আমি নারী, আমি গর্বিতা (দ্বিতীয় পর্ব) কলমে-নিতু চৌধুরী,,
আমি নারী, আমি গর্বিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে-নিতু চৌধুরী,,
গত পর্বে বলেছিলাম আমি নারী রূপী দশভূজা,আমি নারী রূপে দশাবতার, শুধুমাত্র আমি নই, আমার মতো এমন কতো নারী যাদের সম্পূর্ণ নারী সত্বা মুগ্ধ করেছে আমায় ,আজ বলবো তাদেরই কথা,,,,,,,
জন্ম দিয়ে যে মা পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তার মুখেই শোনা মাত্র তেরো কি সাড়ে তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন শবশুর বাড়ি।এসেই তিনি তার হাতে তুলে নিয়েছিলেন বিশ-বাইশ জন মানুষের রান্নার ভার কারণ রাধুনী হিসেবে তার খ্যাতি তার জন্য শাস্তি স্বরূপ হয়েছিল কিন্ত তিনি সহাস্যে সেই শাস্তি বরণ করেছিলেন।মায়ের ধৈর্য্য গুণ,মানুষ কে নিজের ভাগের জিনিস অনায়াসে বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দেওয়ার গুন,কারোর বিরুদ্ধেই কোন অভিযোগ না থাকার গুণ জ্ঞান হয়ে থেকেই মুগ্ধ করতো আমায়। নিজের সুখ নয় সংসারের সকলের সুখে সুখী হতে দেখেছি তাকে।এখনও তার মধ্যে এই গুণের ঘাটতি দেখিনা ।মাত্র উনিশ বছর বয়সেই দু সন্তানের জননী হয়ে অসাধারণ কর্ম দক্ষতার সঙ্গে এখনও সংসারের দায়ভার বহন করে চলেছেন হাসিমুখে এই বয়সেও। তার মতে আমরা মেয়েরা সংসারের সকলের আনন্দে আনন্দিত হতে ভালোবাসি যে ,এতেই আমাদের নারী সত্বার পূর্নতা প্রাপ্তি।সন্তানের কাছে মা প্রথম শিক্ষিকা জীবনে চলার পথে সেখানে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন গুরুত্ব নেই। এই সত্যতার বড়ো প্রমাণ আমার জীবনে আমার মা।
পাশে পেয়েছি আমার জীবনের স্কুল শিক্ষিকাদের। যাদের দেখেছি স্কুল ছুটির পরেও সহাস্যে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে।দেখেছি ওনাদের ভালোবাসা সকল ছাত্রীদের জন্য হাজার কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও অটুট থাকতো।আমাদের স্কুলের বড়দির কথা বিশেষ করে বলতে চাই। উনি সারাজীবন অবিবাহিত থেকেও মায়ের মতো আমাদের সকল স্কুল ছাত্রীকে কিভাবে সন্তান সম আগলে রাখতেন।স্কুল ছুটির পরেও স্কুলের উন্নয়নের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অফিস ঘরে বসে কাজ করে যেতেন নিষ্ঠার সঙ্গে।কখনও কোমল কখনও কঠোর ভাবে আমাদের ভুল-ত্রুটি গুলোকে বুঝিয়ে আমাদের পথ দেখাতেন।কি অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে সব কাজ সামলাতেন সুষ্ঠু ভাবে।
এখন আমার পথচলায় পাশে পেয়েছি আমার চোখে আর এক সম্পূর্ণা নারী কে,আমার গীতশ্রী সিনহা (দিনাজপুর ডেইলির সম্পাদিকা )দি কে।আমার লেখালেখি কে কার্যত অভ্যাসে পরিণত করেছেন আমার মাতৃসমা, শিক্ষিকাসমা, এই মানুষটি।একাধারে সংসারের সব দায়িত্ব পালন করেও লেখালেখি যার প্যাশন, সামলাচ্ছেন সম্পাদিকার পদ,করছেন অভিনয়, করছেন আবৃত্তি, কাঁধে তুলে নিয়েছেন আমাদের মতো কিছু উঠতি লেখক লেখিকাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভার। প্রতিনিয়ত অবাক হই তার কর্ম দক্ষতায়।স্যালুট জানাই তার এই সম্পূর্ণা নারী সত্বাকে ।
একথা সর্বজন বিদিত প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে একজন নারী থাকেন কিন্ত নারীর সফলতার পিছনে পুরুষের হাত শোনা যায় কি?তাই বলে আমি কোন পুরুষের কর্ম দক্ষতাকে ছোট করতে চাইছি না।কিন্ত এ যাবৎকাল আমার চোখে যতো সম্পূর্ণা নারীর প্রতিচ্ছবি ধরা আছে তারা কিন্ত একাই এক একটি আকাশের মতো নিজেকে মেলে ধরেছে যেখানে পুরুষের ভূমিকা শুধুই দর্শনার্থী রূপে। আমি নারী আমি সব করতে পারি এটাই আমার অহংকার এটাই আমার অলংকার।
( ক্রমশ)