#সাতকোশিয়ার সাতমহলে —তৃতীয় পর্ব — তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

#সাতকোশিয়ার সাতমহলে
তৃতীয় পর্ব
তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

বোট চালক বলতেই সবাই তাকিয়েছি পাড়ের দিকে। যা দেখার জন্য নদী ভ্রমণ দেখি তিনি অলস ভাবে ম্রিয়মান রোদে শরীর সেঁকছেন। বালির সাথে গায়ের রং মিশে আছে। হ্যাঁ, মিষ্টি জলের কুমীর বাবাজী। আমরা কুমীর দেখার আনন্দে চেঁচামেচি শুরু করতেই বোট চালক আমাদের শান্ত হয়ে বসতে বললো। তারপর পাড়ের আরও কাছে নিয়ে গিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে বোট দাঁড় করিয়ে রাখল নদীতে। ছবি তোলায় খুব উৎসাহী নয় কুমীর টা। একটা দুটো শট নিতে না নিতেই সে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে জলে নেমে মিলিয়ে গেল। তখন বোট চালক বললো যে এই নদী কুমীরে ভর্তি। এমনিতে বোঝা যায় না তবে বিকেলের পড়ন্ত রোদে গা সেঁকতে পাড়ে উঠে আসে।আরও একবার দেখার আশায় একটু অপেক্ষা করতে বলতেই সে বলে ‘টাইম শেষ।’ ফেরীঘাটের উদ্দেশ্যে স্পীড বোট বিকট আওয়াজ করে জলে তুমুল ঢেউ তুলে ছুটে চললো। বিদায়বেলায় সূর্য তার হলুদ কমলা রং জলে গুলে চলে গেল। সেই সন্ন্যাসী মুহূর্তের কিছু সুন্দর ছবি মুঠোফোনে ধরে আমরাও ফিরলাম। আবার অটো ধরে জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট গ্রাম্য জনপদ পেরিয়ে রিসোর্টে ফেরা। ভাই কাঁখে আদিবাসী কিশোরী, ছাগল নিয়ে ফেরা মহিলা, বসে ঝিমানো বুড়ো, পড়ে রইল গ্রামে।

ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হতেই ফোন, চা স্ন্যাক্স রেডি। খাবার জায়গায় চলে আসুন। সিঁড়ি ভেঙে উঠে আবার এলাম নেমে সেই বালির চড়ায়, খাবারের ছাউনি তে।প্লেট ভর্তি গরম গরম পকোড়া আর চা। জায়ান্ট স্ক্রিনে সাতকোশিয়া, ভিতরকণিকা দেখাচ্ছে। অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য। চা পকোড়া খেতে খেতে আর সাথে টিভির ঐ সুন্দর দৃশ্য দেখে বিভোর সবাই। হঠাৎ টিভি, লাইট সব বন্ধ হয়ে গেল। বাইরের ফাঁকা জায়গায় বড় বড় আলো জ্বলে উঠলো। একটা সবুজ প্লাস্টিক পেতে বাজনদারেরা বসে। একজন আবার কিছু বলে ধরল গান। সবটাই স্থানীয় উড়িয়া ভাষায়। বিন্দু বিসর্গ বুঝছি না কেউ। অন্ধকার ফুঁড়ে দুই মূর্তির উদয়। নায়ক নায়িকা। দুজনেই ছেলে। গান বাজনা কথকতা আর উদ্দাম নাচ শুরু হলো। টানা দেড় ঘণ্টা যেভাবে দুটি ছেলে গল্পের নায়ক নায়িকা সেজে নাচলো দরদর করে ঘেমে, রীতিমত প্রশংসার দাবি রাখে। এই এন্টারটেইনমেন্টও প্যাকেজেই। সব শেষ হলে খাওয়া। সেই একই পদ্ধতি। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে সেই চেনামুখগুলো। খাওয়া শেষ করে তাঁবুর পাশে পায়চারি করতে আলাপ আরেক ট্যুরিস্ট দম্পতির সাথে। আজ ওরাও নৌকা ভ্রমণ করেছে। তবে পাঁচশ টাকা বেশি দিয়ে আধঘন্টা বেশি। অনেক দূর পর্যন্ত গেছে এবং অনেক কুমীর দেখেছে। ওরাই বললো পরের দিন যেন আমরা বেশি দূর পর্যন্ত যাই বোটে। খুব ভালো লাগবে। আধঘন্টা আর কি দেখা?? আমরা সম্মত হলাম পরের দিন একঘন্টা ঘুরব বোটে। ঐদিন শেষ দিন, তারপর ই ফেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *