গল্পঃ***মোহভঙ্গ লেখনী***@গীতশ্রী চ্যাটার্জি

গল্পঃ***মোহভঙ্গ
লেখনী***@গীতশ্রী চ্যাটার্জি

ট্রেন টা এসে দাঁড়াতেই রমা নিজের জিনিসপত্র নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে পড়লো,দরজার কাছাকাছি ওর সিট থাকাতে সিট খুঁজতে বিশেষ অসুবিধা হোলো না আর লোয়ার বার্থ হওয়াতে জানলার পাশেই বসার সুযোগ পেলো।বসে বসে সব যাত্রীদের আনাগোনা দেখতে লাগলো।একসময় ট্রেন ছেড়ে দিলো মন্থর গতিতে চলতে চলতে ট্রেন পরে গতি বাড়িয়ে দিলো।রমার মনটা খারাপ তাই চুপচাপ জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো,বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে,বৃষ্টির দেখতে দেখতে রমা কখন স্মৃতির পাতায় চলে গেছে….
সুরজিৎ এর সঙ্গে ওর প্রথম দেখা এই ট্রেনেই,সেদিন ও ছিল প্রবল বৃষ্টি।সুরজিৎ এসে ওর সামনের বার্থ এ বসলো,খুব মিষ্টি হাসি ওর মুখে রমার ভালো লেগেছিলো।ধীরে ধীরে দুজনের আলাপচারিতায় রমা জানতে পারে সুরজিৎ ও নতুন চাকরি পেয়ে জলপাইগুড়ি যাচ্ছে।অন্যান্য বার্থ এ বেশির ভাগ ই নিজের পরিবারের সঙ্গে যাত্রা করছেন তাই তারা নিজেদের মধ্যেই ব্যাস্ত।পুরো যাত্রায় রমা আর সুরজিৎ এর মধ্যে একটা মিষ্টি বন্ধুত্ব হয়ে যায়।রমা ওকে জানায় যে সে ও একটি স্কুল এ শিক্ষিকার চাকুরীতে যোগ দিতে জলপাইগুড়ি যাচ্ছে।নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন জলপাইগুড়ি পৌঁছোয়।সুরজিৎ নিজের ও রমার জিনিসপত্র ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয় দুজনে দুজনের ফোন নাম্বার নিয়ে নিজের নিজের গন্তব্য স্থলে রওনা দেয়।
রমা থাকার জন্য পেইং গেস্ট রূপে একটি ঘর ঠিক করে রেখেছিল সেখানেই উঠলো।বাড়ির কর্ত্রী র সঙ্গে আলাপ করে স্নান করে ফ্রেশ হতে গেলো কারন ওইদিন ই ওর জয়নিং ডেট।যথারীতি স্নান সেরে তৈরি হয়ে বাড়িওয়ালীর আনা ডিম পাউরুটি ও চা খেয়ে স্কুল এ রওনা হলো।স্কুল টি বাস স্থান থেকে বেশ অনেক টাই দূরে তাই বাস ও অটো বদল করে যেতে হলো।স্কুল এ গিয়ে নিজের কাজ বুঝে নিয়ে রমা ক্লাস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।স্কুল ছুটি হলে রমা বাড়ি ফেরে।চার পাঁচ দিন এইভাবে যাতায়াত করার এক দিন যথারীতি স্কুল এ যাবে বলে রওনা হয়েছে হটাৎ দেখে একটি সাদা রং এর গাড়ি তে বসে কেউ ওকে ডাকছে রমা অবাক হয় এই অপরিচিত শহরে ওকে তো কেউ চেনেনা তাহলে ওটা কে?যাইহোক রমা এগিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে গাড়িতে সুরজিৎ বসে আছে,রমা অবাক হয়ে বলে..আপনি এখানে কি ভাবে? সুরজিৎ বলে আমি এই পথেই যাই এই গাড়িটা অফিস আমাকে যাতায়াতের জন্য দিয়েছে,আপনি উঠে আসুন আমি আপনাকে স্কুল এ নামিয়ে দিয়ে অফিস চলে যাবো।রমা একটু ইতস্তত করছে দেখে সুরজিৎ বলে এতো ভাবার কি আছে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর জন্য এইটুকু তো করতেই পারে তাইনা?রমা একটু সহজ হয় ও গাড়িতে উঠে বসে,রাস্তায় অনেক কথা হয় সুরজিৎ বলে কাল থেকে কিন্তু আমি তোমাকে স্কুল এ ছেড়ে দেবো তুমি ঠিক নয়টায় রেডি থেকো,রমা মনে মনে খুশি হয় কারণ বাস অটো তে দৌড়াদৌড়ি করে স্কুল এ পৌঁছতে ওর দেরি হয়ে যায়,ও রাজি হয়ে যায়।রোজ এইভাবে একসঙ্গে যাতায়াত করতে করতে হাসি ঠাট্টা গল্পে কখন দুজনে দুজনের কাছাকাছি চলে আসে বুঝতেই পারেনা।রমা বুঝতে পারে যে ও সুরজিৎ কে ভালবেসে ফেলেছে।এইভাবে ছয় মাস কেটে যায় দুজনে এক সঙ্গে স্কুল এ যায় অবসর সময়ে ও ফোন এ গল্পঃ করে বেশ আনন্দের সঙ্গেই দিন কাটছিলো।একদিন রমা বাজারে যাবে বলে সুরজিৎ কে ফোন করে বলে তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে পারবে ?সুরজিৎ বলে ওর মিটিং আছে।যাইহোক রমা একাই বেরোয় কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে একটা পার্ক এ সুরজিৎ একটি মেয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ট ভাবে বসে কথা বলছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছিল দুজনে খুব ঘনিষ্ট যাইহোক রমা ধীরে ধীরে পার্কের মধ্যে ঢুকে সুরজিৎ এর সামনে দাঁড়ায়,সুরজিৎ রমা কে দেখে একটু ঘাবড়ে যায় বলে মিটিং টা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো তাই একটু হাওয়া খেতে এখানে এলাম দেখো এই হলো নীলা,আমার সহকর্মী।রমা বেশি কিছু না বলে একটু হেসে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো।কিন্তু রমার মনে একটা কাঁটা খচখচ করছিলো যে মেয়েটার সঙ্গে সুরজিৎ এর ঘনিষ্ঠতা নতুন নয় যাইহোক তবুও মন কে বুঝিয়ে ও কাজে মন দেয়।পরের দিন সুরজিৎ ফোন করে বলে ..আমার গাড়ি টা হটাৎ খারাপ হয়ে গেছে তাই তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো না,স্কুল এ চলে যেও।রমা র মনে সন্দেহের ছায়া ধীরে ধীরে বাড়ছিলো।বেশ কয়েক্ দিন এইভাবে চলার পর রমা দেখলো সুরজিৎ এখন আর ফোন ও করেনা বা ফোন রিসিভ ও করেনা।রমা খুব চিন্তিত হয় ও সুরজিৎ কে বার বার ফোন করে একসময় সুরজিৎ ফোন ধরে রমা বলে তুমি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি, তোমায় ছাড়া থাকতে পারবনা।সুরজিৎ বলে এরকম ভালোবাসার কথা আমাকে অনেকেই বলে এই বলে ফোন কেটে দেয়।রমা বুঝতে পারে সুরজিৎ ভালোমানুষের মুখোশের আড়ালে একজন প্রতারক,একে আর বিশ্বাস করা যায়না, এই মানুষ এক নারী তে সন্তুষ্ট নয় বহু নারী সঙ্গ তে আনন্দ পায়।সেই মুহূর্তে রমা স্থির করে নেয় যে সে জলপাইগুড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে যাইহোক নিজের যোগ্যতা ও অনুভব এর অনুযায়ী ও খুব ভালো একটা স্কুল এ চাকরি পেয়ে গেলো দুর্গাপুর এ।আজ সেখানেই ও চলেছে..আর পুরোনো স্মৃতি কে মনে করতে চায়না।তবুও মণেহয় কেনো মানুষ এইভাবে অন্যের মন নিয়ে খেলা করে ভাবতে ভাবতে কখন ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে নিজেও বুঝতে পারেনা…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *