“অযৌক্তিক ” : সফিক আহমেদ

“অযৌক্তিক ” : সফিক আহমেদ— দ্বিতীয় পর্ব
********
জিপিএস এর সাহায্য নিয়ে পৌঁছে গেলাম যশোধরা আশ্রমে।
মনোমুগদ্ধকর পাহাড় আর kootenay লেকের ধারে অবস্থিত এই আশ্রম।
শেতাঙ্গিনী স্বামী শিবানন্দ রাধার ১৯৬৩ সালের প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে Temple of light এ গিয়ে সৎসঙ্গে যোগ দিলাম।
মন্দিরের মূল বেদিতে সকলের মনের আলোর প্রতীকী দীপশিখা প্রজ্জলিত।
সম্পূর্ণ নির্বাক হয়ে এদেশের শেতাঙ্গ নাগরিকদের বৈদিক জপ্ এবং ভজন শুনে মন টা প্রশান্তিতে ভোরে উঠলো।
যখন মন্দির থেকে বেরোলাম মনে হলো একটা দিশা পাওয়া গেলো।
আমি আর সুমনা প্রায় একসঙ্গে বলে উঠলাম ওই রিসোর্টে রাত কাটানো যাবে না।
কাল থেকে আজকের সবকটা ঘটনা এক একটা প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিলো আমাদের।
বুকিংয়ের এর জন্য কোনো নাম বা ক্রেডিট কার্ড না নেওয়া , আজ ও অ্যাডভান্স পেমেন্ট না নিয়ে ঘর দেওয়া,
যেন কোনো প্রমান ই রাখতে চাইছে না যে আমরা এসেছি।
ড্রয়িং রুম এর হাড়গোড় ছাড়িয়ে থাকা,বেডরুমের দরজা বন্ধ না হওয়া, আর রাত্রে আওয়াজের সতর্কতা সবই যেন অশনি সংকেত।
রেস্তুৰেন্ট এর স্থানীয় লোকের চিন্তিত কৌতূহলী মুখ আর প্রশ্ন এই রিসোর্ট চালু আছে কিনা আর দুর্ঘটনার উল্লেখ আমাদের নাড়িয়ে দিলো যেন।
আমরা দুজনে প্রায় সমস্বরে বলে উঠলাম ‘চলো আমাদের ব্যাগটা তুলে বেরিয়ে আসি।’
তখন রাত প্রায় ৮:৩০। ঘন অন্ধকারে জঙ্গলের সরু রাস্তা দিয়ে Riondel রিসোর্ট এ পৌঁছে দেখি অন্ধকারে বাড়িতে একটা টিমটিমে আলো জ্বলছে। বেড়া দেয়া কম্পাউন্ড এর ওপারে চোখ জ্বলজ্বল করছে ওই দুটো হিঙ্গস্র কুকুরের আর দূরে RV তে আলোছায়াতে দুজনের ছায়া মূর্তি। আর বিকালে দেখা সেই ঝোড়াটার ও কোনো অস্তিত্ব নেই।
এই অপার্থিব পরিবেশে আমাদের আর সাহস হলোনা নেমে ব্যাগ আনতে যাওয়ার।
গাড়ি ঘোরাতেই রিয়ার গ্লাস মিরর এ দেখি কুকুর দুটো বেড়া পেরিয়ে তারা করে আসছে হিঙ্গস্র পশুর মতো আর সঙ্গে পাশবিক ঘেউ ঘেউ চিৎকার।
ওই সরু রাস্তায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে গাড়ি চালিয়ে যখন Riondel এ পৌছালাম তখন এই ছোট শহর ও সুনসান।
প্রচন্ড চাপ সত্ত্বেও জলবিয়োগের জন্য ও দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছিলাম না।
প্রায় ৫০ km গাড়ি চালিয়ে রাস্তার ধারে জল বিয়োগ করলো শুভঙ্কর।
রাত্রে ফেরি ও বন্ধ তাই অন্য রুট এ Crawford বে ,Creston , Cranbrook , Fernie হয়ে সারা রাত ৬০০ KM গাড়ি চালিয়ে ফিরে আসি ক্যালগারি। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছিলো তাই মাঝে দুবার রাস্তার ধারেই পেট্রল পাম্প এ ঘুমিয়ে নিয়েছিল শুভঙ্কর।
পরদিন ঘুম থেকে উঠতে প্রায় বিকাল।
চা খেয়ে কৌতূহল বসত ইন্টারনেট এ খুঁজতে শুরু করি Riondel বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট , কিন্তু বহু চেষ্টার পরেও কিছুতেই খুঁজে পাই না।
শুভঙ্কর কে নিয়ে সার্চ করতে করতে পেয়ে যাই Riondel হেরাল্ড লোকাল নিউস পেপার এর একটা পেজ। তার বেশ কয়েক বছরের পুরোনো এডিশন এ একটা খবর , Riondel রিসোর্ট এর মালকিন এর পোষা কুকুরের কামড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং এখানে আসা একাধিক পর্যটক নিরুদ্দেশ হওয়া র পর রিসোর্ট টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আমি শুভঙ্করএর হাত চেপে ধরে স্থানুর মতো বসে থাকি কিছুক্ষন। ‘

ততক্ষনে ক্যাম্পফায়ারে এর আগুন প্রায় নিভে এসেছে।
গল্প শেষ হওয়ার পর, গা ছমছম করা নীরবতায়, আমরা সবাই নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালাম আর হাটতে শুরু করলাম আমাদের হোস্টেল এর রুমের দিকে।
*সমাপ্ত*
সফিক আহমেদ
হিউস্টন, টেক্সাস , ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *