বৃন্দাবন ভ্রমণ

বৃন্দাবন ভ্রমণ
পর্ব ২
বৃন্দাবন ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন শুরু হলো মন্দির দর্শন দিয়ে। জন্মাষ্টমীর দিন কংসের কারাগারে ভগবান এসেছিলেন ঠিক ই কিন্তু সেই দিন এক কন্যা ও জন্ম গ্রহণ করেন,তা আমরা সবাই জানি। কংস অষ্টম সন্তান হিসেবে যে নবজাতিকা কে হত্যা করতে উদ্যত হয় তিনি ই হলেন যোগমায়া। ভগবান জন্মের সাথে সাথেই অবগত করেন” যেখানে পুরুষ সেখানেই প্রকৃতি”। প্রকৃতি মানে গাছপালা নয়,নারী শক্তি।দু’য়ের মেলবন্ধন এই বৃন্দাবন। অনেকে ভাবেন ‘রাধা’। কৃষ্ণ কে বাদ দিয়ে রাধা কোনো শক্তি নন। তাই আমরা ‘তারামা’,শ্যামা মা’, দুর্গা মা বললেও কখনো রাধা মা বলি না,বলি ‘শ্রী রাধে’।


মাতৃ দর্শনের উদ্দেশ্যে গেলাম ক্যাতায়নী(যোগমায়া) মন্দিরে।সব মন্দিরের কথা না বললে ও কয়েকটি মন্দিরের কথা এখানে জানাচ্ছি।শ্রী রাধে এই যোগমায়া মায়ের পুজো করেন আর করেন গোপেশ্বর শিবের পুজো।কথিত আছে, ভগবানের আবির্ভাবের খবর জেনে মহাদেব এসেছিলেন। যে জায়গায় হরি আর হরের প্রথম ধরাধামে সাক্ষাৎ হয় সেই জায়গায় গোপেশ্বর শিব মন্দির।
এরপর গেলাম রাধা-দামোদর মন্দির- এই মন্দিরে ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ আট বছর সেবা করে কৃপাধন্য হয়েছেন। এরপর বলি,রাধা-রমণ মন্দিরের কথা। কথিত আছে, গোপাল ভট্ট গোস্বামী বৃন্দাবনে বসবাসের সময় (শ্রী কৃষ্ণের নির্দেশে নেপালের গন্ডকী নদী থেকে প্রাপ্ত শালগ্রাম শিলা) জন্মাষ্টমীর আগের দিন রাতে ভাবছেন আর বলছেন,হে ভগবান কাল সবাই কত সুন্দর করে তোমায় সাজাবে।আর আমি শুধু ১২টি শিলাকে তুলসী দিয়ে সাজাবো।

ভক্তের ভগবান। তাই সকালে উঠে গোপাল ভট্ট গোস্বামী দেখেন ১১টি শিলা আছে আর একটি শিলা কৃষ্ণ রূপ নিয়েছেন। তাই এই মন্দির সয়ম্ভূ রাধা-রমণ মন্দির,রাধা ও রমণ(রাধার প্রেমিকা)-এর মিলিত রূপ। অপূর্ব বিগ্রহ। ধীরে ধীরে গেলাম মদনমোহন মন্দির,যমুনা নদীতীরে যমুনা মন্দির- যমুনা যম কে ফোঁটা দেয়।এই দিনটিকে আমরা বলি যমদ্বিতীয়া। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘাটে আরতি হয়-যা দেখলে শুধু ই শান্তি, শুধুই আনন্দ।পাশেই বস্ত্র হরণ ঘাট আর তারপাশে’ইমলী তলা’। ইমলী অর্থাৎ তেঁতুল পাকে না বৃন্দাবনে। কাঁচা অবস্হায় এর স্বাদ মিষ্টি। রাধারাণী অভিসারে যাওয়ার সময় চরণে ইমলী আটকে যায় এবং দেরী হয়।রাধার চোখে জল দেখে এই গাছ বৃন্দাবনে অভিশাপ প্রাপ্ত।আধা ফসিল হয়ে গেলেও গাছ টি আজ ও আছে। স্মৃতি বিজড়িত এই গাছটিকে প্রণাম করে গেলাম অষ্টসখী মন্দিরে। বৃন্দাবন লীলার সঙ্গী এই অষ্টসখী।
বর্তমানে যে সব মন্দির তৈরি হয়েছে তারমধ্যে গেলাম ইস্কন মন্দির,প্রিয়াকান্তাজু মন্দির, প্রেম মন্দির। এই সব মন্দির নয়নাভিরাম।
তৃতীয় দিনের যাত্রা শুরু হবে অপূর্ব উপলব্ধি দিয়ে।
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *