ইতিহাসের আলোকে কিরাত ভূমি —– গৌতম নাথ

ইতিহাসের আলোকে কিরাত ভূমি
গৌতম নাথ

ত্রিপুরার রাজারা ছিলেন ত্রিপুরি উপজাতির মানুষ এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্টপোষক। বাংলার সঙ্গে এ রাজ্যের গভীর যোগাযোগের কারণে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ একাধিকবার ত্রিপুরায় এসে এখানকার রাজাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। ত্রিপুরি রাজাদের উদার মানসিকতার কারণেই বাংলাভাষা বহুদিন আগেই রাজভাষার মর্যাদা পেয়েছে। মহারাজ রত্নমাণিক্য ছিলেন এ রাজ্যের প্রথম রাজা। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ১৪৬৪ থেকে ১৪৮৩ পর্যন্ত। উদয়পুর ছিল তৎকালীন ত্রিপুরার রাজধানী। ১৮৮০ সালে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়ে আসে আগরতলায়। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরার মহারানি কাঞ্চনপ্রভা দেবী ত্রিপুরাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রথমে স্বাধীন ভারতে এটি ছিল কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। পরে ১৯৭২ সালে এটিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়।

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১৭৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ঊনকোটি পাহাড় একটা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এই পাহাড় যেন এক অনুপম শিল্প শৈলির ভান্ডার। এই পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে এবং পাথর কেটে গড়ে তোলা হয়েছে হিন্দু দেবদেবীর অসংখ্য মূর্তি ও ভাস্কর্য। গোটা পাহাড়টাকে এক অজানা শিল্পীর দল সুনিপুণ ভাস্কর্যের রূপ দিয়েছেন। পাহাড়ের গায়ে সাজানো দেবদেবীর মূর্তির মাঝখানে শিবের মূর্তি। শিবের মাথার এক পাশে রয়েছে সিংহবাহিনী দুর্গা আর অন্য পাশে মকরে উপবিষ্ট গঙ্গা দেবী। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা রয়েছে আরও অনেক দেবদেবী, হনুমান, নন্দীর ষাড়, রাবণ প্রভৃতি মূর্তি।

এই সমস্ত খোদাই কর্মের এক পাশ থেকে নেমে এসেছে জলের ধারা। এই ঝরণাধারা এসে পড়েছে একটি কুন্ডে যার নাম অষ্টমী কুন্ড। এই কুন্ড‌ই হচ্ছে ত্রিপুরার দীর্ঘতম নদী মনুর উৎসস্থল।পাহাড়ের এক জায়গায় পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল গণেশ মুর্তি। পাশে আরও কয়েকটি গনেশ মূর্তি রয়েছে। এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ গণেশ মুর্তি এটি। পাহাড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক শিল্পকীর্তি।

ঊনকোটির বেশ কিছু মূর্তি ও ভাস্কর্য সময়ের আবহে পাহাড়ে মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে মন্দিরও। সামান্যই উৎখনন করা হয়েছে। ঊনকোটির পাহাড়ের সাজানো ভাস্কর্য পেরিয়ে কয়েকশ’ ফুট উপরে আছে এই রকমই ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি মন্দিরের মেঝে । সেখানে এখন একটি পুজো অর্চনার ব্যবস্থা করে তৈরি হয়েছে ঘর।

দীর্ঘদিনের অবহেলায় এখানকার অনেক সৃষ্টিই নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে অনেক অজানা সৃষ্টি। তবে হেরিটেজ হিসেবে এটিকে দেখাশোনার দায়িত্ব ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে তুলে দেওয়ার পর অবস্থার খানিকটা উন্নতি হয়েছে। (ক্রমশঃ)

তথ্যসূত্র ঃ ‘মানবজমিন’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *