দ্বিতীয় জন্ম ****** সুজান মিঠি

দ্বিতীয় জন্ম
সুজান মিঠি

তার জন্মের সময় কোনো শাঁখ বাজেনি।
উলু ধ্বনিতে মুখরিত হয়নি কোনো শাশুড়ির
মুখ,
বরং গালিগালাজ উঠেছে আঁতুরের সামনে
বাসনে কোসনে, অভিশাপে, আফসোসে।
তার এমন কোনো পিতা ছিল না,
যে তার মুখ দেখে বলবে, “আমার লক্ষ্মী!”
তার এমন কোনো পড়শী ছিল না
যে গালি গালাজের মুখ আটকে দাঁড়াবে,
“বলি…মেয়েরা মানুষ নয়?”

তার এমন কোনো উপায় ছিল না,
সে যে পথে এসেছে …
সেই পথেই ফিরে যাবে!
তার মায়ের প্রতি ছিল শাসন,
“খবরদার যদি পরের বারেও মেয়ে হয়!
ঘাড় ধরে দূর করে দেব বাড়ি থেকে!”

বছর পাঁচেক পরে তার এমন কোনো দিন ছিল না,
যেদিন তার মায়ের সৌভাগ্যদায়ক
অতি আদরের পুত্র
তার উপর চড়াও হয়ে গাল আঁচড়ে
চুল ছিঁড়ে পার্থক্য বুঝিয়ে দিত না।

অবশেষে তার পিতা বুঝলেন, মেয়ের বয়স হয়েছে যথেষ্ট। অতএব অর্ধ-বৃদ্ধ মদ্যপ পাত্রে বিবাহ বাঞ্ছনীয়।

তার জেদ এমন কম ছিল না, যে তার
পিতা জোর করে তাকে সেই বিবাহে বসায়।

সে ধিক্কার দিল পিতাকে।
সে ধিক্কার দিল অসহায় মায়ের নীরবতাকে।
সে ছুটল…
সে পালাল।
সে এক নারীজন্মের পরিবর্তন লিখতে চাইল।

হায়না পুরুষ, শেয়াল পুরুষ, খাদক পুরুষ
সব পেরিয়ে সে এসে পৌঁছাল
অন্য পুরুষে।
কী বলিষ্ঠ তার বুকের পাটা!
জোর গলায় বলত তাকে, “এ ইঁট ভাটায়
তোকে কাজ করতে দেব না রে আমি!
তোকে বিয়ে করে আমার রানী করে রাখব।”

তার সিঁথি রাঙিয়ে দিল সে পুরুষ।
সানাই বাজল, আলো জ্বলল। কত লোকের
পাতে মাছ পড়ল…

তার শরীরে শরীর মেলাল পুরুষ।
সে জিজ্ঞেস করল, “কী চাস?”
তার বলিষ্ঠ কণ্ঠ উত্তর দিল, “তোর মত লক্ষ্মী।”

তার লক্ষ্মী জন্ম নিল। শাঁখ বাজল, উলুধ্বনি উঠল।
উঠোনে গড়াগড়ি খেল রোদ।
তার সামনে মেয়েকে তুলে ধরল তার পুরুষ,
“দেখ দেখ এ ঠিক তোর জন্ম হয়েছে রে!”

সে অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, “মরণ ছাড়াও
দ্বিতীয় জন্ম হয়!”
——————
13. 04. 2021

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *