চলো যাই পিকনিক — কোয়েলী ঘোষ

চলো যাই পিকনিক

কোয়েলী ঘোষ

এই সময়ে জীবন থেকে যখন মুখ ফিরিয়ে বসে আছি , ঝরা পাতা ঝরেছে একে একে , ঠিক তখনই একঝাঁক প্রজাপতি ডাক পাঠিয়েছে — এসো , এসো – বসন্ত এসে গেছে – আর আমরা বন্ধ মনের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছি পথে , আমরা সহেলী গ্রুপের বন্ধুরা ।
ট্রেন চলেছে ঝিকঝিক — ঝিক ঝিক …আমরা পাঁচ বন্ধু চেপেছি শিয়ালদা থেকে বজবজ লোক্যাল ট্রেনে । ট্রেন চলছে দক্ষিণ কলকাতার চেনা অচেনা স্টেশন পেরিয়ে .. টালিগঞ্জ , বালিগঞ্জ , নিউ আলিপুর ,মাঝেরহাট , ব্রেসব্রীজ , আকড়া ..একসময় দৃশ্য বদলে গেছে । জানলা দিয়ে বাংলার গ্রাম দেখতে পাচ্ছি , পানা পুকুর , চাষের ক্ষেত ।
টাটকা সবজি নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে একদল মহিলারা উঠেছে । প্রায় ঘন্টা খানেক পর
পৌঁছে গেছি বজবজ স্টেশন ।


এবার একটা অটো ভাড়া করে চলেছি নেতাজী পার্ক । ঘিঞ্জি বাজার পেরিয়ে অটো এবার ডান দিকে বাঁক নিয়ে এসে দাঁড়াল একটা বড় গেটের সামনে । এটাই নেতাজী পার্ক ।

সারি সারি ঘর , নাম চৈতি , বলাকা , বনানী … সব মিলিয়ে রবিঠাকুরের কাব্য যেন সামনে । বয়ে চলেছে গঙ্গা । সামনে মাঠ ওদিকে রান্নার জন্য একটা করে ঘর । শীতের রোদে চেয়ার পেতে বসতেই একে একে সহেলীরা এসে পৌঁছল । শুরু হলো আমাদের গল্প , পরিচয় পর্ব ।
নানা দিক থেকে বাসে , ট্রেনে , গাড়িতে সহেলীরা আসার পর জলখাবার পর্ব শুরু হল । লুচি , আলুর দম , মিষ্টি আর চা খেয়ে আমরা একটু গঙ্গার ধারে ঘুরতে গেলাম ।
গঙ্গা এখানে অনেকটা বিস্তৃত । সামনে বড় বড় জাহাজ চলেছে , দূরে ছোট ছোট নৌকো ভেসে যায় । বারোটা নাগাদ জোয়ার এসেছে ।
বিশাল বড় নেতাজীর মূর্তির পাদদেশে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম । শ্রদ্ধায় মত করলাম মাথা ।
মাঠে এখন অনেক লোকজন ।
ওদিকে আবার ডাক । শুরু হলো খেলা , নাচ , গান , কবিতা — সব মিলিয়ে শুধুই আনন্দ আর আনন্দ । বয়স এখানে শুধু একটি সংখ্যা আর তাই ষাট বছর বয়স হোক বা ষোলো বন্ধুরা পায়ে পা মিলিয়ে নাচতে কোন দ্বিধা করেনি ।
খেলার শেষে পুরস্কার বিতরণ পর্ব ।
বেলা বাড়তে রোদ উঠেছে বেশ । এবার দ্বিপ্রহরের ভোজন পর্ব শুরু । মাঠে টেবিল পেতে পরিবেশন করছে তিন চারজন অল্পবয়সী ছেলে । ফুলকপির তরকারি , ভেটকি পাতুরি , দইমাছ চাটনি , পাঁপড় মিষ্টি একে একে পাতে এসে পড়ছে , কেউ বা মাংস , যার যেমন পছন্দ ।


একটি দিনের আনন্দ পর্ব শেষ হল । মাঠ জুড়ে গল্প , ফটোসেশন তখনও চলছে । আমরা একটু আগেই উঠে পড়েছি । সবাইকে বিদায় জানিয়ে এবার ঘরে ফেরার পালা ।
এতজন মেয়েদের একসাথে জড়ো করে সুন্দরভাবে পরিচালনা করে নিয়ে গেছে বন্ধু তপতী । তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে উমা , স্বপ্না .. আরো কেউ …
প্রতিদিনের একঘেয়ে ব্যস্ত জীবন থেকে মাত্র একটি দিনের আনন্দ রয়ে গেল অম্লান স্মৃতি হয়ে । মেয়েরা সবাই ভালো থেকো । এভাবেই আনন্দে সবাই বাঁচো ।
ট্রেন ফিরে চলেছে .. একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে চলেছি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *