তোমার হাত ধরে বাঁচতে চাইইইইই **** মালা মুখোপাধ্যায়

তোমার হাত ধরে বাঁচতে চাইইইইই
মালা মুখোপাধ্যায়
মাআআআ, তোমার বুকে এতো তাপ কেন? মাআআআআআআ, আমি , আমি পারছি না
আমাকে বাঁচাও মাআআআআআ
আমি ছটফট করছি মাআআআআ
আমি বাঁচতে চাইইইইইই
তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাইইইইই —
মা ,
ঐ দ্যাখো , আমি এখন দগ্ধ গুটিয়ে যাওয়া পোড়া কালো বিভৎস একটা লাশ।
মা ,
ঐ দ্যাখো আমাদের দরজা জানলা সব বন্ধ করে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের মধ্যে কেউ একজন ছবি তুলছে।
মা ,
আমাদের ছবি ভাইরাল।
ঐ দ্যাখো মা আমাদের কথা খবরে বলছে
ঐ দ্যাখো মা সব কাগজে কাগজে আমাদের কথা
ঐ দ্যাখো খাবার টেবিলে মাংসের হাড় চিবোতে চিবোতে সবাই হতাশ
ঐ দ্যাখো সবাই বলছে এ ভারি অন্যায়।
ঐ দ্যাখো মা ফেসবুকে গুটিকয়েক কবিদের কলম
দায়সারা গোছের
ঐ দ্যাখো মা কারোর কবিতা আবার ধর্ম অধর্ম নিয়ে সুন্দর পাশ কাটিয়ে যাওয়া
ঐ দ্যাখো ট্রেনের কামরায় ঝড় উঠেছে আমাদের নিয়ে
ঐ দ্যাখো ওরা বলছে ভাগ্যিস ওদের মধ্যে হয়েছে
এটা যদি ওরা আমরা হয়ে যেতাম, এই আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে যেতো
তখন এটার গায়ে সৌখিনতা দেখিয়ে
কী ভয়ঙ্কর শব্দের
তকমা লাগানো হতো—‘দাঙ্গা’ !!!!
আমরা ছাড়া যারা বেঁচে আছে
তাদের খুব শান্তি হয়েছে তারা বেঁচে গেছে-
ওরা বেঁচে আছে–
আমার তো এখন শরীরে কোনো কষ্ট নেই মা
আমি তো দগ্ধ
আমি তো লাশ
আমি তো দুস্কৃতির ছেলে
যারা মারল তারা
আমাদের এই ভাবে ফেলে পালালো?
কেন মারল?
কেন আমাদের ফেলে পালালো?
কেন আমরা সব দোষ রাষ্ট্রের ঘাড়ে চাপিয়ে
চুপচাপ বসে থাকি?
রাষ্ট্র কি একজনকে নিয়ে?
দুষ্কৃতি , হানাহানি, খুনোখুনি কারা করে?
কেন করে?
জবাব কে দেবে?
আছে কার দায়?
জনগণের শব্দধ্বনি কি শুধুই অবসরে আমাদের
মতো হাজার হাজার লাশের নিয়ে কফি আর চায়ের কাপে তুফান তোলা?
দাঁতের ফাঁকে চিমটি গুঁজে চোখ বুঁজে
বিদেশ কপচানো?
মাআআআআআ এতো নিষ্ঠুর বর্বরতার পরেও
সূর্য ওঠে লাল হয়ে
গাছে গাছে ফুল ফোটে
পাখিরা গান গায়
মাঠে ছেলেপুলেদের হুল্লোড় চলে
পৃথিবী পাক খায়
আমিইই শুধু কিছু দেখে যেতে পারলাম না
আমিইই শুধু থাকতে পারলাম না —
ঐ দ্যাখো মাআআআআ
সেই নরখাদকের দল চেকনাই পোশাক পরে
বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে
শাস্তি নাই
শাস্তি নাই
আমরা সভ্য হয়েছিইইই মা
ইন্টারনেটে সব জানি
আমার সভ্য হয়েছি মাআআআ—–
কিন্তু আমি তো জন্মেছিলাম
বাঁচার জন্য
আমি বাঁচতে চাইইইইইইই—
মাআআআআআ—–
তোমার হাত ধরে বাঁচতে চেয়েছিলামমমম !!!!!
মালা মুখোপাধ্যায়
৪.৪.২০২২.
১১-৪৮ এ.এম.