কবি জীবনানন্দ স্মরণে ***** শ্রীলেখা বনিক
কবি জীবনানন্দ স্মরণে
শ্রীলেখা বনিক
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ
দাশের শুভ জন্মদিন এর কিছু কথা | বড়ো
দুঃখময় জীবন ছিল তাঁর | তবু প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধে মোহিত
হয়ে পার্থিব জীবনের দুঃখকে ভুলে
থাকতেন কবি |এই বাংলার নদী,
পাহাড় , ঘাস , পাখী তাঁর বড়ো
প্রিয় ছিল। বারে বারে এইবাংলাতে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে ছিলেন তিনি। বাস্তব পরাবাস্তব দুইজগতই তাঁর কাছে সমান গুরুত্ব পেয়েছিল |
হিজলবন,ধানসিঁড়িনদী ,চালধোওয়ারত রমনী,বনলতার কথা , গাঙ্গুরের ভেলায় বেহুলার স্বর্গে যাবার কথা, মেঠো ইন্দুরের ধান খাওয়া,লাশকাটা ঘর, তাঁরকবিতাইবর্ণনারগুনে,আজো আমাদের চোখের সামনে ভিড় করে।
রপসী বাংলা কাব্যথেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা ওঠাপড়ার কথা জানা যায়। বারে বারে জীবনে রক্তক্ষরণ ঘটেছে কবির | নক্ষত্র ,আকাশ , সমুদ্র , নাবিক অভিযান, কবি কীটসের সঙ্গে তাঁকে একসূত্রে গেঁথেছিল চাকরীরআবেদন লিখে লিখে ক্লান্ত হয়ে গেছিলেন কবি | নিজেকে নিয়ে পরিহাস করতেও ছাড়তেন না তিনি | নিজেকে বলতেন ঢ্যাঁড়শ,বলতেন – “ঢ্যাঁড়শই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে ।” নিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন কবি | স্ত্রীর সঙ্গে নিত্য দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো | এথেকে মুক্তি খুঁজছিলেন তিনি | টাকা পয়সা উপার্জনের জন্য শেষ জীবনে সিনেমার গান পর্যন্ত লিখতে রাজী হয়েছিলেন , যাতে তাঁর ঘোর অনিহা ছিল l নিজেরমৃত্যুরছায়া ,অভিলাষ , পটভূমি তিনি মনে হয় জগতের থেকে আড়াল করতেন | তবু তা আড়াল থাকেনি | “মহাপৃথিবী” সঙ্কলনের”ফুটপাথে ” কবিতায় , তাঁর
নিলয় যাত্রাকে নিটোল ভাবে ফুটিয়ে ছিলেন তিনি |
“ট্রামের লাইনের পথ ধরে হাঁটি: এখন গভীর রাত/কবেকার কোন্ সে
জীবন যেন টিটকিরি দিয়ে যায়/
তুমি যেন রড ভাঙা ট্রাম এক –
ডিপো নাই, মজুরির প্রয়োজন
নাই /
কখন এমন হয়ে হায়! /
আকাশে নক্ষত্রের পিছেঅন্ধকারে
কবেকার কোন্ সেজীবন ডুবে
যায়|”
ঘাস ,ফুল , নদী, পাখীর প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রগাঢ় ও প্রবল ছিল| তাই শবযাত্রার সময় ,শেষযাত্রার সঙ্গী অরবিন্দগুহ লক্ষ্য করেন শানবাঁধানো কলকাতায়ট্রামলাইনের যে জায়গায় কবির দুর্ঘটনা ঘটে ,
ট্রামলাইনের সেই জায়গাজুড়েসবুজ ঘাস , আশ্চর্য ঘটনা |
“ধূসর পাণ্ডুলিপির” স্রষ্ঠার ছিল আড়াই হাজার কবিতারপাণ্ডুলিপি | একশআঠাশটিগল্প,২১টিউপন্যাস ,৭৮টি প্রবন্ধ ৫৬টি খাতায় ঠাসা ৪৫০০পৃষ্ঠায় সাহিত্যিক নোটস্ ১০০র বেশী চিঠি | এগুলি একটি
বড়ো বাক্সে বন্দি করা থাকত,শোনা যায় এই পাণ্ডুলিপিরজন্যই তিনি বারে বারে আত্মহত্যার পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন | নিষ্ঠুর নিয়তি তাঁকে বারে বারে হাতছানি দিয়েছে |
মৃত্যুর এত বছর পরে ও তাঁর
” হাজার বছর ধরে”পাঠক মনে পথ চলা শেষ হবেনা |রূপসী বাংলার কবি ,পাঠকমনে অম্লান হয়ে থাকবেন চিরদিন |