প্রিয় ‘বকুল দিদিমণি’ কলমে : রুমকি তরফদার
প্রিয় ‘বকুল দিদিমণি’
কলমে : রুমকি তরফদার
“ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া/
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ”
ভোরের স্বপ্নে সেই মিষ্টি কন্ঠ
চুপিচুপি বলে গেল,
“আজও কলম কিনতে যাস ?
বই কিনতে যাস ?
গোলাপ আনিস
আমার জন্য ‘শিক্ষক দিবসে’ ?”
ঘুমটা ভেঙে গেল!
স্বপ্নেই হারিয়ে গেলেন
জীবনের শুরু থেকে
স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যিনি—
আমার প্রিয় ‘বকুল দিদিমণি’,
বাবা মা এর হাত ছেড়ে
আপনারই হাত ধরে
প্রবেশ করেছিলাম একদিন
শিক্ষার আগারে,
চোখের জল মুছে,লজেন্স হাতে
আপন সুবাসে
বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন,
আপনি তো সেই দিদিমণি———
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে
সত্য প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন,
বন্ধু মানে বুঝিয়েছেন,
একসাথে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার
আনন্দ পেতে দিয়েছেন,
আপনি তো সেই দিদিমণি———
খেলার মাঠেও নামিয়েছেন,
ছাত্র-ছাত্রী বলে কিছু আলাদা
ভাবতে শেখাননি,
আলাদা খেলাও শেখাননি!
প্রকৃতির বুক থেকে স্বাদ নেওয়ার
পাঠ আপনিই প্রথম শিখিয়েছিলেন,
মহাকাশ,মহাসাগর,পাহাড়,মরুভূমি
গল্পে গল্পে কল্পনার আলোয় ঘুরিয়েছিলেন,
‘হীরক রাজার দেশ’ ছেড়ে
চাঁদেও যে কেউ যেতে পারে
তা প্রথম আপনার কাছেই শুনেছি,
ভীষণ অবাক হয়েছিলাম !
শিশুমনে গভীর আলোড়ন উঠিয়েছিলেন৷
খাতার পাতায় কলমের আঁচড়ে
প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন,
মৌন মলিন মুখে ভাষা ফুটিয়েছেন,
বিজ্ঞানের হাত ধরে যুক্তিবাদী
হতে শিখিয়েছেন,
সর্বোপরি মনুষ্যত্ব কী তা বুঝিয়েছেন-
একই বৃন্তে দু’টি কুসুমের
মানেও শিখেছি আপনারই চলনে-বলনে ,
রবীন্দ্র-নজরুল আপনার কন্ঠে,
সব-সবকিছু আছে মনে———৷
সহজ পাঠে’র জীবনে ‘আনন্দমঠ’
তুলে দিয়েছিলেন হঠাৎ একদিন !
ঐ জাতীয় পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে
মুক্তির মন্দির সোপানতলে
শত-শত বিপ্লবীর বলিদানের,
আত্মত্যাগের ইতিহাস জেনেছি
সেই আপনারই মুখে—
রামায়ণ,মহাভারতে ডুবে গিয়েছি,
স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছি,
আমার সোনার বাংলাকে-নিজের দেশকে
আরও ভালো করে চিনেছি,
ভালোবেসেছি-আপনার প্রেরণায়,
আপনি তো সেই দিদিমণি———
যাকে মন খুলে সব বলতে পেরেছি,
যার কঠিন শাসনেও
মায়ের স্নেহের পরশ পেয়েছি,
আপনিই তো শিখিয়েছেন সেই বাণী,
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে”
বলেছেন,”শুধু দিদিমণির নয়-
সর্বাগ্রে পিতা-মাতার চরণ স্পর্শ করে
অফরুন্ত প্রাণশক্তি সঞ্চয় করতে হয়,”
মাথার ছাতা হয়ে আগলে রেখেছিলেন,
শত প্রতিকূলতাকে জয় করে
জীবনের জয়গান গাইতে শিখিয়েছেন,
‘চরৈবেতি চরৈবেতি’ মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন
শিক্ষার যেমন শেষ নেই
আপনার অনুপ্রেরণাও অফুরান———
বড় হয়েছি আজ,
একটা একটা করে,
যত শিক্ষার গন্ডী পেরিয়েছি
সব দিদিমণি,মাস্টারমশাইদের মধ্যেও
যেন আপনারই ছায়া
খুঁজে বেড়িয়েছি———
সত্যিই আজ আর
বই কিনতে যাওয়া,
সযত্নে রঙিন কাগজে মোড়া
কলম নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা,
বেলুন ফোলানো
কিছুই হয়না আর আমার ,
আপনি কোথায় তাও জানিনা !
তবে আমার মনের মুকুরে আপনার
সদাহাস্যময়ী মুখটা যেন সব সময় ভাসে—
আমার স্মৃতিতে ছিলেন,আছেন,থাকবেন,
“সবার উপরে মানুষ সত্য”————
বারবার এই শিক্ষাটাই তো দিয়েছেন ,
আপনিই তো সেই দিদিমণি—আমার প্রিয়, ‘বকুল দিদিমণি’ ৷