চকলেট কলমে:- মোহনা মজুমদার

চকলেট
কলমে:- মোহনা মজুমদার

আজ পুরোনো ব‍্যাগ ঘাটতে গিয়ে সৌম্যর দেওয়া চকলেটের র‍্যাপার গুলো খুজে পেল রোহিনী।আজকাল বেশ ভালোই আছে ও ,অনেক টাই বেটার কন্ডিশন আগের থেকে। ডক্টর মুখার্জি ও বেজায় হ‍্যাপি,পেসেন্ট এর এত তাড়াতাড়ি ইমপ্রুভমেন্ট দেখে ।রোহিনী যখন প্রথম কনসাল্টেশন এর জন্য ডক্টর কৌশিক মুখার্জির কাছে আসে তখন ও টিপিক্যাল ট্রমাটিক ডিসঅর্ডারে ভুগছে,যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ও সি ডি ( অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার )।এই বয়সে যা হয় ,প্রেমে আঘাত… অবশ্য প্রেম ঠিক বলা যায় না ,মানুষ টাকে দীর্ঘ আট বছর এক তরফা ভালোবেশে গেছে রোহিনী, কোনোদিন মুখ ফুটে কিচ্ছু বলতে পারেনি সৌম্য কে ,ভেবে ছিল সৌম্য ও বোধহয় মনে মনে ওকেই ভালোবাসে,দাদার বন্ধু হওয়ার সুবাদে এত গুলো বছর ওদের বাড়ি যাতায়াত সৌম্যর।শেষ অবধি যখন জানতে পারে মানুষটি অন্য রিলেশনসিপে আছে,অন্য কাউকে ভালোবাসে সে,আর রোহিনী কে কখনও ওই চোখে দেখেইনি সে,বন্ধুর বোন ই ভেবে এসছে চিরকাল। ও নিজেকে আর সামলাতে পারেনি।ধীরে ধীরে ডিপ্রেশন এ চলে যেতে থাকে ও,পড়াশোনা হ‍্যাম্পার হতে থাকে, রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে।জীবনে বাঁচার ইচ্ছেটাই আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছিল ও।
ওর দাদা বিনয় একমাত্র জানতো রোহিনীর ডিপ্রেশন এর কারন।তাই একদিন বিনয় অ্যাপয়েনমেন্ট করে জোর করেই নিয়ে আসে বোনকে ডক্টর মুখার্জির কাছে । বিনয়ের কাছে বোনের সুস্থ হয়ে ওঠা টাই বেশী জরুরি, তাই সে বন্ধুকে বারন করে দিয়েছে যেন আর না আসে ওদের বাড়ি।
ধীরে ধীরে রোহিনী আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। বছর পয়ত্রিশ এর কৌশিক মুখার্জি ওকে এই নতুন জীবন দিয়েছে বলে মনে করে ও।কৌশিক,একজন সাইকোলজিস্ট হিসাবে একজন পেসেন্টকে যতোটুকু এফোর্ট দেওয়া দরকার, সময় দেওয়া দরকার, তার থেকে একটু বেশী সময় দেয় রোহিনীকে ।ধীরে ধীরে একটা অদ্ভুত ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে দুজনের মধ্যে।আজ রবিবার ,কৌশিকের চেম্বার নেই, তবু রোহিনীকে নিয়ে বেড়িয়েছে,দুজনে অনেক টা সময় একসাথে কাটিয়েছে,গল্প করেছে,আইসক্রীম খেয়েছে।আর শেষে কৌশিক ওর হাতে চকলেট দিয়ে ,বাকি জীবন টা একসাথে কাটানোর প্রস্তাব দিয়েছে।এই মূহুর্তে রোহিনীর চোখে জল,তবে দুঃখে নয়,আনন্দে।কৌশিক ওর জীবনে না এলে ও বুঝতেই পারতো না ,এতটা ভালো ও কেউ বাসতে পারে ওকে। আজ ওর মনে হচ্ছে আর কোনো যন্ত্রণা নেই,কোনো অতীত নেই।পৃথিবীতে সব পুরুষ খারাপ নয়,সব পুরুষ ঠকবাজ নয়,তাদের ও মন আছে, তারাও ভালোবাসতে জানে,ক্ষত য় মলম লাগাতে জানে। আজ বাড়ি ফিরে এত বছরের যত্ন করে রাখা সৌম্যর গিফ্ট করা চকলেটের র‍্যাপার গুলো বের করে ও,নিজের মনেই বলে ওঠে বিদায় সৌম্য দা,ভালো থেকো, আমিও আজ ভালো আছি, এই বলে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় পুরোনো র‍্যাপার গুলো। তারপর কৌশিকের দেওয়া চকলেট খেতে খেতে কৌশিকের সাথে চ‍্যাটে মগ্ন হয় রোহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *