা ভালো মানসের মেয়ে গো তার ইয়ের সাথে পালিয়েচে গো পালিয়েচে!” অপলা হাঁ করে চেয়ে থাকে! কি বলবে ভেবে পায়না!! একটু পরে সঞ্জয় আসে , অপলা জড়োসড়ো হয়ে সরে দাঁড়ায়, সঞ্জয় বলে,” বসো আমার পাশে এসে, অপলা তাও দাঁড়িয়ে থাকে , সঞ্জয় আবার বলে ,”এসো বসো, “অপলা আস্তে আস্তে বসে ,”সঞ্জয় অপলার হাত টা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,ক্ষমা করে দাও প্লিজ আমি তো তোমাকে কখনো কিছু বলিনি কিন্তু মায়ের জন্য প্রতিবাদ ও করতে পারিনি, আজ বলছি অপু আমায় ক্ষমা করে দাও! আমি তোমায় নিয়ে চলে যাবো এখান থেকে! অপলা কাঁদতে থাকে সঞ্জয়ের হাতের ওপর মাথা রেখে, একি স্বপ্ন না সত্যি!! সঞ্জয় বলে,”আমায় বিয়ে করবে অপু আর একবার!! ” এরপর আশ্চ্যর্য ভাবেঅপলা সঞ্জয়ের নতুন বাড়িতে সুখের সংসারে আর কোনো অঘটন ঘটেনি, আর অদ্ভুত ভাবে শাশুড়ীমা যেখানেই যায় সেখানেই কিছু না কিছু ঘটে !!! গোপালের মা বলেছিলো ,” চিরকালই অপয়া গো অপয়া ওইজন্যিই কেউ আসেনা এ বাড়িতে! সবাই তো ওকেই ডাইনী বলে!! কিন্তু মনে মনে অপলা জানে তার শাশুড়ী রো কোনো দোষ নেই সবই ঘটে কালের নিয়মে ডাইনী বলে কিছু হয়না!!
কাবেরী বোস ঘোরাই
#নীলবৃষ্টি
স্বত্ব সংরক্ষিত