চলো যাই ঝর্ণার শহরে —– কোয়েলী ঘোষ

চলো যাই ঝর্ণার শহরে

কোয়েলী ঘোষ

যদি মন চায় চলো যাই সেই জলপ্রপাতের কাছে ।
কান পেতে শুনি হুডরু জোনহার কলধ্বনি ।
পাহাড় , নদী , অরণ্য সঙ্গমে নীল সবুজ ঢেউ । ডুব দিই সে আনন্দ কোলাহলে । যেখানে মুঠো ভরা ভালবাসা উপচে পড়ে প্রকৃতির কোলে ।

চারিদিকে পাহাড় আর জঙ্গল ঘেরা ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ছোটনাগপুরের রানীও বলা হয় । আশেপাশে আছে বেশ কিছু জলপ্রপাত , তাই কেউ বা বলেন , জলপ্রপাতের শহর রাঁচি ।
কয়েকদিনের ছুটি কাটাবার জন্য আদর্শ স্বাস্থ্য কর স্থান রাঁচি । ছোটনাগপুর মালভূমির কেন্দ্রে ৬৭২ মিটার উঁচুতে এই শহর । পশ্চিমে রাঁচি পাহাড় , উত্তরে ট্যাগোর হিল , রাঁচি লেক , রক গার্ডেন । ওপর থেকে সারা শহর
এখানেই আছে সুবিখ্যাত মানসিক হাসপাতাল ।

রাঁচিতে প্রথম দিন ঘুরে এলাম দশম ফলস ।দূরত্ব ৪৬ কিমি , দেড় ঘণ্টা সময় লাগলো । সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখা যায় ১৪৪ ফুট ওপর থেকে কাঞ্চি নদী নেমে মিলেছে সুবর্ণরেখায় ।
পাহাড়ের মাথা থেকে দশটি জলের ধারা নেমেছে বলে নাম দশম ফলস ।

আমরা গাড়ি করে রাঁচি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে হুডরু ফলস দেখতে চলেছি । জলপ্রপাতগুলির মধ্যে সবচেয়ে উঁচু এই জলপ্রপাত । বর্ষাকালে এই জলপ্রপাত আরও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে । বসন্ত এলে জঙ্গলে লাগে অনুরাগের ছোঁয়া । লাল পলাশ ফুলে সেজে ওঠে বন ।
পথ চলতে চলতে ৩৫০ ফুট ওপর থেকে সুবর্ণরেখা নদী খাড়াই পাহাড় থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে । ৭৫০ সিঁড়ি নেমেছে ধাপে ধাপে তিনশো বাইশ ফিট নিচে । যেতে যেতে জলপ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে ।
আদিবাসী মানুষের কিছু দোকান পাট আছে ।
সেখানে নানা রকম ফল , চা , বিস্কুট খাবার পাওয়া যাচ্ছে ।
চারিদিকে ঘন সবুজ জঙ্গল আর ঢেউ খেলানো পাহাড় , .. সব মিলিয়ে প্রকৃতিকে খুব নিবিড় করে অনুভব করলাম ।
পান্না সবুজ রঙের জলের ধারা বয়ে চলেছে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ।
আদিবাসী নারীদের হাতের কাজ , কাঠের তৈরি জিনিস কিনতে পাওয়া যায় । ছোট ছোট স্থানীয় বাচ্চারা লাঠি এগিয়ে দেয় পথ চলার সুবিধের জন্য ।
কিছুক্ষণ বসে আবার সেই পথেই ফিরে এসে গাড়িতে বসতেই ছেড়ে দিল ।

পাহাড়ি জঙ্গলের পথ ধরে গাড়ি এগিয়ে চলল জোনা ফলসের দিকে ।
রাঁচি থেকে জোনা ফলস এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি । চারিদিকের সবুজ জঙ্গল , অচেনা ফুল মুগ্ধ করে । এটা একটা পিকনিক করার জায়গা । ঝর্ণার জলে পা ডুবিয়ে বসে উপভোগ করা যায় ।
এখানে একটি ছোট রেলওয়ে স্টেশন আছে ।
জোনা জলপ্রপাতের আরেক নাম গৌতমধারা ফলস।
কাছেই পাঁচ কিমি দূরে সীতা ফলস । নির্জন শান্ত পরিবেশে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ । দুদিকে জঙ্গলের রূপ দেখতে দেখতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম ।
প্রায় ৪৮০ টা সিড়ি নেমে পৌঁছতে হবে ঝর্ণার কাছে।
গুঙ্গা নদী ও রারু নদীর স্রোতে সৃষ্টি এই জলপ্রপাতটি ১৪১ ফিট উপর থেকে সশব্দে নেমে আসছে পাহাড়ের ধাপে ধাপে ।

পরের দিন ভোরে স্নান সেরে রওনা দিলাম সিদ্ধ পীঠ রাজারাপ্পার মন্দিরের উদ্দেশ্যে ।

রাঁচিতে বেড়ানোর জন্য অনেক কিছুই আছে । দশম জলপ্রপাতের কাছেই সূর্য মন্দির , কাঁকে ড্যাম থেকে সূর্যাস্ত , আঁকা বাঁকা পথ ধরে পত্রাতু ভ্যালি , পালানি জলপ্রপাত , দেওরি মন্দির , শিব মন্দির ইত্যাদি ।
একসাথে রাঁচি , বেতলা , আর নেতারহাট ঘুরে নেওয়া যায় ।

হাওড়া থেকে অনেক এক্সপ্রেস ট্রেন আছে । থাকার জন্য স্টেশনের কাছেই অনেক হোটেল আছে ।

ছবিঋণ – দেবদুলাল কারফর্মা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *