দ্বিতীয়*পর্ব*সাতকোশিয়া… তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

দ্বিতীয়*পর্ব*সাতকোশিয়া…
তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

গিজার অন করে স্নান সেরে নামতে হলো নীচে… যেখানে অপেক্ষা করছিলাম তার পাশ দিয়ে একটা পায়ে চলা ঢাল রাস্তা আরও নীচে নেমে গেছে। কিছু পর বাঁশ দিয়ে সিঁড়ির মতো করা যাতে নামতে সুবিধা হয়। সেটা নেমে গেছে বালির চরে। মহানদীর বুকে বিশাল চর আর সেখানেই প্লাস্টিক ছাউনি দিয়ে খাবার ব্যবস্থা। তার চারিদিক খোলা অনেকটা যাত্রার স্টেজের মতো। আর সেই খাবার জায়গাটার চারপাশে গোল করে গোটা বারো টেন্ট বা তাঁবু। তার ভিতরেও এসি গিজার কমোড এবং অন্যান্য সব আধুনিক সুবিধা। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। আর অনেক অনেক দূর দিয়ে বয়ে চলেছে মহানদী পাহাড়ের পা ছুঁয়ে। মনে হবে পর্যটকদের সাচ্ছন্দটুকু আগলে রাখার দায়িত্ব তারই।

খাবার ব্যবস্থা বুফে। সবার জন্য এক খাবার। সকালে এবং দুপুরে। রাতে ভাত না রুটি, মাংস না ডিম, কেউ নিরামিষ কি না, কোন বোর্ডারের কি সুবিধা সেসব আগে থেকেই জেনেই সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়ে ওরা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। থরে থরে সাজানো খাবার যা ওই গরীব মানুষগুলো বানিয়েছে আমাদের জন্য অথচ কি নির্লিপ্ত। কার কি লাগবে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি প্রান্তিক মানুষগুলোর।


খাওয়া শেষ হতেই নৌকা বিহারের উদ্দেশ্য রওনা হলাম গ্রামের একজনের অটোয় চেপে। পাশাপাশি দুটো গ্রাম। পরপর তিনদিনই নৌকা ভ্রমণ আর সেটা ঐ ট্যুর প্যাকেজে। কিন্তু একটা গ্রামের ফেরীঘাটে থেকে পরপর দুদিন নৌকা নেওয়া যাবে না। নৌকা তার চালক সবই উড়িষ্যা সরকারের বিধি নিষেধের আওতায়। পৌঁছে গেলাম ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট গ্রাম্য জনপদ পেরিয়ে ট্যুরিজমের নিজস্ব ফেরীঘাটে। আধঘন্টা ভ্রমণ স্পীডবোটে। আমরা পাঁচজন চেপে বসলাম সুন্দর পরিষ্কার সীটে। তুমুল আওয়াজ আর স্পীড তুলে নৌকা মহানদীর বুকের উপর ছুটলো। সাদা ফেনিল ঢেউয়ের অপরূপ সৌন্দর্য আর দুপাশে সবুজ পাহাড়ের পাহারায় ভাসলাম। আর কেউ নেই নদীতে বা কাছে দূরে। গাছের ডালে লাফানো বাঁদর তাচ্ছিল্য ভরে দেখল আমাদের। ওরাও জানে এই জল ভ্রমণে ওরাও দ্রষ্টব্য। তাঈ বোধহয় ওরাও পর্যটকদের উঁকি দিয়ে দেখে পালায় জঙ্গলে। নাম না জানা কত পাখি, কেউ কেউ বিদেশীও। সময় ফুরিয়ে আসছে, ফিরতে হবে অনিচ্ছায়। ফেরার পথে অদ্ভুত দৃশ্য। পাড় থেকে নদীর অনেকটা ভিতরে এক মৃত গাছের কান্ড দাঁড়িয়ে। যেখানে জল ছুঁয়েছে সূই জায়গাটা মানুষের হাতের খোলা তালুর মতো। চারপাশে আঙুলের মতো শুকনো ডাল। সেই ডালে বসে গল্প করছে মাছরাঙা আর তিনটে কচ্ছপ। জলের রংটাও অদ্ভুত সবুজ। তাক করেছি ওদের ধরবো মুঠোফোনে অমনি বোট চালক আঙুল তুলে দেখাল খানিকটা দূরে পাড়ের দিকে……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *